অ্যাপশহর

বাবাকে রক্ষা করতে গিয়ে গণপিটুনিতে মৃত ছেলে

অরূপের বাড়িতে এসে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার মারধর। বাবাকে মার খেতে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সৌরভ (১৫)। দশম শ্রেণির ছাত্রটিকেও রেয়াত করা হয়নি। মাটিতে ছিটকে পড়ে সৌরভ। তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

EiSamay.Com 11 Apr 2019, 1:04 pm

হাইলাইটস

  • তাঁর দোষ, দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ট্রান্সফর্মারে চাবি দিয়েছিলেন।
  • সেই দোষের শাস্তি, তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে মারল দুষ্কৃতীরা।
  • তারকেশ্বরের বালিগোড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর বুধবার দিনভর ছিল এই ঘটনায় তপ্ত।
EiSamay.Com Boy lynched to death to save father
প্রতীকী ছবি।
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: তাঁর দোষ, দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ট্রান্সফর্মারে চাবি দিয়েছিলেন। সেই দোষের শাস্তি, তাঁর ছেলেকে পিটিয়ে মারল দুষ্কৃতীরা। তারকেশ্বরের বালিগোড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর বুধবার দিনভর ছিল এই ঘটনায় তপ্ত। মূল অভিযুক্ত, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ঘটনার পর থেকে পলাতক। তাঁর ভাইকে অবশ্য গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে বাড়ির চালে বিদ্যুতের তার বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছিল। পেশায় সাইকেল মিস্ত্রি অরূপ পাত্র দুর্ঘটনার আশঙ্কা করে ট্রান্সফর্মারে চাবি দিয়েছিলেন। বন্ধ করে দেন মেন লাইন। বিষয়টি জানান তারকেশ্বর থানা এবং বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। পুলিশের তরফে তাঁকে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা গেলে তাঁদের হাতে যেন তিনি চাবি দিয়ে দেন। অরূপ থানা থেকে রাতে বাড়ি ফিরতেই রাত দশটা নাগাদ লোকজন নিয়ে তাঁর বাড়িতে চড়াও হন রাজেশ দাস। তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী, পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মী। চাবি ফেরত দেওয়া নিয়ে বচসা শুরু হয় দু'জনের। অভিযোগ, স্থানীয় স্কুল মাঠে নিয়ে গিয়ে অরূপকে বেধড়ক মারধর করা হয়। রাজেশের সঙ্গে তাঁর ভাই বিশ্বজিতও ছিলেন বলে দাবি অরূপের।

এখানেই শেষ হয়নি। অরূপের বাড়িতে এসে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার মারধর। বাবাকে মার খেতে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সৌরভ (১৫)। দশম শ্রেণির ছাত্রটিকেও রেয়াত করা হয়নি। মাটিতে ছিটকে পড়ে সৌরভ। তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এলাকাবাসীর দাবি, পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় অনেক অত্যাচার করেছেন রাজেশ। সকলকে সন্ত্রস্ত করে রাখেন। ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলার সাহস পান না।

বুধবার সকাল থেকে ভিড় জমে যায় অরূপের বাড়িতে। সন্তানের মৃত্যুতে গোটা পরিবার ভেঙে পড়েছে। এলাকায় ক্রমশ উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সকাল থেকে থানা ঘেরাও করে বিজেপি। দোষীদের গ্রেপ্তারির দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। সৌরভের পরিবারের লোকেরা কিছুক্ষণ পরে বিক্ষোভে যোগ দেন। তাঁরা বসে পড়ে থানার সামনে। বাড়ে উত্তেজনা। পুলিশ তাঁদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা দাবিতে অনড় থাকেন। তারকেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সামন্ত ঘটনাস্থলে এলে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। এমনকী মারমুখিও হয়ে ওঠে ক্ষুব্ধ জনতা।

হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি অরিন্দম দাস আসেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠায়। রাজেশের ভাই বিশ্বজিৎকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রাতে ফের তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সন্ধেয় ওয়ালশ হাসপাতাল থেকে সৌরভের দেহ নিয়ে আসেন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার। তিনি আসার সঙ্গে সঙ্গে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। অভিযুক্ত রাজেশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন এলাকাবাসী। অবিলম্বে রাজেশের গ্রেপ্তারির দাবিতে ফের শুরু হয় বিক্ষোভ। প্রশ্ন ওঠে, রাজেশকে আড়াল করা হচ্ছে কেন? রাজেশকে গ্রেপ্তার করা না-হলে দেহ রেখে বিক্ষোভ চলবে। ততক্ষণে রাজেশের বাড়িতে হামলা চালায় ক্ষিপ্ত জনতার একাংশ। অপরূপা বলেন, 'দল বা আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। দোষী শাস্তি পাবেই।'

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল