অ্যাপশহর

দিন-রাত শিকল বাঁধা অবস্থায় উঠোনে পড়ে রয়েছে ২৫ বছরের বিষ্ণু

মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে অসহায় বাবা-মায়ের টানাপোড়েন। ছেলের চিকিৎসার জন্য সবরকম চেষ্টা করেও সর্বসান্ত, তবুও সুস্থ হয়নি ছেলে। আর্থিক অনটনে বাধ্য হয়ে শিকলবন্দি ছেলে...

Lipi 20 Sep 2021, 6:58 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক : একমাত্র সন্তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা। দিন-রাত শিকলে বাঁধা অবস্থাতেই বাড়ির উঠোনে পড়ে রয়েছে ২৫ বছরের বিষ্ণু। তবে অকারণে বা ছেলের উপর অত্যাচার করতে নয়, অসহায় হয়েই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছেন মেখলিগঞ্জের রানীরহাটের বাসিন্দা নবীন রায় ও প্রতিমা রায়।পেশায় কৃষিজীবী নবীন রায় মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে কখনও অবহেলা করেননি। বরং ছেলের চিকিৎসার জন্য জমি-জায়গা বিক্রি করে দিয়েছেন। তবু ছেলে সুস্থ হয়নি।
EiSamay.Com chained-and-shackled
Representative Image


নবীনবাবু জানান, প্রথমদিকে মানসিক ভারসাম্যহীনতা এলেও শান্ত ছিল বিষ্ণু। কিন্তু ইদানিংকালে সে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। সুযোগ পেলেই বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে। বাধা দিলে বাবা, মা সহ পরিবারের সকলকে মারধর করে। সেজন্যই অসুস্থ একমাত্র ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। সুরাহা পেতে ছেলের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন নবীনবাবু। কিন্তু সরকারের তরফে আশ্বাস পর্যন্ত মেলেনি বলে আক্ষেপ তাঁর।

জানা গিয়েছে, বছর ৩০ আগে মেখলিগঞ্জের রানিরহাটের বাসিন্দা নবীন রায়ের সঙ্গে স্থানীয় সারহাটি এলাকার বাসিন্দা প্রতিমা রায়ের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পরেই বিষ্ণুর জন্ম হয়। সুস্থ-সবলভাবেই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল বিষ্ণু। পড়াশোনাতেও তুখোর ছিল। কিন্তু, রানিরহাটের শৌলমারি স্কুলের মেধাবী ছাত্র বিষ্ণু রায় স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর পরই যেন বদলে যায়। হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

রেশন কার্ড চাইতে যাওয়ায় স্ত্রীকে ধারাল অস্ত্রের কোপ স্বামীর, আক্রান্ত ছেলেও

বিষ্ণুর মা প্রতিমাদেবীর কথায়, ‘বছর ছয়েক আগে থেকে ছেলের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। প্রথম থেকেই ছেলের চিকিৎসা শুরু করি। ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে জমি-জমা বিক্রি করতেও পিছুপা হইনি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এখন আর ছেলের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।’ নবীনবাবু জানান, ৬ বছর ধরে শিলিগুড়িতে বিষ্ণুর চিকিৎসা করাচ্ছেন।

এছাড়া ধূপগুড়িতে ৬ মাস, মাথাভাঙাতে ৩ মাস ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিষ্ণুর চিকিৎসা করাতে, তার ওষুধ জোগাতে নিজস্ব সম্বল চাষের জমি-জমাও বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন পরের জমিতে খেটে সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা! ফলে ছেলের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আর এই হতদরিদ্র পরিবারের নেই। আবার দিন-রাত ছেলেকে শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখে বুক ফেটে যাচ্ছে হতভাগ্য বাবা-মায়ের। তাই নবীনবাবু ও প্রতিমাদেবীর সরকারের কাছে আবেদন, সরকারিভাবে তাঁদের ছেলে বিষ্ণুর দায়িত্ব নেওয়া হোক।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল