অ্যাপশহর

দোর বন্ধ রাখছে বনেদী বাড়ি

বুকে পাথর চেপে আড়াইশো বছরের পুরোনো ঐতিহ্য একটি বছরের জন্য শিকেয় তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শহরের একাধিক বনেদি বাড়ির কর্তারা। কী কী পদক্ষেপ করা হল? জানুন বিস্তারিত...

Ei Samay 22 Oct 2020, 8:15 am
এই সময়: করোনা আতঙ্কে কোথাও 'বহিরাগত'দের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ করে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুর্গাপুজোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও বা বাইরের লোকজন ঢোকার সুযোগ পেলেও তাঁদের গতি রুদ্ধ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট এলাকায়। বাইরের লোকেদের জন্য আলাদা প্রবেশপথের ব্যবস্থা রয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে শহরে।
EiSamay.Com bonedi bari pujas will not allow outsiders this time
শোভাবাজার রাজবাড়ি


বার বার ক্ষমা চাইছিলেন শোভাবাজার রাজবাড়ির (বড় তরফ) সৌমিত দেব। বলছিলেন, '১৭৫৭ থেকে পুজো হচ্ছে এ বাড়িতে। পুজোর চারদিন বাড়ির ফটক দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পা মিলিয়ে অবাধে ঢুকেছেন বাইরের লোকজন। এমন কেউ নেই যিনি পুজো দেখতে ঠাকুরদালানে উঠতে বাধা পেয়েছেন। কিন্তু ২৬৭ বছরের পুরোনো এই নিয়মের বেশ কিছু বদল ঘটাতে আমরা বাধ্য হয়েছি।' পুজোর অন্যতম এই উদ্যোক্তা বলছেন, 'এ বার বাইরের লোকের প্রবেশের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রেখেছি। থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পরে তাঁরা ঢুকবেন। পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত।' রাজবাড়ির পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, পরিবারের সদস্যসংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশো। এ বছর বিশেষ পরিস্থিতির জন্য পুজোয় অন্তত ২৫০ জন আসতে পারবেন না। বাকি ৫০০ জনের সুরক্ষার জন্য যথাসাধ্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। বহিরাগত দর্শনার্থীদের সঙ্গে বাড়ির সদস্যদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাইরের লোকজনকে এবার ঠাকুরদালানে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। সৌমিত বলছেন, 'খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। বিসর্জনের সময়ও তো এই প্রথম ৩২ জন বেহারার বদলে ট্রলিতে ঠাকুর ভাসান হবে।'

শোভাবাজার রাজবাড়ির ছোটতরফের পক্ষ থেকে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই পরিবারের পুজোর বয়স ২৩০ বছর। বাড়ির সদস্য দেবাশিসকৃষ্ণ দেব বলছেন, 'পরিবারের সদস্য প্রায় ৪৫০। পুজোর দিনগুলোয় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গড়ে তো ১৫০ জন করে আসবেনই। এঁদের অনেকেই প্রবীণ। আমরা ঠিক করেছি এ বার বাইরের দর্শনার্থীদের বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই।' শোভাবাজার রাজবাড়ির (ছোট তরফ) পক্ষ থেকে পরিবারের প্রতি সদস্যর জন্য বিশেষ কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ির ফটকে মোতায়েন রাখা হবে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী। কার্ড দেখিয়ে তবেই ভিতরে ঢুকতে হবে।

বাইরের দর্শনার্থীদের জন্য কিছু কড়াকড়ির ব্যবস্থা করছেন রানি রাসমণির পরিবারের সদস্যরাও। পুজোর সময় বাড়ির লোকজন এবং পরিবারের নিকটতম সদস্য মিলিয়ে অন্তত ৩০০ মানুষে গমগম করে গোটা বাড়ি। একসময় রামকৃষ্ণ এই বাড়ির প্রতিমাদর্শনে এসেছিলেন। সেই কারণে বহু মানুষের কাছেই এই পুজোর আকর্ষণ অন্যরকম। তাই পুজোর সময় বাইরের লোকের আগমন ভাবাচ্ছে এই বাড়ির সদস্যদেরও। পরিবারের প্রবীণতম সদস্যদের অন্যতম দীপেন হাজরা বলছেন, 'করোনা সংক্রমণ এড়াতে আমরা এবার একসঙ্গে খাওয়া স্থগিত রেখেছি। প্যাকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাইরের লোক প্রতিমাদর্শনে আসবেন এটাই স্বাভাবিক। আমরা ওঁদের বারণ করতে পারব না। তবে, বহিরাগতরা বাইরের দালান যাতে না পেরোতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বছরটা আমাদের ক্ষমা করে একটু দূর থেকেই প্রতিমা দেখুন ওঁরা।'

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল