অ্যাপশহর

যৌথ পরিবার ভাঙলেও বাঁধন অটুট রেখেছে ছ’য়ের দুর্গাই

একদম পাশাপাশি ৬টি বাড়িতে ৬টি আলাদা দুর্গাপুজো। যৌথ পরিবার ভেঙে শরিকরা আলাদা হয়ে গেলে ছয় শরিকের বাড়িতে আলাদা আলাদা দুর্গা পুজো শুরু হয়। প্রায় তিনশো বছর ধরে ছয় দুর্গার পুজো চলে আসছে ভট্টাচার্য পরিবারে।

EiSamay 4 Oct 2019, 9:39 am
গৌতম ধোনি, কৃষ্ণনগর
EiSamay.Com bhattacharya badi durga puja


একে চন্দ্র দু'য়ে পক্ষ করে ছ'য়ে ঋতু ধারাপাতের হিসেবে থাকলেও নদিয়ার নাকাশিপাড়া ব্লকের ধর্মদা লাগোয়া বহিরগাছি গ্রামকে কিন্তু ছ'য়ের দুর্গা বল চেনেন জেলার মানুষ। একদম পাশাপাশি ৬টি বাড়িতে ৬টি আলাদা দুর্গাপুজো। যৌথ পরিবার ভেঙে শরিকরা আলাদা হয়ে গেলে ছয় শরিকের বাড়িতে আলাদা আলাদা দুর্গা পুজো শুরু হয়। প্রায় তিনশো বছর ধরে ছয় দুর্গার পুজো চলে আসছে ভট্টাচার্য পরিবারে। আর এই ৬টি পুজো ঘিরে গোটা গ্রাম আনন্দে জমজমাট।

নদিয়া রাজাদের গুরুবংশ এই ভট্টাচার্য বাড়ি। বাড়ির এক শরিক বর্ধমান রাজবংশের সভাপন্ডিত মধুসূদন তর্কপঞ্চাননের সময়ে বিধবা বিবাহ নিয়ে কথা বলতে স্বয়ং বিদ্যাসাগরও একাধিকবার এ বাড়িতে এসেছিলেন বলে জেলার আঞ্চলিক ইতিহাসের বইতে উল্লেখ রয়েছে। নদিয়া রাজবংশের সব চাইতে নামি পুরুষ কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের গুরুদেব ছিলেন এই বাড়ির সুপন্ডিত রামভদ্র ন্যায়লঙ্কার। বাড়ির বর্ষীয়ান সদস্য অসিত ভট্টাচার্য বলেন, রামভদ্রের ৮ ছেলে ছিল। সবার নামের সঙ্গে রামনাম যুক্ত। এঁদের নাম রঘুরাম, রামরাম, রামেশ্বর, রামকান্ত, রামহরি, রামগোবিন্দ, রামানন্দ, এবং রামশঙ্কর। এর মধ্যে ষষ্ঠ ও কনিষ্ঠ সন্তানের কোনও সন্তানাদি ছিল না। রামচন্দ্রের সময়ে একটি দুর্গাপুজো হত। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ছয় ছেলে আলাদা হয়ে গেলে পুজোও আলাদা হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে ছয় তরফের পুজো হয়ে আসছে।

ছোট শরিকি তরফের বর্তমান এক সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, 'আমাদের শরিকি পরিবার বাড়তে বাড়তে এখন কয়েক'শো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা মূল ছ'টি পরিবারের কে কোন তরফের সদস্য, এই পরিচয়েই পুজোর আয়োজন করি। পৃথক হলেও আমরা পুজোর সময় একটি বৃহত্তর পরিবারের ছোঁয়া কিন্তু পাই। দশমীর সকালে সব শরিক একসঙ্গে স্থানীয় সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে পুজো দিতে যাই। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকী ভিন রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শরিকদের সঙ্গে এক সঙ্গে চার দিন কাটানোর সুযোগ মেলে এই বড় পুজোতে। প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে একটি করে পাকা পুজো মন্ডপ রয়েছে। পুজোর কথা শোনাতে গিয়ে ছোট বাড়ির বউ আরতি ভট্টাচার্য বলেন, 'আগে পুজোতে মোষ বলি হত শুনেছি। বড় একটা খাঁড়া এখনও রয়েছে আমাদের বাড়িতে। আর পাঁঠা বলি তো কয়েক বছর আগেও হত। এখন আঁখ-কুমড়ো ইত্যাদি বলি হয়। প্রতিমা বিসর্জন পর্বে বড়দের সম্মান জানাতে প্রথমে বড়বাড়ি, মেজবাড়ি ইত্যাদি করে গ্রামের গুড়গুড়ে খালে পর পর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।'

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল