অ্যাপশহর

বঙ্গে হারে বামেদেরই দায়ী করছে কংগ্রেস হাইকমান্ড

বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে হারের দায় পুরোপুরি বামেদের উপরই চাপিয়ে দিচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড৷

EiSamay.Com 24 May 2016, 11:25 am
এই সময়, নয়াদিল্লি: বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে হারের দায় পুরোপুরি বামেদের উপরই চাপিয়ে দিচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড৷ পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলের আনুষ্ঠানিক বিশ্লেষণ হওয়ার আগেই তাঁদের বক্তব্য, সিপিএম যদি তাঁদের হারানো ভোটের কিছুটা পেত, তা হলে ফল অন্য রকম হত৷ লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট কমেছে ৬ শতাংশের বেশি৷ সেটা হল আদতে বামেদের আগে খোয়ানো ভোট৷ লোকসভার সময় বামেদের প্রতি বিরাগে অনেকে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন৷ এ বার তাঁরা বিজেপিকে তো ছেড়েছেন, কিন্ত্ত বামেদের প্রতি প্রসন্ন হননি৷ সেই ভোটের প্রায় পুরোটাই চলে গিয়েছে তৃণমূলের কাছে৷
EiSamay.Com congress blames cpm for their defeat in bengal
বঙ্গে হারে বামেদেরই দায়ী করছে কংগ্রেস হাইকমান্ড


কিন্ত্ত কেন বামেরা হারানো ভোট ফিরে পেলেন না?

পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী-সহ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘনিষ্ঠমহলে তার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ সেটা হল, গ্রামের দিকে গত পাঁচ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো কাজ করেছেন৷ রাস্তাঘাট আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে৷ লোকে ২-৩ টাকা কিলো দরে চাল-গম পেয়েছেন, কন্যাশ্রী ও সাইকেল দেওয়ার একটা প্রভাব ছিল৷ সব মিলিয়ে গ্রামের লোক মনে করেছেন, বামেদের তুলনায় মমতা ভালো কাজ করেছেন৷ তার প্রভাব ভোটে পড়েছে৷

আর এই কারণেই মুসলিম ভোট, বিশেষ করে বাঙালি মুসলিম ভোট তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি৷ সেটাও জোটের হারের আর একটা কারণ৷ কিন্ত্ত এ তো গেল গ্রামের ভোট৷ শহরে, বিশেষ করে কলকাতাতেও তো একতরফা জিতেছে তৃণমূল৷ এত ক্ষোভ-বিক্ষোভ সত্ত্বেও তাঁরা কী করে জিততে পারল?

কংগ্রেস নেতাদের ব্যাখ্যা হল, কলকাতাতেও বিজেপি থেকে যে ভোটটা কমেছে, সেটা তৃণমূলে চলে গিয়েছে৷ সেটাই ফারাকটুকু গড়ে দিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের এক প্রধান নেতার কথায়, ‘বামেরা যদি তাঁদের ভোট ফিরে না পেতে পারে, তা হলে আমরা কী করতে পারি?’ বামেদের কাছে কংগ্রেসের ভোট না যাওয়ার অভিযোগও উড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা৷ কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, ‘আমাদের তিন জেলায়, বা বলা যেতে পারে যে সব লোকসভা আসনে আমরা জিতি, সেখানে আমাদের ৩০ শতাংশ ভোট আছে৷ বাকি জায়গায় তো গড়ে চার শতাংশ ভোট রয়েছে৷ তাই বাকি জায়গাগুলিতে, ছোটখাটো কয়েকটা পকেট বাদ দিলে আমরা তো একেবারেই বড় প্লেয়ার নই৷ আমাদের সেই ভোটটা বামেরা পেয়েছেন৷ কিন্ত্ত নিজেদের হারানো ভোট এবং মুসলিম ভোট না পেলে তাঁরা জিতবেন কী করে?’

সে জন্যই কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, তাঁদের দিক থেকে ঝুঁকিটা খেটে গিয়েছে৷ এবং বামেদের সঙ্গে আঁতাতে বা আসন সমঝোতায় গিয়ে কোনও ভুল হয়নি৷ কংগ্রেস দীর্ঘদিন পরে আবার বিরোধী দল হয়েছে৷ আসন সংখ্যা বেড়েছে৷ রাজ্যে বিজেপিকেও আটকানো গিয়েছে৷ কারণ তাঁদের হিসেব হল, একা লড়লে কংগ্রেস গোটা পঁচিশ আসন হয়ত পেত৷ বিজেপি বরং অনেক ভালো ফল করত৷ সে জন্যই কংগ্রেসের ভালো ফল করার কৃতিত্বটা রাহুল গান্ধীকেই দিচ্ছেন তাঁরা৷ বামেদের সঙ্গে জোট করে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস যে আবার প্রধান বিরোধী দল হিসাবে উঠে এসেছে, তা রাহুলের কৌশলেই সম্ভব হয়েছে বলে তাঁদের দাবি৷

ওই কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘আপনারা কয়েক মাস আগে ভাবতে পেরেছিলেন, বামেদের সঙ্গে সমঝোতা হবে? হয়েছে৷ তেমনই দেখুন না, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কী হয়৷’ তখনও কি বামেদের সঙ্গেই যাবে কংগ্রেস? না কি অন্য চমক থাকবে? সে কথা এত আগে থেকে ভাঙতে রাজি নন কংগ্রেস নেতারা৷ তাঁদের বক্তব্য, ২০১৯-এর ভোটে কংগ্রেসের আসন বাড়াতে হবে৷ বিজেপির কমাতে হবে৷ সে জন্য যে কৌশল নেওয়া দরকার, দল তাই নেবে৷ সি পি জোশীও ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, এ বার বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছিল৷ সেটাও হয়েছিল নিচুতলার কর্মীদের চাপেই৷ এটা কোনও ভাবেই জোট নয়৷ রাজ্য নেতাদের কথা রাহুল গান্ধী মেনে নিয়েছিলেন৷ পরে কী হবে, সেটা পরে দেখা যাবে৷ এখনও অনেক সময় রয়েছে৷ বামেদের সঙ্গে জোট করে, তাঁদের পিছনে ফেলে দিয়ে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার আনন্দটাই তাই আপাতত উপভোগ করছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল