অ্যাপশহর

Asansol News: টুকু থাকল না, প্রথমে মা ও পরে বাবা চলে গেলেন মেয়েরই কাছে

Asansol-র সালানপুর ব্লকের জেমারি গ্রামে নিজের বাড়িতে রঞ্জন মণ্ডলের দেহ ঝুলতে দেখা গেল সিলিং ফ্যান থেকে। গলায় গামছার ফাঁস। দু'টোই আত্মহত্যার ঘটনা, বলছে পুলিশ- কন্যার শোকে দম্পতির আত্মহত্যা। রাজেশ্বরী ও রঞ্জনের একমাত্র সন্তান, ১৩ বছরের কন্যা টুকু মাস দেড়েক আগে উলুবেড়িয়ায় এক পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়। ওই নিদারুণ শোক থেকে বেরোতে পারেননি দম্পতি।

Produced byRupa Saha | Ei Samay 2 Aug 2022, 6:40 pm

হাইলাইটস

  • এভাবেও সব শেষ হয়, সব শেষ করা যায়!
  • শোকেদুঃখে দগ্ধ হয়ে শুধু ছারখার নয়, শেষ হয়ে গেল গোটা একটা পরিবার।
  • কিন্তু তার আগের দেড় মাসও কি তাঁরা বেঁচে ছিলেন?
EiSamay.Com Asansol News
বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
এভাবেও সব শেষ হয়, সব শেষ করা যায়!

প্রথমে স্ত্রী, তার পর স্বামী। রাজেশ্বরী মণ্ডলের (৩৭) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল গত শুক্রবার, ২৯ জুলাই হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। আর রবিবার রাতে আসানসোলের সালানপুর ব্লকের জেমারি গ্রামে নিজের বাড়িতে রঞ্জন মণ্ডলের (৩৮) দেহ ঝুলতে দেখা গেল সিলিং ফ্যান থেকে। গলায় গামছার ফাঁস। দু'টোই আত্মহত্যার ঘটনা, বলছে পুলিশ- কন্যার শোকে দম্পতির আত্মহত্যা। রাজেশ্বরী ও রঞ্জনের একমাত্র সন্তান, ১৩ বছরের কন্যা টুকু মাস দেড়েক আগে উলুবেড়িয়ায় এক পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়। ওই নিদারুণ শোক থেকে বেরোতে পারেননি দম্পতি। শেষমেশ এই পরিণতি।

পুলিশ জানাচ্ছে, রঞ্জনের একটি সুইসাইড নোট মিলেছে, যাতে লেখা- ''আমার স্ত্রী ও কন্যা ছাড়া আর বেঁচে কোনও লাভ নেই। বিশেষ করে, আমার মেয়ের কাছেই আমি চললাম।'' মোট ৪৫ দিন। শোকেদুঃখে দগ্ধ হয়ে শুধু ছারখার নয়, শেষ হয়ে গেল গোটা একটা পরিবার।

একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীছিলেন রঞ্জন। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার একটি হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন রাজেশ্বরী। বিয়ের আগে রঞ্জন ও রাজেশ্বরী ছিলেন কলেজের বন্ধু, তাঁরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন চিত্তরঞ্জন কলেজে। তিন দিনের মধ্যে দু'জনই নিজেদের শেষ করে দিলেন, আলাদা আলাদা ভাবে, আলাদা দিনে। কিন্তু তার আগের দেড় মাসও কি তাঁরা বেঁচে ছিলেন? ছিলেন তো অবশ্যই, তবে যে ভাবে ছিলেন, সেটাকে কি বাঁচা বলে!
Asansol News: পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজের পর উদ্ধার দেহ, চাঞ্চল্য সালানপুরে
এতে সন্দেহ নেই যে, 'আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু...তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।' আর সেই শান্তি, সেই আনন্দ, সেই অনন্ত চেষ্টা করেও খুঁজে না-পাওয়া গেলে? জুন মাসের সেই ভয়ঙ্কর দিনটায় উলুবেড়িয়ার কাছে একটি মন্দিরে রঞ্জন-রাজেশ্বরী-টুকু এবং তাঁদের দুই আত্মীয় দু'টি মোটর বাইকে করে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। জেমারিতে এ দিন রঞ্জনের কাকা স্বপন মণ্ডল জানাচ্ছেন, মন্দিরের কাছে একটি বাইকে বাসের ধাক্কায় মারা যায় ক্লাস সিক্সের ছাত্রী টুকু। এবং ওই পরিবারের এক রকম শেষ হওয়ার শুরু সে দিনই। বাড়ির লোকেরা জানাচ্ছেন, রাজেশ্বরী ও রঞ্জন প্রায়ই শ্মশানে গিয়ে বসে থাকতেন, যে শ্মশানে দাহ করা হয়েছিল ফুটফুটে টুকুকে। টুকুর মা-বাবা শ্মশানে নিয়ে যেতেন পোট্যাটো চিপ্‌স, চকোলেট-সহ টুকুর প্রিয় সব খাবার-দাবার। শ্মশান থেকে ফিরতে মন চাইত তা, তবু ফিরতে হতো তাঁদের এবং ফেরার সময়ে তাঁরা শ্মশানে ওই সব খাবার রেখে আসতেন। 'দুঃখ যদি না-পাবে তো দুঃখ তোমার ঘুচবে কবে? বিষকে বিষের দাহ দিয়ে দহন করে মারতে হবে।' কিন্তু কই, মারতে পারলেন না তো!

Asansol News: চলন্ত ট্রেনের মধ্যেই কন্যাসন্তান প্রসব, সুস্থ মা ও শিশু

পারিবারিক নিয়ম অনুযায়ী কিছু দিন আগে গয়ায় গিয়ে টুকুর পারলৌকিক কাজ করে আসেন তার বাবা রঞ্জন। আচারের সঙ্গ হিসেবে তাঁকে মাথা নেড়া করতে হয়। স্বামীকে ওই অবস্থায় দেখে আরও ভেঙে পড়েন রাজেশ্বরী। বাড়ির লোকজন জানাচ্ছেন, টুকুর মা বলতে থাকতেন, তাঁকেও এ বার টুকুর কাছে যেতে হবে। তার পরেই ২৯ জুলাই উলুবেড়িয়ার ঘটনা। এবং ওই ঘটনার পর রঞ্জনের বক্তব্য ছিল, 'আমি আমার মেয়ে, আমার স্ত্রীর কাছে চলে যাব।' বাড়ির লোকজন বোঝালেও যে কোনও লাভ হয়নি, সেটা বোঝা গেল জেমারিতে, রবিবার রাতে।

এর পরেও আছে। রঞ্জন মণ্ডলের বৃদ্ধা মা শুধু চোখের জল ফেলছেন, কথা বলার অবস্থায় নেই। তিনি আছেন, কিন্তু একেও কি বেঁচে থাকা বলে!
লেখকের সম্পর্কে জানুন
Rupa Saha

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল