অ্যাপশহর

গাঁক গাঁক মাইকে বিপাকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা

সংক্রান্তিতে উড়ছে ঘুড়ি, পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মুখপোড়ার দল আকাশে রং ছড়িয়ে উড়ছে। মাঝে মধ্যে ভো কাট্টার সেই কালোত্তীর্ণ শব্দ। উৎসবের পার্বণে আরও একটা সংখ্যা। ফলে আনন্দ দেদার। কিন্তু এই গগনভেদী আওয়াজে পড়াশোনা কার্যত ডকে উঠেছে বর্ধমান শহর ও আশপাশের প্রায় ৩৯ হাজার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। দোরগোড়ায় পরীক্ষা, হাতে আর ক'টা দিন। সেখানে কানের সামনে হঠাৎ উজিয়ে ওঠা আনন্দে পড়া শিকেয়।

EiSamay 16 Jan 2019, 12:43 pm
এই সময়, বর্ধমান: সংক্রান্তিতে উড়ছে ঘুড়ি, পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মুখপোড়ার দল আকাশে রং ছড়িয়ে উড়ছে। মাঝে মধ্যে ভো কাট্টার সেই কালোত্তীর্ণ শব্দ। উৎসবের পার্বণে আরও একটা সংখ্যা। ফলে আনন্দ দেদার।
EiSamay.Com Capture


তবে সাদা উৎসবে কি মন ভরে? তাই ঘুড়ি ওড়ানোয় দোসর হয়েছে মাইকের চোঙা। প্রতি বাড়ির ছাদে বাঁধা মাইক। তাতে দিনভর তীব্রস্বরে গান বাজছে। আর ঘুড়ি কেটে গেলে তো কথাই নেই। গলার আওয়াজে ভরসা না রেখে একেবারে মাইকে আকাশ কাঁপিয়ে বেজে উঠছে ভো-কাট্টা। উৎসব জমজমাট।

কিন্তু এই গগনভেদী আওয়াজে পড়াশোনা কার্যত ডকে উঠেছে বর্ধমান শহর ও আশপাশের প্রায় ৩৯ হাজার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। দোরগোড়ায় পরীক্ষা, হাতে আর ক'টা দিন। সেখানে কানের সামনে হঠাৎ উজিয়ে ওঠা আনন্দে পড়া শিকেয়।

প্রতি বছরই শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকায় মাধ্যমিক পরীক্ষার এক মাস আগে প্রকাশ্যে মাইক বাজানোয় নিষেধাজ্ঞার কথা স্পষ্ট বলা হয়। একই নিয়ম থাকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়েও। এমনিতে প্রকাশ্য সভা সমিতিতে মাইক বাজানোর ক্ষেত্রে মহকুমাশাসকের অনুমতি নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট থানা ওই অনুমতির কপি দেখে পরবর্তী অনুমতি দেয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষেত্রে শহরের ছাদে মাইকের চোঙ বসানোর কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।

আপাতত বর্ধমান থানায় ফোন করে বহু পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু থানা থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। অনেকে ভয়ে প্রতিবাদও করতে পারেননি। ঘরের সব দরজা-জানলা বন্ধ রেখেও শব্দ দৈত্যের তাণ্ডব ঠেকাতে পারেনি এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজা মণ্ডল। নীলপুর এলাকার বাসিন্দা রাজা বলে, 'সোমবার রাত থেকেই মাইকের শব্দে ঘুমোতে পারছি না, পড়াশোনা তো দূরের কথা। পুলিশের উচিত, আমাদের কথা ভেবে ব্যবস্থা নেওয়ার।' বর্ধমানের জেবি মিত্র রোডে মিষ্টির দোকানের মালিক রমেশ ঘোষ বলেন, 'সর্বত্র প্রচুর মাইক বাজছে। এক হাত দূরত্বে পাঁচ-ছ'টা করে মাইকে গান বাজছে। হাসপাতালও কাছেই। পুলিশ কি পারত না এই অসভ্যতা থামাতে? সবই পুলিশে অভিযোগ করলে তবেই হবে? নিজে থেকে কি কিছুই করবে না?' মিঠাপুকুরের বাসিন্দা অশোক দত্ত বলেন, 'আমার ছেলে ও মেয়ে এ বার দু'জনেই মাধ্যমিক দেবে। আমার বাড়ির তিন দিকে কম করেও গোটা ১৫ মাইকের চোঙ লাগিয়ে তারস্বরে চিৎকার চলছে। থানায় এসে ডিউটি অফিসারকে জানালাম। উনি বললেন, লিখিত না দিলে পুলিশ কিছু করবে না। আমি লিখিত দিলে আমার উপরে অত্যাচার হবে। ভয়েই চলে এলাম। বিনা অনুমতিতে মাইক ব্যবহারের জন্য কোনই ব্যবস্থাই কি পুলিশ নিতে পারে না?'

বর্ধমান সদরের মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু সরকারকে ফোন করা হলে উনি ফোন ধরেননি। পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রাথমিক ভাবে তিনিই বলতে পারেন। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কথায় মাধ্যমিক পরীক্ষা গুরুত্ব পায়নি। তিনি বলেন, 'মাধ্যমিক পরীক্ষা বলেই বন্ধ করতে হবে এমনটা নয়। এ ভাবে বিনা অনুমতিতে দিনে-রাতে কেন মাইক বাজবে, প্রশ্ন সেখানেই। আমি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

-আমার ছেলে ও মেয়ে এ বার দু'জনেই মাধ্যমিক দেবে। আমার বাড়ির তিন দিকে কম করেও গোটা ১৫ মাইকের চোঙ লাগিয়ে তারস্বরে চিৎকার চলছে। থানায় এসে ডিউটি অফিসারকে জানালাম। উনি বললেন, লিখিত না দিলে পুলিশ কিছু করবে না। আমি লিখিত দিলে আমার উপরে অত্যাচার হবে। ভয়েই চলে এলাম। বিনা অনুমতিতে মাইক ব্যবহারের জন্য কোনই ব্যবস্থাই কি পুলিশ নিতে পারে না-অশোক দত্ত

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল