অ্যাপশহর

থিমের রমরমায় দিশেহারা দশা চন্দননগরে আলোর জাদুকরদের

কালের নিয়মেই নিয়তি নাকি পাকেচক্রে অকালপ্রয়াণ ?

EiSamay.Com 16 Sep 2016, 12:51 pm
কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়
EiSamay.Com
থিমের রমরমায় দিশেহারা দশা চন্দননগরে আলোর জাদুকরদের


কালের নিয়মেই নিয়তি নাকি পাকেচক্রে অকালপ্রয়াণ ? থিম পুজোর রমরমায় বেশ কয়েক বছর হল পিছু হঠেছে চন্দননগরের আলোর জাদু৷ অনেকেরই ধারণা , শেষের প্রহর গুনছে আলো দিয়ে গল্প বলার দিন৷ তবু স্বর্ণযুগে ফিরে যেতে নতুন কিছু করায় মরিয়া সেখানকার আলোকশিল্পীরা৷ এক সময়ে আলোর মাধ্যমে গল্প বলে রাজ্যের সর্বত্র নাম কিনেছিলেন চন্দননগরের শিল্পীরা৷ বছরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনাগুলোকে তুলে ধরা হত ‘টুনি বাল্বের ’ আলোয়৷ ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাই হোক বা সচিন তেন্ডুলকরের সেঞ্চুরি ---ঘটনা আলোড়ন তোলা মানেই , আলোর ভেলকিতে তার পুনঃপ্রদর্শনে বাজিমাত করতেন চন্দননগরের শিল্পীরা৷ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজো -উত্সবে ডাক পড়ত তাঁদের৷ পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই ঠিক হয়ে যেত , এ বার কোন ঘটনাকে আলোর মাধ্যমে প্রদর্শন করে দর্শকদের চমকে দেওয়া হবে৷ কিন্ত্ত , গত কয়েক বছরে কলকাতার নামকরা পুজোগুলোয় চন্দননগরের শিল্পীদের অনুপস্থিতি রীতিমতো চোখে পড়ছে সবার৷

পাতলা করে কাটা বাঁশের ফ্রেমে টুনি বাল্ব বেঁধে ‘রোলার মেশিন ’ দিয়ে সেই আলো পর্যায়ক্রমে জ্বালানো আর নেভানোর খরখর শব্দ আর তেমন শোনা যায় না চন্দননগরের অলি -গলিতেও৷ তার বদলে কালো ভিনাইলের চাদরের উপর নিঃশব্দে চলছে এলইডি বসানোর কাজ৷ বাজার ক্রমে সঙ্কুচিত হয়ে আসার কারণ হিসেবে চন্দননগরের শিল্পীরা দায়ী করছেন বাবু পাল বলেন , ‘আগে পুজো মিটলে ফ্রেম থেকে টুনি বাল্ব খুলে আবার নতুন করে অন্য ফ্রেমে বসানোর কাজ চলত৷ কিন্ত্ত , এখন পুজো কমিটিগুলো আলোর জন্য বেশি খরচ করতে আগ্রহী নয়৷ এলইডির আলো চাইছে৷ একটা এলইডি সেট কয়েক বছর চলে৷ ’ কয়েক দশক আগে পুকুরের জলের তলায় টিউব লাইট জ্বালিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীধর দাস৷ প্রধানত তাঁর হাত ধরেই চন্দননগরের আলোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল৷ একটা সময় কলকাতার পুজো কমিটিগুলো আগেভাগেই যোগাযোগ করত শ্রীধরের ‘এসডি চন্দননগরের আলোর শিল্পে এমন ভাটার টান প্রসঙ্গে শ্রীধরের অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন, ‘নতুন কিছু না দিতে পারলে কেনই বা বাইরের পুজো আমাদের ডাকবে বলুন তো ?’

কলকাতার বিভিন্ন পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের কথাতেও সেই সুর৷ শিবমন্দির পুজো কমিটির পার্থ ঘোষ বলেন , ‘এক সময় ওই আলো আমাদের পুজোর সঙ্গে মানানসই হত৷ কিন্ত্ত এখন তো থিমের পুজো৷ তার সঙ্গে চন্দননগরের আলো খাপ খায় না৷ ’ আবার সিংহী পার্কের ভাস্কর নন্দীর মতে , ‘আমাদের পুজো ছাড়াও একডালিয়া এভারগ্রিন , পার্ক সার্কাস ময়দান , কলেজ স্কোয়্যারের মতো যে পুজোগুলো এখনও থিমকে ঢুকতে না দিয়ে সাবেক পুজো ধরে রেখেছে , তাদের কাছে এখনও ওই ধরনের আলোর চাহিদা রয়েছে৷ ’ কিন্ত্ত , এমন পুজোর সংখ্যা এখন নামমাত্র৷ তাই চাহিদাও তলানিতে৷ খরচ কমানোর বিষয়টাও যে মাথায় রাখতে হয় , সে কথাও বলছেন একাধিক উদ্যোক্তা৷

নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের মণ্ডপের দায়িত্বে থাকা শিল্পী সুশান্ত পালের কথায় , ‘আগে মণ্ডপসজ্জার জন্য আলাদা আলোকশিল্পী রাখতে হত৷ এখন তো সবটাই আমাদের মতো থিম আর্টিস্টের হাতে৷ আমরাই দেখি মণ্ডপের সঙ্গে আলো মিশ খায় কি না৷ ’ শিল্পী জানালেন , মণ্ডপের এফেক্টের সঙ্গে আর আলো দিয়ে গল্প বলার ধরনটা চলে না৷ তবে এত সহজে হার মানতে নারাজ জাদু-শিল্পীরা৷ অপেক্ষায় আছেন ‘নতুন কিছু’ করার৷ সময়ের নিয়মে এক দিন হয়তো বাতিল হবে থিমের চটক৷ সে দিন হয়তো ফের চাহিদা বাড়বে চন্দননগরের আলোর৷ অথবা চলতি হাওয়ার পন্থী হয়েই নিজেদের বদলে আগমনীর আলোহারাতে বসেছে এই আলোর জাদু ---ফাইল চিত্র৷
West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল