অ্যাপশহর

বিপুল ঋণের বোঝা চাপছে রাজ্যের পিঠে

রাজ্যে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন ২০২১-এ৷ সেই নির্বাচনের পর সরকারে যে দলই আসুক না কেন, রাজ্যের অর্থনীতির হাল ধরা তাদের পক্ষে মোটেই সহজ হবে না৷

EiSamay.Com 11 Feb 2017, 10:55 am
এই সময়: রাজ্যে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন ২০২১-এ৷ সেই নির্বাচনের পর সরকারে যে দলই আসুক না কেন, রাজ্যের অর্থনীতির হাল ধরা তাদের পক্ষে মোটেই সহজ হবে না৷ কেননা, যে বিপুল ঋণের বোঝা তাদের ঘাড়ে পড়বে সেটা অকল্পনীয়!
EiSamay.Com huge debt on state treasury
বিপুল ঋণের বোঝা চাপছে রাজ্যের পিঠে


২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় আসে সেই সময় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে মোট দেনার পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা৷ ছ’বছরে সেই পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার কোটি টাকা হতে চলেছে বলে শুক্রবার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর পেশ করা বাজেটের হিসাব৷ ২০২০-২১ সালে সেটা কোথায় পৌঁছবে সেটা অনুমান সাপেক্ষ৷

ঋণের ফাঁদ যে ক্রমেই ব্ল্যাকহোলের চেহারা নিচ্ছে, তা স্পষ্ট বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে ফি বছর বাজার থেকে রাজ্যের ঋণ করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া৷ ২০১১-১২ সালে অর্থাত্, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম অর্থ বছরে রাজ্য ঋণ নিয়েছিল ২২,১৯০ কোটি টাকা৷ এই ঋণের কিছুটা অবশ্য আগের বাম সরকারের আমলে নেওয়া হয়েছিল৷ সেই ঋণের পরিমাণ ২০১৫-১৬ সালে বেড়ে হয় ২৪ হাজার কোটি টাকা৷ কিন্ত্ত, গত বছর ওই পরিমাণ একলাফে বেড়ে হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা৷ আর, আগামী অর্থবছরে বাজার থেকে ৪৪,৪৮৪ কোটি টাকা ধার করতে চলেছেন অমিত মিত্র!
এর একটা বড় কারণ অবশ্য ২০০৭-০৮ সালে বাম সরকারের করা ঋণের আসল পরিশোধ একলাফে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়ে যাবে ২০১৭-১৮ থেকে৷ পরবর্তী চার বছরে তা আরও ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়বে৷

কিন্ত্ত শুধু এটাই একমাত্র কারণ নয়৷ বর্তমান রাজ্য সরকারের দান-খয়রাতিও আরেকটা বড় কারণ৷ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী, ঋণ পরিশোধ, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন ও পেনশন এবং বিভিন্ন ভর্তুকি দিতে রাজ্য সরকারকে মোট ৯৪,০৫০.০৩ কোটি টাকা খরচ করতে হবে৷ অমিত মিত্রর ২০১৭-১৮ সালের বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ওই পরিমাণ ৩১,৭৪৭.৩৩ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়াবে ১,২৫,৭৯৭.৩৩ কোটি টাকা! অথচ শিল্পবিনিয়োগ না-আসায় এবং যথেষ্ট রাজস্ব আয় না-হওয়ায় এই খরচ মেটাতে বাজার থেকে বেশি করে ঋণ করা ছাড়া গতি নেই অমিতবাবুর৷ যেমন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে বাজার থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখে ছিলেন অর্থমন্ত্রী৷ কিন্ত্ত সংশোধিত হিসাবে, সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা!

আরও লক্ষ্যণীয় হল, বাজার থেকে করা ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছর থেকেই হঠাত্ করে একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে৷ কী কারণ, অমিতবাবু তার ব্যাখ্যা দেননি৷ রাজ্য সরকারের নিজস্ব রাজস্ব আদায় গত ৬ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও আগামী অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ঋণ নিতে হবে কেন? রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়া অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর সাহায্যার্থে এগিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রীই৷ তাঁর জবাব, ‘এই যে এত টাকা খরচ হচ্ছে, এত কাজ হচ্ছে, সে টাকা আসবে কোথা থেকে? এ সব নিয়ে ভাবতে হবে না৷’ এদিন অর্থমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের যাবতীয় প্রশ্নের অবশ্য উত্তর দেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই৷

অন্য দিকে, প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে অমিতবাবুর দাবি, রাজ্যের মোট জিডিপি-র তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি গত পাঁচ বছরে অনেকটাই কমে গিয়েছে৷ অমিতবাবুর সহায় বলতে জিএসটিই এখন একমাত্র অবলম্বন৷ জিএসটি চালু হলে পশ্চিমবঙ্গ বেশি লাভবান হবে, কারণ এ রাজ্যে যত পণ্য ও পরিষেবা উত্পাদন হয়, তার থেকে বিক্রির পরিমাণ অনেক বেশি৷ জিএসটি ব্যবস্থায় পণ্য ও পরিষেবা যে রাজ্যে বিক্রি হবে সেই রাজ্য সরকার ওই করের আদায় পাবে৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল