অ্যাপশহর

বন্ধুদের চাঁদার টাকায় মামলা , বেকসুর খুনে অভিযুক্ত তিন

খুনের ঘটনায় প্রায় তিন বছর ধরে জেলবন্দি তিন তরুণকে আইনি লড়াই করে নিরপরাধ প্রমাণ করলেন পাড়াপড়শি ও বন্ধুরা

EiSamay.Com 23 Dec 2016, 2:17 pm
এই সময় , হুগলি : খুনের ঘটনায় প্রায় তিন বছর ধরে জেলবন্দি তিন তরুণকে আইনি লড়াই করে নিরপরাধ প্রমাণ করলেন পাড়াপড়শি ও বন্ধুরা৷ খুনের অভিযোগ থেকে আদালত মুক্তি দিতেই আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি বেকসুর খালাস পাওয়া তিন জনের পরিবারের সদস্যরা৷ বুধবার খুনের মামলায় অভিযুক্তদের শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতের বিচারক রেহাই দিতেই তাঁদের পরিবার উল্লাসে মেতে ওঠে
EiSamay.Com
বন্ধুদের চাঁদার টাকায় মামলা , বেকসুর খুনে অভিযুক্ত তিন


২০১৪ সালের মার্চ মাসে শ্রীরামপুর থানা এলাকার পিয়ারাপুরের দিল্লি রোডের ষষ্ঠীতলায় রাস্তার ধারে বাবলু খাঁ (৫০ ) নামে এক হোটেল ব্যবসায়ী খুন হন৷ গভীর রাতে দুষ্কৃতীরা বোমা মেরে ও গুলি করে বাবলুকে খুন করে৷ ওই ঘটনায় মৃতের ছেলে দেবাশিস খাঁ শ্রীরামপুর থানায় শেওড়াফুলি আম বাগানের বাসিন্দা গৌর বিশ্বাস , গৌতম দত্ত ও সোহম রায়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করে৷ পরদিন শ্রীরামপুর থানার পুলিশ শেওড়াফুলি আমবাগান থেকে অভিযুক্তদের গ্রেন্তার করে৷ অভিযুক্তদের প্রথমে শ্রীরামপুর ও পরে হুগলি সংশোধনাগারে পাঠানো হয়৷ তাঁদের বিচারাধীন বন্দী হিসাবে রেখেই মামলা চলতে থাকে৷ মৃতের পরিবার , আত্মীয়স্বজন সাক্ষ্য দেন ওই তিনজনের বিরুদ্ধে৷

খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিনোদ যাদব ও শ্রীমন্ত গায়েন , যাঁরা বাবলুর হোটেলে রান্নার কাজ করতেন , তাঁরাও অভিযুক্তদের শনাক্ত করেন৷ তারপর থেকে তিন বছর ধরে মামলা চলে৷ বুধবার শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতের বিচারপতি রাজা চট্টোপাধ্যায় অভিযুক্তদের বেকসুর ঘোষণা করেন৷ অভিযুক্তদের আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন , ‘জেলে বন্দি ছিলেন তিনজন নিরপরাধ৷ খুনের মামলাটি খুব কঠিন ছিল৷ কিন্ত্ত খুনের ঘটনার পরে চিকিত্সা বিজ্ঞানের সূক্ষ্ম বিচারের ফলে এই মামলায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পেয়েছে৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ অভিযুক্তদের জন্য পাড়া পড়শি ও বন্ধুরা যে ভাবে চাঁদা তুলে দিনের পর দিন লড়াই করেছেন , সেটা এক কথায় অকল্পনীয়৷

খুনের অভিযোগ থেকে আদালত নিষ্কৃতি দেওয়ার পরেই আনন্দে সারারাত ঘুমতে পারেননি শেওড়াফুলি আম বাগানের বাসিন্দা অলোক মিস্ত্রি৷ তিনি বলেন , তিন বছর আগে একটা খুনের ঘটনায় পুলিশ যখন আমাদের তিন বন্ধুকে গ্রেন্তার করে , আমরা তখনই জানতাম , ওরা নিরাপরাধ৷ দিন আনা দিন খাওয়া লোকেরা কেন শুধু শুধু মানুষ খুন করতে যাবে ? ওই ঘটনার পরেই আমরা অনেকের কাছে গিয়ে ছিলাম৷ কিন্ত্ত কেউ আমাদের কথা শোনেনি৷ তাই আমরা বাধ্য হয়ে লড়াই করেছি আইনের পথে৷ নিজেরা চাঁদা তুলে মামলার খরচ চালিয়েছি৷ ’ তবে গৌর ও সোহম বাড়ি ফিরলেও গৌতম এখনও ছাড়া পাননি৷ জেলবন্দি অবস্থায় কোন একটি মারামারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ শুক্রবার ছাড়া পাওয়ার কথা৷

গোলক ভদ্র নামে আর এক বন্ধু বলেন , ‘আমাদের খুব ভালো লাগছে৷ তবে তিন বছর ওদের ও ওদের পরিবারকে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেতে হয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়েছে৷ ’ গৌর বিশ্বাস বলেন , ‘তিন বছর কত মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেছি , তা কাউকে বলে বোঝাতে পারব না৷ ’ সোহম রায়ের আইনজীবী সিদ্ধেশ্বর বেজ বলেন , ‘মৃত বাবলু খাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতি -সহ একাধিক অভিযোগ ছিল৷ সেই কারণেই তাকে খুন হতে হয়৷ কিন্ত্ত দুর্ভাগ্য , সোহম , গৌতম ও গৌর ফেঁসে যায়৷ সোহমের বাবা শক্তি রায় একটি ছোট কারখানায় কাজ করেন , সোহমের স্ত্রী হামেশাই এসে কান্নাকাটি করতেন৷ ঘটনার পরে সোহমের মা হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী৷ ’ এই রায়ে অবশ্য খুশি নন সরকার পক্ষের আইনজীবী মোহনলাল নাড়ু৷ বলেন , ‘বিচার মনঃপুত হয়নি , হাইকোর্টে যাব৷ ’
West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল