অ্যাপশহর

আচরণে আপত্তি শিক্ষকের, আত্মঘাতী ছাত্রী

ছটফটে, প্রাণবন্ত মেয়েটি স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকত সামনের সারিতে। গান-নাচ-বিতর্ক-ছবি আঁকায় চৌখস। পুরোপুরি ফুটে ওঠার আগেই সেই মেয়ে লাশকাটা ঘর হয়ে এখন অতীত। তার আত্মহত্যায় কাঠগড়ায় গ্রামীণ হাওড়ার স্কুল।

EiSamay.Com 11 Jul 2019, 4:29 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ছটফটে, প্রাণবন্ত মেয়েটি স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকত সামনের সারিতে। গান-নাচ-বিতর্ক-ছবি আঁকায় চৌখস। পুরোপুরি ফুটে ওঠার আগেই সেই মেয়ে লাশকাটা ঘর হয়ে এখন অতীত। তার আত্মহত্যায় কাঠগড়ায় গ্রামীণ হাওড়ার স্কুল। নীতি পুলিশগিরিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক।
EiSamay.Com Student commits suicide at Howrah
ছাত্রীর ঘরে পুলিশ।


পড়ুয়া ছেলেমেয়েকে ঘিরে প্রত্যাশার চাপ, নম্বরের ইঁদুর দৌড় এবং তার জেরে আত্মহত্যার স্রোত চলছেই। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের মোকাবিলার মন্ত্র শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানা আছে কি না, প্রশ্নটা তুলে দিয়েছে এই অপমৃত্যু।

আমতার স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত মেয়েটি। একাদশ ও দ্বাদশে স্কুলটিতে ছেলে ও মেয়েরা এক সঙ্গেই পড়ে। ওই ছাত্রীর চলাফেরা, সঙ্গ নিয়ে ক্রুদ্ধ প্রধান শিক্ষক সোমবার ডেকে পাঠান বাবাকে। পরিবারের অভিযোগ, স্কুলে বাবার অপমান সইতে পারেনি মেয়ে। তাতেই পড়ার ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয় সে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করেছে ছাত্রীর পরিবার। তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে প্রধান শিক্ষকের পাল্টা বক্তব্য, ওই ছাত্রীই বাবাকে অপমান করেছিল।

জগৎবল্লভপুরের কাউগাছির অবস্থাপন্ন পরিবারের ছাত্রী মঙ্গলবার স্কুলে যায়নি। দুপুরে পড়ার ঘরে ছিল। মা জানান, খেতে আসেনি মেয়ে। তাই বাবা তাকে ডাকতে ওঠেন দোতলায়। ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘বন্ধ ঘরে সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে দেখি, মেয়ে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে। সবাই মিলে ওকে নিয়ে যাওয়া হয় আমতা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।’

দুই মেয়ের মধ্যে আত্মঘাতী ছিল ছোট। ছাত্রীর মা চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন, ‘মেয়ে একটু ছটফটে ছিল। যোগ দিত স্কুলের সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। কিন্তু ছটফটে স্বভাবের কারণে অনেক শিক্ষক ওকে সহ্য করতে পারত না। মেয়ে নাকি স্কুলে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, এই অভিযোগ করে সোমবার আমাদের ডেকে পাঠান প্রধান শিক্ষক।’ মা’র অভিযোগ, ‘স্কুল থেকে ফেরার পরই মেয়ে তাঁকে জানায়, প্রধান শিক্ষক বাবার সামনে অসত্য কথা বলেছেন। এর পরই মনমরা হয়ে যায় মেয়ে। মেয়ে প্রায় বলত, স্কুলে অহেতুক সন্দেহ করা হয় তাকে। নজর রাখা হয় গতিবিধির দিকে। ছটফটে মেয়েটার সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল। যদি কোনও সম্পর্ক থাকত, তা হলে ও অবশ্যই জানাত।’ ছাত্রীর আত্মহত্যার খবর পেয়ে ওই স্কুলে যান গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি শান্তি সেন। পরে ঘরটিকে ‘সিল’ করে দেয় পুলিশ। আমতার স্কুলের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ওই ছাত্রী দ্বাদশে পড়ত। কিন্তু প্রায়ই চলে যেত একাদশ শ্রেণির ক্লাসঘরে। ওর আচার-আচরণ স্কুলের শৃঙ্খলায় বাধা তৈরি করছিল। পরে ওর মায়ের মোবাইল নম্বর জেনে সোমবার ডেকে পাঠানো হয়। ছাত্রীটি বাবাকে নিয়ে এসেছিল স্কুলে। সেখানে অন্য শিক্ষকরাও ছিলেন। তাঁদের সামনেই ছাত্রী বাবার সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করছিল। এই স্কুলে পড়াতে হলে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে, এই মর্মে লিখিত আবেদনপত্র নিয়ে মেয়েকে পাঠাতে হবে বলে আমি ও অন্য শিক্ষকরা জানিয়ে দিই ছাত্রীর বাবাকে।’ ছাত্রীর অপমৃত্যুর খবর জানাজানি হয় এ দিন। শোকসভা করে ক্লাস বন্ধ না রাখায় ক্ষোভ ছড়ায় পড়ুয়াদের মধ্যে। ক্ষোভের জেরেই পরে ছুটি দেওয়া হয় চতুর্থ পিরিয়ডে।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল