অ্যাপশহর

আনলকে আনলিমিটেড ভিড় দেখল বর্ধমান শহর

সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়তে থাকায় টানা সাত দিন সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে হেঁটেছিল বর্ধমান। সেই মেয়াদ শেষ হতেই বৃহস্পতিবার আনলক হওয়ায় ভিড় উপচে পড়ল শহর বর্ধমানে।

EiSamay.Com 31 Jul 2020, 10:33 am
এই সময়, বর্ধমান: সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়তে থাকায় টানা সাত দিন লকডাউনের পথে হেঁটেছিল বর্ধমান। সেই মেয়াদ শেষে বৃহস্পতিবার আনলক হতেই ভিড় উপচে পড়ল শহর বর্ধমানে। শুধু শহরের মানুষ নন, গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারাও ভিড় করেন। কারণ মুদিখানা থেকে অন্যান্য সামগ্রী গ্রামীণ এলাকায় সরবরাহ করা হয় বর্ধমানের পাইকারি বাজার থেকে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এক সপ্তাহ পর দোকানপাট খোলায় জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। বাজারগুলিতে তীব্র ভিড় এবং রাস্তায় যানজটের চেনা চিত্র ফিরে আসায় লকডাইনের উদ্দেশ্য কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসীর একাংশ। তাঁদের মতে, মানুষ সচেতন হওয়ার পরিবর্তে এ ভাবে ভিড় করতে শুরু করলে সংক্রমণ কখনও ঠেকানো যাবে না। লকডাউনের শেষ দিন অর্থাৎ বুধবারও শহরে ১৭ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভিড় না করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরাও।
EiSamay.Com the city of burdwan saw the unlimited crowd after complete lockdown ends
ভিড় বর্ধমানে।


মানুষের রুটি-রুজি বজায় রেখে করোনা মোকাবিলায় সপ্তাহে দু'দিন লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। তবে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে টানা লকডাউনের পথে হেঁটেছে স্থানীয় প্রশাসন। বর্ধমানের ক্ষেত্রেও সাত দিনের লকডাউন শুরু হয়েছিল। দোকান বাজার বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি শহরের প্রবেশ পথে পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল। ফলে গত এক সপ্তাহে সে ভাবে কোথাও ভিড় দেখা যায়নি। কিন্তু বুধবার সেই মেয়াদ শেষ হতেই এদিন সকাল থেকে ভিড় উপচে পড়ে বাজারগুলিতে। স্টেশন বাজারে গিয়ে চক্ষু চড়ক গাছ হওয়ার জোগাড়। কোথায় সামাজিক দূরত্ব! উল্টে কার্যত একে অপরের ঘাড়ে উঠে সব্জি কিনতে দেখা যায়। আবার অগ্নিমূল্যের বাজার দরে কোথাও একটু কম দামে জিনিস পেলে দু'জনের মধ্যে টানাটানি থেকে ঝগড়া করতে দেখা গিয়েছে। বড়নীলপুরের মাছ বাজারের ছবিটা ছিল আরও ভয়াবহ। মাছের ছোট কাউন্টারের সামনে জনা কুড়ি লোক দাঁড়িয়ে। সবাই নিজের পছন্দের মাছ বেছে নিতে গিয়ে একে অপরের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন। দামোদরপল্লির বাসিন্দা আশিস সাহার সঙ্গে এক ব্যক্তির মাস্ক না পড়ে আসা নিয়ে অশান্তিও বাধে। আশিস বলেন, 'উনি মাছ কিনতে এসে কাশছেন। আমি সরে যেতে বললে উল্টে মেজাজ দেখাচ্ছেন। এখন এই পরিস্থিতি তাতেও লজ্জা নেই। এত প্রচার সত্ত্বেও মাস্ক পরে আসেননি। তাই বাধ্য হয়ে আমিই সরে এলাম।'

রানিগঞ্জ বাজারের এক প্রতিষ্ঠিত মুদিখানার দোকানে সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়েছে। দোকান মালিক একটা সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে দুপুর পর্যন্ত মাল বিক্রি বন্ধ করে দেন। মাঝখান্ডা থেকে বাজার করতে এসেছিলেন শেখ আমানুল্লা। তিনি বলেন, 'সকাল সাড়ে ১০টায় ব্যাগ আর ফর্দ দিয়ে দেড়টায় জিনিস পেলাম। এমন অবস্থা কোনও দিন হয়নি। আবার যদি বাজার বন্ধ হয়ে যায় এই ভয়ে পরবের আগে সবাই একসঙ্গে বেরিয়ে পড়েছেন।' রানিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সুরেশ সাউয়ের কটাক্ষ, 'দেখে মনে হচ্ছে এখনই বাজার থেকে সব শেষ হয়ে যাবে। যা পরিস্থিতি তাতে এখন যদি করোনার ভাইরাসও আসে, তাহলে তাকেও বলতে হবে, দাদা সরে দাঁড়ান আমি শরীরে ঢুকব। অবস্থাটা এমনই।' এত কিছুর পরেও যে মানুষ সচেতন নন তার প্রমাণ মিলেছে স্ত্রীকে নিয়ে বাজার করতে আসা শেখ সরিফুলের কথায়। দু'জনের মুখেই মাস্ক নেই। তাঁর যুক্তি, ''সবাই তো পরেছেন। আমি না পরলে তেমন ক্ষতি হবে না। এই গরমে মাস্ক পরে থাকা যায় নাকি। ওটা শীতকালে পড়ে। আমার করোনা হবে না।'

২১ জুলাই জেলায় ৫১ জন আক্রান্ত হওয়ার পরে ২২ তারিখ থেকে বর্ধমান পুর এলাকায় লকডাউন ঘোষণা হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক ও করোনা সংক্রান্ত জেলার নোডাল অফিসার রজত নন্দা বলেন, 'আমরা এই রিপোর্ট নিয়ে পর্যালোচনা করছি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকেও উনি আমাদের বিষয়টি দেখার কথা বলেছেন। বিশেষ করে কনটেনমেন্ট জোনের প্রতি নজর দেওয়ার কথাও বলেছেন। তবে সবার আগে নিজের স্বার্থে নিজেকে সচেতন হতেই হবে। না হলে করোনা মোকাবিলা সম্ভব নয়।' উল্লেখ্য শেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ৫৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল