অ্যাপশহর

স্বামী নেই, গিয়েছে টাকাটাও

দুর্ঘটনার পরে ট্রেন থেকে নেমে অসহায়ের মতো রেল লাইনের পাশে ছোট ছেলেকে নিয়ে বসেছিলেন নীলমণি। ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, সে খবর তখনও জানানো হয়নি তাঁকে। এমনকি উপার্জনের ২০ হাজার টাকারও হদিশ নেই।

Ei Samay 15 Jan 2022, 8:40 am

হাইলাইটস

  • দুর্ঘটনার পরে ট্রেন থেকে নেমে অসহায়ের মতো রেল লাইনের পাশে ছোট ছেলে রাহুলকে নিয়ে বসেছিলেন নীলমণি।
  • ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু সে খবর শুক্রবারেও জানানো হয়নি তাঁকে।
  • রাজস্থানে শ্রমিক হিসেবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জনের কুড়ি হাজার টাকারও হদিশ নেই কোচবিহারের পাতলাখাওয়ার ওরাঁও পরিবারের!
EiSamay.Com tran acci news
ফাইল ছবি
সঞ্জয় চক্রবর্তী
দুর্ঘটনার পরে ট্রেন থেকে নেমে অসহায়ের মতো রেল লাইনের পাশে ছোট ছেলে রাহুলকে নিয়ে বসেছিলেন নীলমণি। ট্রেন দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু সে খবর শুক্রবারেও জানানো হয়নি তাঁকে। জানেন না, মাত্র ১৫ বছর বয়সে বড় ছেলেটার বাঁ পা কাটা গিয়েছে। এমনকী, রাজস্থানে শ্রমিক হিসেবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জনের কুড়ি হাজার টাকারও হদিশ নেই কোচবিহারের পাতলাখাওয়ার ওরাঁও পরিবারের!

সন্তানের মুখ দেখা হল না সুমিতের, বিকানির এক্সপ্রেস প্রাণ কাড়ল কোচবিহারের চিরঞ্জিতেরও

ময়নাগুড়ির দুর্ঘটনাগ্রস্ত গুয়াহাটি বিকানের এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়েই পাতলাখাওয়ার মঙ্গল ওরাঁও স্ত্রী নীলমণি এবং দুই পুত্র মানিক ও রাহুলকে নিয়ে ঘরে ফিরছিলেন। নীলমণির কোমরে গোঁজা ছিল গত তিন মাসের সঞ্চয়ের কুড়ি হাজার টাকা। মঙ্গল এখন নিথর দেহে শুয়ে রয়েছেন ময়নাগুড়ি হাসপাতালের মর্গে। বড় ছেলে মানিকের বাঁ পা বাদ যাওয়ায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি। ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মঙ্গল ওরাঁওয়ের ছোট দুই ভাই দুর্জন ও শিবলাল দোমোহনিতে ট্রেনলাইনের পাশ থেকে খুঁজে বার করেন নীলমণি ও রাহুলকে। শুক্রবার সকালে তাঁরাই বাসে চড়িয়ে নীলমণি ও রাহুলকে বাড়িতে ফেরত পাঠান। সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে খুঁজে বার করেন বড় ভাইপোকে। নীলমণি এখনও জানেন না যে তাঁর স্বামীর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে আশঙ্কা করে মানিককেও তাঁর বাবার মৃত্যুসংবাদ দেননি কাকারা। দুর্জন বলেছেন, 'পনেরো বছরের একটা বাচ্চা ছেলের একটা পা বাদ চলে গেল। এখনও নাকে অক্সিজেনের নল গোঁজা রয়েছে। কী করে তাকে এমন একটা দুঃসংবাদ দিই? ভাবিকেও দাদার মৃত্যুর খবরটা জানাতে পারিনি।'

মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল রঞ্জিতের

গ্রামে তেমন কাজকর্ম নেই বলে মঙ্গল ওরাঁও গত কয়েক বছর ধরেই রাজস্থানে শ্রমিকের কাজ করেন। গত বছর লকডাউনে বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন। এ বার অগস্ট মাসের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজস্থানে। ডিসেম্বর থেকে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিলেন মঙ্গল। সেই সঙ্গে ইচ্ছে ছিল, বাড়িটা মেরামত করার। এক ট্রেন দুর্ঘটনায় গোটা পরিবারটাই একেবারে তছনছ হয়ে গেল। শিবলাল বলছিলেন, 'এখন আমার দাদার পরিবারটাকে কে দেখবে? দাদা নেই। বড় ছেলেটার একটা পা চলে গেল।' এদিন অবশ্য রেলের তরফে মানিক ওরাঁওকে ক্ষতিপূরণ বাবদ রেলের তরফে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলের মৃত্যুর জন্য পরিবার আরও পাঁচ লক্ষ টাকা পাবে। দুর্জন বলছিলেন, 'আর তো কিছু করার নেই। গ্রামে তেমন কাজ নেই। আমরা গ্রামে কোনও মতে চাষবাস করে বেঁচে রয়েছি। মানিকদের এখন তো এই টাকাটাই বেঁচে থাকার সম্বল।'

পরের খবর