অ্যাপশহর

শহিদের বাড়িতে মমতা, চাকরির আশ্বাস

সুকমায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ান কৃষ্ণকুমার দাসের বাড়িতে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

EiSamay.Com 26 Apr 2017, 9:33 am
গৌতম ধোনি, করিমপুর
EiSamay.Com dead body of 3 jawans returns home after the chattisgarh maoist attack
শহিদের বাড়িতে মমতা, চাকরির আশ্বাস

প্রবীর কুণ্ডু, কোচবিহার


সুকমায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ান কৃষ্ণকুমার দাসের বাড়িতে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আরও দুই জওয়ান বিনয়চন্দ্র বর্মন ও অরূপ কর্মকারের বাড়িতেও পাঠালেন দুই মন্ত্রীকে৷ মঙ্গলবার সকালে কোচবিহারের বিবেকানন্দ স্ট্রিটে কৃষ্ণর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পরে সেখানেই নিহতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি৷ এ ছাড়া মৃতদের পরিবারের কেউ যোগ্য থাকলে তাঁকে সরকারি চাকরি দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চেষ্টা করব পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার৷ পাঁচ লক্ষ টাকা করে তিনটে পরিবারকে দেব৷ পরিবারের পাশে থাকাটা বড় কথা৷’
ছত্তিসগড়ের সুকমায় মাওবাদীদের গুলিতে নিহত জওয়ানদের মধ্যে রাজ্যের তিন জওয়ানও রয়েছেন৷ এঁদের দু’জনের বাড়ি কোচবিহারে, একজন নদিয়ার৷ এদের মধ্যে কৃষ্ণর বাড়িতে নিজেই যান মমতা৷ হাঁড়িভাঙায় বিনয়ের বাড়িতে মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও নদিয়ার করিমপুরে অরূপের বাড়িতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে পাঠান তিনি৷

কোচবিহারের কৃষ্ণ আর বিনয় ছিলেন হরিহর আত্মা৷ ছত্তিসগড়ে একই ক্যাম্পে ছিলেন দু’জনে৷ মাওবাদীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে দু’জনের বুক৷ গত বছরই কৃষ্ণের বিয়েতে এসে দারুণ মজা করে বৌভাতে জমিয়ে আড্ডা মেরেছিলেন বিনয়৷ উত্তর দিনাজপুরে বাড়ি হলেও কোচবিহারের বিবেকানন্দ স্ট্রিটেই থাকতেন কৃষ্ণ৷ বাড়িতে নববিবাহিত স্ত্রী ছাড়াও আছেন মা-দাদা৷ তিন দিন থেকে মোবাইল বন্ধ ছিল কৃষ্ণর৷ টিভিতে মাওবাদী হামলার খবর দেখে দাদা ফোন করেন কন্ট্রোলরুমে৷

সেখানেই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার৷ দাদা বিশ্বরূপ দাস বলেন, ‘আমি টেলিকম দন্তরের অস্থায়ী কর্মী৷ সংসারের উপার্জন করত ভাই৷ তিন দিন ফোন বন্ধ থাকায় আতঙ্কে ছিলাম৷ সেটা যে সত্যি হয়ে যাবে তা স্বপ্নে ভাবিনি৷’
দেড় বছরের পুত্র সন্তান, স্ত্রী, মা-বাবা রয়েছেন বিনয়ের৷ সংসারের অভাব মেটাতে মা দিনমজুরির কাজ করেন৷ বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন৷ ছত্তিসগড় এসএসবি হেডকোয়ার্টার থেকে বিনয়ের মৃত্যুর খবর আসার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার৷ স্ত্রী চুমকি বলেন, ‘ফোনে খবর পাওয়ার পর টিভিতে গোটা ঘটনা দেখে শিউরে উঠেছিলাম৷ সংসারের হাল কে ধরবে জানি না৷’

দু’মাস পর মাসতুতো বোন প্রিয়ার বিয়েতে বাড়িতে আসবে বলে কথা দিয়েছিলেন অরূপ | ছুটি পাওয়ার সমস্যা হয় বলে দুই দিদি অর্চনা ও রিনা ঠিক করেছিলেন, আদরের ছোট ভাই অরূপ ওরফে মিঠুনের জন্মদিনটা বোনের বিয়ের পরের দিনই সেরে ফেলবেন৷ জন্মদিনটা আগাম পালন করে ভাইকে ইলিশ মাছ আর মিষ্টি খাওয়াবেন৷
সময় পেলে অরূপই মাকে ফোন করতেন৷ কখনও এক দিন অন্তর, কখনও বা দু’তিন দিন পর৷ ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় লুটোপুটি খাচ্ছিলেন চন্দনা৷ রবিবার সকালেও টানা প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে কথা বলেছিলেন ছেলের সঙ্গে৷ এ দিন তিনি বলেন, ‘কী করে জানব, ওটাই ওর শেষ ফোন৷ জুন মাসে মাসতুতো বোনের বিয়েতে বাড়ি আসবে বলে সেদিনও বলেছিল৷’ বাবা অসিত কর্মকার বলেন, ‘সংসারে অরূপই একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিল৷ তিন বছর আগে সিআরপিএফের চাকরিতে যোগ দিয়েছিল৷ দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে ওর বিয়ের জন্য খোঁজখবর করছিলাম৷ আগে তো ছোটছেলের বিয়ে দিতে পারি না৷ শেষবারের জন্য বাড়ি এসেছিল ফেব্রুয়ারিতে৷ ছেলেটা বলেছিল, পরের বার এসে দোতলা করবে৷ কিন্ত্ত কোথা থেকে কী হয়ে গেল!’

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল