অ্যাপশহর

হারিয়ে যাচ্ছে জামুড়িয়ার বহুরূপীর দল

দামোদরপুরে রয়েছে ২২ ঘর বহুরূপী পরিবার। ভিন্ রাজ্যের ভবঘুরে বেদ সম্প্রদায়ের এই মানুষেরা বেশ কয়েক পুরুষ আগে স্থায়ী আস্থানা গেড়েছিলেন দামোদরপুরে। স্থানীয়দের কাছে এরা ঘুলঘুলাইয়া বা পাকমারা নামেই পরিচিত।

EiSamay.Com 12 May 2019, 1:13 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ওঁদের কেউ সাজেন শিব, কেউ বা কালী। কারও রূপ কৃষ্ণের, কারও আবার ডাকাত সর্দারের সস্তার সাজ। এ ভাবেই বাংলার বহুরূপী শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে জামুড়িয়ার দামোদরপুরের ‘ছিনাথ বহুরূপী’র দল। প্রাচীন লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখলেও এই শিল্পীরা মর্যাদা পাননি। অনটন নিত্য সঙ্গী হলেও সরকারি সাহায্য পৌঁছয়নি তাঁদের কাছে।
EiSamay.Com bahurupi lost in the west bengal asansol jamuria
অভাবের সংসারে শিব সেজে হাজির এক বহুরূপী। আসানসোলে - গৌর শর্মা


দামোদরপুরে রয়েছে ২২ ঘর বহুরূপী পরিবার। ভিন্ রাজ্যের ভবঘুরে বেদ সম্প্রদায়ের এই মানুষেরা বেশ কয়েক পুরুষ আগে স্থায়ী আস্থানা গেড়েছিলেন দামোদরপুরে। স্থানীয়দের কাছে এরা ঘুলঘুলাইয়া বা পাকমারা নামেই পরিচিত। পূর্বে পাখি শিকার ও মধু সংগ্রহ এঁদের মূল জীবিকা ছিল। বেশ কয়েক পুরুষ আগে বহুরূপী শিল্পকে এঁরা মূল জীবিকা হিসাবে বেছে নেন । শিল্পাঞ্চলের গ্রাম ও সংলগ্ন শহর অঞ্চলে মানুষের মনোরঞ্জনে বহুরূপীদের কদর ছিল যথেষ্ট। দুর্গাপুজো, গাজন-সহ বাংলার পালা পার্বণে সং সাজার ডাক পেতেন এই বহুরূপীরা। কালের গতিতে এখন প্রায় ব্রাত্য দামোদরপুরের এই বহুরূপী সমাজ।

এই শিল্পীদের সঙ্গে কথা বললেই শোনা যায় তাঁদের করুণ কাহিনি। বাড়ির দাওয়ায় মুখে রং মেখে কাজে বেরোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাজু বেদ। তিনি বলেন, ‘বাপ-ঠাকুরদার পেশাটাকে কোনও মতে আগলে রেখেছি আমরা। শিল্পীর মর্যাদা ও স্বীকৃতি আমরা কোনও দিনই পাইনি। পাইনি কোনও সরকারি সাহায্য।’ শিবের জটা আর বাঘছাল পোশাকটি সযত্নে এখনও আগলে রেখেছেন মানিকচাঁদ বেদ। শিবের ত্রিশূলে মরচের দাগ পড়েছে। মানিকচাঁদের আক্ষেপ, ত্রিশূল রং করার পয়সা কই! বলেন, ‘নতুন পোশাকের দাম তিন-চার হাজার টাকা। কে দেবে আমাদের ওই টাকা।’ বহুরূপী রাজেন বেদের ভাষায়, ‘আমার বাবা রসময় বেদ দশ মাথার রাবণ সাজতেন। ছিটু বেদের বাবা রঞ্জিত কাকা পিঠে আটটা নকল হাত বেঁধে সাজতেন মা দুর্গা। পুরুলিয়া থেকে তাঁরা জরির পোশাক কিনে আনতেন। আমরা অবাক হয়ে বাবার সাজ দেখতাম। ভাবতাম বড় হয়ে আমরাও বহুরূপী সাজব।’

এখনকার প্রজন্ম আর এই স্বপ্ন দেখে না। শিল্পের কদর না থাকায় তরুণরা বহুরূপী সাজতে নারাজ। পাড়ার কল থেকে জল ভরছিলেন বিশু বেদ। আচমকাই তিনি ঢুকে পড়েন এই আলোচনায়। আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘বহুরূপী সেজে এখন আমরা ভিক্ষা বৃত্তি করি। মানুষ আমাদের ভিখারি ভেবেই ব্যবহার করে, শিল্পী হিসাবে নয়। সরকারি পরিচয়পত্র না থাকায় শহরের আবাসনগুলিতে আমরা খারাপ ব্যবহার পাই। সেখানকার আবাসিকরা আমাদের চোর বলে সন্দেহ করে।’ বীরভূমের বিষয়পুরের বহুরূপীদের সরকারি পরিচয়পত্র আছে, কিন্তু দামোদরপুরের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। বিশুর প্রশ্ন, ঢাকি থেকে ছৌ শিল্পী, বাউল থেকে রণপা নাচের শিল্পী, এঁরা সকলে সরকারি সাহায্য পেলে তাঁরা পাবেন না কেন?

দামোদরপুরের বহুরূপীদের বিষয়ে আক্ষেপ জানাচ্ছেন খোদ স্থানীয় বিধায়ক জাহানারা খাতুন। তিনি বলেন, ‘গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক থাকাকালীন বিধানসভায় বহুরূপীদের সরকারি সহায়তা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তার পর আর বিষয়টি এগোয়নি। এখন তো বিধানসভায় বিরোধীদের কিছু বলতেই দেওয়া হয় না।’ তবে কি কলো হিরের মাটি থেকে হারিয়ে যাবে বাংলার ঐতিহ্যের বহুরূপী দল, এ প্রশ্নের জবাব কারও কাছেই নেই!

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল