অ্যাপশহর

অ্যাডভান্টেজ প্রশাসন, ব্যাকফুটে মোর্চা

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকা বন্ধ ঘিরে পাহাড়ে একপ্রকার যুদ্ধ পরিস্থিতি৷ তবে সার্বিক বিচারে এগিয়ে প্রশাসনই৷ 

EiSamay.Com 28 Sep 2016, 8:49 am
এই সময়: দু’পক্ষই একরোখা৷ কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ৷ একপক্ষের হাতিয়ার বঞ্চনার দীর্ঘ তালিকা৷ অন্যপক্ষের হাতিয়ার হাইকোর্টের নির্দেশ, প্রশাসনিক ক্ষমতা৷ সব মিলিয়ে, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকা বন্ধ ঘিরে পাহাড়ে একপ্রকার যুদ্ধ পরিস্থিতি৷ তবে সার্বিক বিচারে এগিয়ে প্রশাসনই৷ আজ, বুধবার দার্জিলিং বন্ধের ডাক দিয়েছে মোর্চা৷ তার আগে মঙ্গলবারই হাইকোর্টের থেকে নির্দেশ গিয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে, বন্ধ মোকাবিলায় যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে৷ একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুন্তর ডিভিশন বেঞ্চ৷ আদালত স্পষ্ট বলেছে, সাধারণ মানুষের অধিকার যে কোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে৷ জনজীবন বিঘ্নিত হলে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করবে আদালতই৷
EiSamay.Com high court orders to take action against bandh supporters huge security arrangements in darjeeling
অ্যাডভান্টেজ প্রশাসন, ব্যাকফুটে মোর্চা


বহরমপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব৷ বন্ধ অসাংবিধানিক৷ পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে৷ ’যেমন কথা, তেমন কাজ৷ এমনিতেই পুজোর মরসুম, পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু করেছে পাহাড়ে৷ বিমল গুরুংরা জানিয়ে রেখেছেন, প্রয়োজনে বন্ধের মেয়াদ বাড়বে৷ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার৷ পাহাড় সচল রেখে প্রশাসন যেমন মোর্চাকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চায়, তেমনই এই বন্ধ ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক ভাবে পাহাড়ে তৃণমূলের ভিত্তি নিঃসন্দেহে আরও দৃঢ় হবে৷ এই অবস্থায় কী পরিস্থিতি পাহাড়ে? ৮ কোম্পানি সিআরপিএফ এবং ২,০০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়ে গিয়েছে মঙ্গলবারই৷ মোর্চার গতিবিধি নজরে রাখতে দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং কালিম্পংয়ে ১০০টি সিসিটিভি লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব৷ দু’পাশে এগোলেই দেখা যাবে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সিআরপিএফ জওয়ানরা৷ প্রতিটি রাস্তার বাঁকে, সেতু বা কালভার্টের পাশেও উর্দিধারীরা পাহারায়৷ সরকারি কর্মচারীদের হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ ট্রাক বা জিপের চালকদের বলা হয়েছে, গাড়ি বের না -করলে পারমিট বাতিল পর্যন্ত করা হতে পারে৷ বেসরকারি গাড়ির চালকদের জন্য একদিনের বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ অবশ্য যে পর্যটকদের আজ নামার কথা ছিল, তাঁরা মঙ্গলবারই সিকিম এবং দার্জিলিং পাহাড় থেকে নেমে এসেছেন৷ ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে এ দিন বিস্তর যানজট হয়৷

সরকারি নির্দেশের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক, স্কুল -কলেজ কর্তৃপক্ষকেও৷ খোলা রাখতে বলা হয়েছে রেশন দোকান৷ এ ক্ষেত্রেও রয়েছে লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি৷ দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষকে বুধবার পাহাড়ে বাড়তি বাস চালাতে বলা হয়েছে৷ পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেছেন, ‘হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে বুধবার জনজীবন বিপর্যস্ত করার চেষ্টা হলে কাউকে রেয়াত করা হবে না৷’ ঘটনা হল, হাইকোর্টের রায়ের পরে রাজনৈতিক ভাবে বন্ধ মোকাবিলার যে কৌশল তৃণমূল নিয়েছিল, তা থেকেও তারা সরে এসেছে৷ ঠিক হয়েছে, পথে নামবেন না দলীয় কর্মীরা৷ বন্ধ রুখবে প্রশাসনই৷ বরং বন্ধ ব্যর্থ করার আবেদন জানিয়ে মঙ্গলবার দলের তরফে জোরদার প্রচার চালানো হয়েছে৷ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছেন, ‘পাহাড়ের মানুষ যে বন্ধ চান না, সেটা এ দিন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গিয়েছে৷ তবে মোর্চাকে নিয়ে মানুষের মনে যে আতঙ্ক রয়েছে, তা দূর করতেই সরকারের তরফে সব প্রস্ত্ততি নেওয়া হয়েছে৷’ তবে তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, রাস্তায় নেমে বন্ধ করার কথা বলে, সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে মোর্চাও৷ সংগঠনের নেতা জ্যোতিকুমরা রাই বলেছেন, ‘আমরা তো বন্ধ ডেকেই দিয়েছি৷ তার পরে রাস্তায় নেমে বন্ধ করাতে হবে কেন? মানুষই বন্ধ করবেন৷’ তিন মন্ত্রী যেমন পাহাড়ে উপস্থিত, তেমনই মোর্চা নেতারাও মঙ্গলবার সকাল থেকে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছেন৷ কালিম্পংয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন বিমল গুরুং নিজে৷ তাঁর উল্টো দিকে থাকছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব৷ বিকেলে কার্শিয়াংয়ে পৌঁছেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী৷ এখানে মোর্চার বিধায়ক রোহিত শর্মা এবং জিটিএ সভাসদ অনীত থাপা বন্ধ সামাল দেবেন৷ দার্জিলিংয়ে মোর্চা নেতা বিনয় তামাং রয়েছেন৷

রাজ্য সরকার এ দিন সকালেই দার্জিলিংয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্যের আদিবাসীকল্যাণ মন্ত্রী তথা প্রাক্তন পুলিশ অফিসার জেমস কুজুরকে৷ তিনি বলেছেন , ‘হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে আমাদের পথে নামার দরকার নেই৷ কেউ জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করলে, প্রশাসনই ব্যবস্থা নেবে৷’ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে পাঠানো হয়েছে এডিজি সিআইডি রাজেশ কুমারকেও৷ শোনা যাচ্ছে, হাইকোর্টের নির্দেশের পরে বন্ধ করা নিয়ে মোর্চার অন্দরেই খানিকটা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে৷ অনেকে মনে করছেন, আদালতের নির্দেশের পরে বন্ধ প্রত্যাহার করে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত হত৷ তার উপর জোটসঙ্গী বিজেপি-ও পাশ থেকে সরে গিয়েছে৷ দার্জিলিংয়ের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া বলেছেন, ‘রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করছি, যুক্তিযুক্ত দাবিতে প্রতীকী বন্ধ ভাঙতে পুলিশ ও মন্ত্রীদের না পাঠিয়ে বিমল গুরুং ও তাঁর দলের সঙ্গে আলোচনায় বসুন৷ সরকারের এই সংঘাতের দৃষ্টিভঙ্গি এলাকার ভবিষ্যত্কে অনিশ্চিত করবে৷’ এই পরিস্থিতিতে কী বলছেন সাধারণ মানুষ ? তাঁরা স্পষ্টতই দোটানায়৷ হিল ট্রাক ড্রাইভারস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রাজেন ছেত্রী বলেছেন, ‘পরিবহণ দফতর আমাদের বৈঠকে ডেকে একদিনের জন্য গাড়ির বিমা করে দিয়েছে৷ কিন্ত্ত চালকের উপরে হামলা হলে তার দায় কে নেবে? তা ছাড়া, বন্ধে মালিক গাড়ি চালাতে না চাইলে আমরা কী করব?’ হিল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনেরও তেমনই হাল৷ সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতা রবি গজমির বলেছেন, ‘সরকারি নির্দেশ আমাদের তো মানতেই হবে৷ কিন্ত্ত বুধবার অফিসে পৌঁছনোর নিরাপত্তা কে দেবে?’

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল