অ্যাপশহর

সক্রিয় গেরুয়া শিবিরের বহু সংগঠন

ধর্মেও আছে, জিরাফে তো বটেই! এই যুক্তি মেনেই রাজ্যের আনাচে কানাচে নিজের প্রভাব বাড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির৷

EiSamay.Com 23 May 2017, 10:46 am
ঝিলম করঞ্জাই ও জয় সাহা
EiSamay.Com bjp is trying desperate to increase its influence in the whole of the state
সক্রিয় গেরুয়া শিবিরের বহু সংগঠন

ধর্মেও আছে, জিরাফে তো বটেই! এই যুক্তি মেনেই রাজ্যের আনাচে কানাচে নিজের প্রভাব বাড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির৷ তবে সব সময়ই বিজেপি বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নামে নয়৷ নিজেদের প্রভাবের ব্যাপ্তি বাড়াতে প্রবল ভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে গেরুয়া শিবিরের প্রায় ৩০টির বেশি গণসংগঠন৷ এ রাজ্যে হাজির৷ মানবাধিকার থেকে নতুন লেখকদের সম্মেলন , বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যচর্চা থেকে মহিলাদের অধিকার-নাগরিকের জীবন যাপনে যে যে ক্ষেত্রে সামাজিক সাহায্য লাগে , সেই সব ক্ষেত্রগুলিতেই গত কয়েক মাসে সক্রিয় হয়েছে গেরুয়া শিবির৷ পুরোনো , গতিহীন , লজ্ঝড়ে সংগঠনগুলিতে নব জীবন দানের পাশাপাশি অনেক ধরনের নতুন সংগঠন তৈরি করেও প্রভাবের জাল বিস্তার করতে চাইছে সঙ্ঘ পরিবার৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে , এ যেন ঠিক বামেদের গণসংগঠনের ছক৷ যেখানে প্রকাশ্যে কোনও রাজনীতি থাকবে না ঠিকই , কিন্ত্ত পরিষেবার নেপথ্যে অবশ্যই থাকবে নিজেদের মতামতকে ছড়িয়ে দেওয়ার , সমর্থক বানানোর জোরালো প্রচেষ্টা৷ বামেদের গড়া এই সমিতি , সেই কমিটি , গানের দল , নাগরিক কমিটির আড়ালে ঠিক যে ভাবে থাকত ব্যালটে প্রভাব বাড়ানোর নকশা , অনেকের বক্তব্য , সঙ্ঘ পরিবারও সেই পথেরই পথিক৷ যদিও , সঙ্ঘ পরিবারের দাবি , কাউকে নকল করে নয় , পশ্চিমবঙ্গ -সহ সারা ভারতে গত ৯০ বছর ধরে নিঃশব্দে এ ভাবেই কাজ করে এসেছে সঙ্ঘ পরিবার৷ সম্প্রতি কলকাতায় এসে সঙ্ঘের সর্বভারতীয় মুখপাত্র মনমোহন বৈদ্য বলেন , ‘এটা ঠিক নয় যে সব সংগঠন সরাসরি সঙ্ঘের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে৷ ঘটনা হল , সঙ্ঘের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সংগঠন রয়েছে৷ কোথাও স্বনামধন্য বিজ্ঞানীরা রয়েছেন , কোথাও ডাক্তার -শিক্ষক -অধ্যাপক , কোথাও যুব সমাজ রয়েছে৷

সময়ের দাবি অনুযায়ী তা তৈরি হয়৷ ’রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা , তিন দশকের বাম শাসনে নিজেদের রাজনৈতিক মতামত চাপাতে গণসংগঠনের সামাজিক ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল৷ কিন্ত্ত এখন শক্তি খুইয়ে বামেরা ক্লান্ত৷ ফলে সেই সামাজিক -রাজনৈতিক শূন্যস্থান পূরণ করতে মরিয়া গেরুয়া শিবির উঠে -পড়ে লেগেছে৷ তাদেরও হাতিয়ার সেই পুরোনো গণসংগঠনের ছক৷ যে কথার রেশ পাওয়া গিয়েছিল চলতি বছর মার্চে কোয়েম্বাটুরে আরএসএসের ন্যাশনাল এগজিকিউটিভ কাউন্সিলে পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে নেওয়া তাদের বিশেষ সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই৷ গেরুয়া শিবির মনে করছে , নানা কারণে পশ্চিমবঙ্গের মতো উর্বর হিন্দুত্ববাদী জমিকে এত দিন মন দিয়ে চাষ না -করা হলেও , এ বার টার্গেট বাংলা৷

যেমন , মানবাধিকার রক্ষা মঞ্চের কথাই ধরা যাক৷ অতি সম্প্রতি তৈরি হলেও এখনই বেশ সক্রিয় এই সংগঠন৷ গত কয়েক মাস বসিরহাট , বারুইপুর , পুরুলিয়া ও বীরভূমে তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের বিরুদ্ধে থানায় থানায় এবং জেলাশাসকের কাছে প্রতিবাদের আন্দোলন চালাচ্ছে তারা৷ সংগঠনের বসিরহাট জেলার সভাপতি প্রণব বর বলেন , ‘মিনাখা , বাদুড়িয়া ও সন্দেশখালিতে তফসিলি জাতির প্রতিনিধিদের উপর নিয়মিত দুষ্কৃতী অত্যাচার হচ্ছে৷ সেই মানুষদের পথ দেখাতে এই সংগঠন তৈরি হয়েছে৷ ’ আবার রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র হাতে হাঁটায় পুলিশি ধরপাকড় এবং মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে নাগরিক অধিকার মঞ্চ নামে আর একটি নতুন সংগঠন জেলায় জেলায় খোলকরতাল নিয়ে বেরিয়ে থানা ঘেরাও করে৷

অন্য দিকে , টিএমসিপির দাপটে কলেজে কলেজে এখনও খাতা খোলার জায়গায় না -থাকলেও অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্যরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্টস ফর ডেভেলপমেন্ট নামে শিবির করছে মেদিনিপুর ও বীরভূমের বিভিন্ন গ্রামে৷ গ্রামের পরিস্থিতি ও গ্রামের চাহিদা কী সেটা বোঝাতেই এই কর্মসূচি৷ দেশের প্রকৃত উন্নয়নের মডেল কী হওয়া উচিত , কোন পথে ভারতীয় ঐতিহ্যকে বহাল রেখে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব-এ সব নিয়েও দেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের জড়ো করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে থিঙ্ক ইন্ডিয়া নামে একটি সংগঠন গত সন্তাহেই ভারতীয় ইতিহাস সংকলন সমিতির কলকাতায় বিশেষ সভা হয়েছে৷

উপেক্ষিত ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাইয়ে দেওয়াই এই নতুন করে জেগে ওঠা সংগঠনটির কাজ৷ একই ভাবে , ১৯৮২ সালে প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চা বর্তমানে সময়ে কতটা প্রাসঙ্গিক , তা বোঝাতে পথচলা শুরু করে সঙ্ঘ প্রভাবিত বিজ্ঞান ভারতী৷ এ রাজ্যে নিয়মিত বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠান করছে এই সংগঠন৷ ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা , যোগ , আয়ুর্বেদের মতো একাধিক বিষয়কে জনপ্রিয় করতে কাজ করতে রয়েছে আরোগ্য ভারতী৷ সংগঠনের দক্ষিণবঙ্গে প্রধান আধিকারিক বুদ্ধদেব ঘোষ বলেন , ‘কী ভাবে আয়ুর্বেদ , হোমিয়োপ্যাথি ও যোগ ব্যবহার করে স্বল্প খরচে মানুষ সুস্থ থাকতে পারে , সেটা প্রচার করাই আমাদের লক্ষ্য৷ ’

এ ছাড়া রয়েছে বিশ্বহিন্দু পরিষদের নানা গণ সংগঠনও৷ যেমন গোরক্ষা বিভাগ , গো অনুসন্ধান বিভাগের মতো শাখা সংগঠনগুলি রাজ্যে কত গোরু আছে , কী অবস্থায় রয়েছে , কত গোরু পাচার হচ্ছে-এসব নিয়ে সমীক্ষা শুরু করেছে৷ সোমবারই খড়গপুরে শেষ হয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একটা বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির৷ ভিএইচপির ক্ষেত্র সংগঠন সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন , ‘এখানে সব বয়সের মহিলা ও পুরুষ সদস্যদের সংগঠনের সব দিক শেখানো হয়েছে৷ আগামী দিনে আরও এ রকম শিবির হবে৷ ’ নতুন প্রজন্মের লেখকদের জাতীয়তাবাদী শিবিরে টানতে গত মাসে কলকাতায় ওয়ার্কশপ করেছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মতো একাধিক সংগঠন৷ সক্রিয় মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চও৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল