অ্যাপশহর

সস্তায় মিস্ত্রির কাজে ঢোকে কদররা

আরামবাগের প্রত্যন্ত গ্রাম বড়দঙ্গলের পাশেই দ্বারকেশ্বর নদ। তার তীরে ডোঙ্গল সেতু পার হয়ে রাস্তার পাশেই একটি বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সেই বাড়িতেই অন্যান্য মিস্ত্রির সাথে গত মাসদুয়েক মিশে কাজ করেছে জেএমবি জঙ্গি কদর গাজি ও তার সহযোগী সাজ্জাদ আলি। তাদের গ্রেপ্তারির পর গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য শুরু হয়ে যায়।

EiSamay 30 Jan 2019, 11:35 am
দিব্যেন্দু সরকার ■ আরামবাগ
EiSamay.Com 11-1

হেমাভ সেনগুপ্ত ■ কীর্ণাহার


আরামবাগের প্রত্যন্ত গ্রাম বড়দঙ্গলের পাশেই দ্বারকেশ্বর নদ। তার তীরে ডোঙ্গল সেতু পার হয়ে রাস্তার পাশেই একটি বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সেই বাড়িতেই অন্যান্য মিস্ত্রির সাথে গত মাসদুয়েক মিশে কাজ করেছে জেএমবি জঙ্গি কদর গাজি ও তার সহযোগী সাজ্জাদ আলি। তাদের গ্রেপ্তারির পর গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য শুরু হয়ে যায়। কী ভাবে দুই জঙ্গি এত দিন গ্রামে আত্মগোপন করে ছিল, তা নিয়েও বিস্ময়ের শেষ নেই এলাকার বাসিন্দাদের।

বড়দঙ্গলের পাশের গ্রাম মহিষগোট গ্রামের বাসিন্দা স্বর্ণব্যবসায়ী মোমিন শেখের প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি হচ্ছে বড়দঙ্গলে। মাস তিনেক আগে সেই বাড়িতেই রাজমিস্ত্রির কাজে জুটে যায় কদর ও সাজ্জাদ। অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিকে চুক্তি করে তাদের কাজ করতে অনুমতি দিয়ে দেন মোমিন। তাদের সঙ্গে কাজ করা কাদের হোসেন, ওয়ালিউল ইসলাম, মতিউর রহমান, রকি শেখরা জানিয়েছেন, নিজেদের মোবাইল না-থাকায় তাঁদেরই একজনের মোবাইল ব্যবহার করত কদর। এতদিন একসঙ্গে কাজ করলেও তাদের অতীত সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পাননি তাঁরা। অন্য মিস্ত্রিদের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, দোকানে বসে চা, সিগারেট খাওয়া সেরেছে কদররা। প্রত্যন্ত এই এলাকায় পুলিশের টহলদারি বড় একটা নেই। শান্ত, নিস্তব্ধ বড়দঙ্গলে তাই নির্ভাবনায় কাজ করছিল কদর। কিন্তু এনআইএ-র তীক্ষ্ণ নজরদারিতে তারা শেষ পর্যন্ত জালে পড়ে যায়।

মুর্শিদাবাদের কাদের হোসেন বলেন, ‘আমরা এখানে প্রায় মাস ছয় কাজ করছি। ওরা মাস তিনেক আগে এসে এই বাড়ির মালিককে কাজে নেওয়ার জন্য বলে। আমরা সারাদিন কাজ করে রাতে খেয়ে দোতলায় শুয়ে পড়তাম। আর ওরা দু’জনে নীচে নেমে যেত। আমি মোবাইলে অত কিছু বুঝি না। কদর কাজি বলে লোকটা আমার মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করত।’ আর এক মিস্ত্রি ওয়ালিউল ইসলাম, মতিউর রহমান বলেন, ‘কী ভাবে ওরা এখানে এল জানি না। ওদের কাছে কাউকে আসতেও দেখিনি কখনও। তবে রাতে কেউ আসত কি না বলতে পারব না।’ এলাকার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ হাইত, সৈকত সামন্ত, রাজকুমার পণ্ডিত, ছোট্টু রানারা একবাক্যে বলেন, ‘আমরা এদের সঙ্গে এক দোকানে বসে চা খেয়েছি, গল্প করেছি। দিব্যি সাধারণ মানুষের মত মিশেছিল। এখন ভাবছি কাদের সাথে ছিলাম রে বাবা!’

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মঙ্গলবার সকালে ছেলের গ্রেপ্তারির খবর পেয়েছেন শরিফা বিবি। তবে ফোনটা কে বা কারা করেছিল, তা জানা নেই কদর কাজির মায়ের। বীরভূমের কীর্ণাহারে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের গ্রামের বাড়ির অদূরেই নানুর থানার নিমড়া গ্রামে বাড়ি কদরের। তার দোতলা পাকা বাড়ির সামনে বসেছিলেন বৃদ্ধা শরিফা। তাঁর দাবি, ‘পাঁচ বছর ধরে আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই ছেলের। আমিও যোগাযোগের কোনও চেষ্টা করিনি। ও কি সত্যিই দোষী, না ওকে ফাঁসানো হয়েছে, কিছুই জানি না। ছেলেটা এমন হবে ভাবতে পারছি না।’

এই নিমড়া গ্রামেই এক চিলতে মাটির বাড়িতে ছয় বোন ও এক ভাইয়ের সঙ্গে বড় হয় কদর। দুই দিদির বিয়ে হয়েছে গ্রামেই। যপিঠোপিঠি দুই বোন জিন্নাতুর ও জরিনাকে শিমুলিয়ার হাই মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিল কদর। শিমুলিয়ার ওই মাদ্রাসাতেই বাংলাদেশের জেএমবি সদস্য কওসরের সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। দাদা কদরের উদ্যোগে কওসরের সঙ্গে বিয়ে হয় জিন্নাতুরের। সেই বিয়ে হয়েছিল নিমড়ার এই বাড়ি থেকেই। পরে বীরভূমেরই মুলুক গ্রামের হাবিবুরের সঙ্গে জরিনার বিয়ে হয়। তার আর এক বোন রুম্পা শিমুলিয়া মাদ্রাসায় পড়তে গিয়ে আর ফেরেনি। শিমুলিয়া মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরেই পাকা বাড়ি ওঠে কদরের। শরিফা বলেন, ‘কদর কোথায় ছিল জানি না। জরিনার কথাও কিছু বলতে পারব না।’

কদরের মামা জালালউদ্দিন বলেন, ‘ও এমন ছেলেই নয়। আমার ভাগনেকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে। ও ছোট থেকেই নমাজি, ধর্মপ্রাণ। ও এরকম কাজ করতে পারে না।’ প্রতিবেশী শেখ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট থেকেই ভালো ছেলে কদর। কোনও ঝুটঝামেলায় থাকত না। রাজমিস্ত্রির কাজ করত। গ্রামে সাধারণ মানুষের মতোই বসবাস করত। ও কেন এ সবে জড়াল, বুঝতে পারছি না।’ কদরের সঙ্গেই গ্রপ্তার সাজ্জাদ মুর্শিদাবাদের কান্দির বাসিন্দা বলে জানা গেলেও, তার সম্পর্কে আর কোনও তথ্য মেলেনি। সে নলহাটির মাদ্রাসায় পড়ত বলে খবর।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল