অ্যাপশহর

সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভে কোপ

সুন্দরবনেই নির্বিচারে কাটা পড়ছে ম্যানগ্রোভ। প্রকৃতির রোষের মুখে পড়ার সব আয়োজনই সারা। অবৈধ ইটভাটা আর ভেড়ির জায়গা করে দিতেই বলি দেওয়া হচ্ছে ম্যানগ্রোভ।

EiSamay 12 Nov 2018, 12:51 pm
অভিজ্ঞান নস্কর, জয়নগর
EiSamay.Com 13


আয়লার ক্ষত এখনও শুকোয়নি। বঙ্গোপসাগরে নিম্মচাপের ভ্রূকুটি দেখলেই প্রমাদ গোনেন সুন্দরবনের মানুষ। অথচ সেই সুন্দরবনেই নির্বিচারে কাটা পড়ছে ম্যানগ্রোভ। প্রকৃতির রোষের মুখে পড়ার সব আয়োজনই সারা। অবৈধ ইটভাটা আর ভেড়ির জায়গা করে দিতেই বলি দেওয়া হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে, স্থানীয়দের একাংশ মেতে উঠেছেন নিধনযজ্ঞে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।সুন্দরবনের কুলতলি ব্লকের কুন্দখালি-গোদাবর গ্রাম পঞ্চায়েতের গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে পিয়ালী নদী। সেই নদীর চরকেই এখন পাখির চোখ করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আন্ধারিয়া গ্রামে চর বরাবর দুশো বিঘা জমিতে তিন প্রজাতির বাণী ও এক প্রজাতির ক্যাওড়া গাছ লাগিয়েছিল বারইপুর রেঞ্জের পিয়ালী বিটের বন দপ্তরের কর্মীরা। বছর বারো আগে লাগানো গাছগুলি আড়ে বহড়ে বেশ বেড়েছে। এক সপ্তাহ হল সেই বাদাবনে কুড়ুলের কোপ পড়তে শুরু করে দিয়েছে।

ভাটায় জল সরে গেলেই বাদাবন সাফাই চলছে। প্রশাসন নীরব। কিছু বলতে পারছেন না স্থানীয়রাও। প্রশ্ন উঠছে, পিয়ালী বিটের বনকর্মীরা বা কুলতলি থানার পুলিশ তবে কী করছে?কুলতলিতে বাদাবন ধ্বংস অবশ্য নতুন কিছু নয়। কুলতলি ব্লকের প্রাণকেন্দ্র জামতলায় নিমানিয়া নদীর চরের ম্যানগ্রোভ ইতিমধ্যেই সাফ হয়ে গিয়েছে। তখনও অনেকেই বন দপ্তর থেকে থানা, বিডিও থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত দৌড়েছিলেন। কাজ হয়নি কিছুই। চোখের সামনেই জঙ্গল সাফাই হয়ে গিয়েছিল। এরপর একে একে কুলতলি থানার সানকিজাহান, ডোঙাজোড়াতেও কয়েকশো বিঘে জমিতে ম্যানগ্রোভ কাটা পড়েছে। কিন্তু কোনও ধরপাকড় না-হওয়ায় বেপরোয়া ও সাহসী হয়ে উঠেছে গাছ কাটার কারবারিরা। যেখানে যেখানে গাছ কাটা পড়েছে, সবই নদী লাগোয়া সেচ দপ্তরের জমি। ম্যানগ্রোভ কেটে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বানানো হয়েছে মাছ, চিংড়ি চাষের ভেড়ি। আন্ধারিয়াতেও ভেড়ি তৈরি লক্ষ্য। তাই শুরু হয়েছে এই নিধনযজ্ঞ। ভাটার সময় জল সরে গেলেই লোকজন বাদাবনে নেমে পড়ে। শুরু হয় গাছ কাটা। এভাবে সাফা করা হয় গোটা বাদাবন। তারপর নদীর দিকে মাটির বাঁধ দিয়ে চরটিকে ঘিরে ফেলা হয়। এরপর কোটালের সময় জল উপচে এ পারে চলে এলেই মাছ চাষ শুরু হয়ে যায়। তাই এত উদ্যোগ।

ভেড়ি ছাড়াও আশেপাশে গুচ্ছ বেআইনি ইটভাটা তৈরি হয়েছে। তা-ও ওই জঙ্গল কেটেই। সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে কাজ করা জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, ‘ম্যানগ্রোভ না-থাকলে একদিকে যেমন বাঘ বাঁচবে না, তেমনই সুন্দরবন না-থাকলে কলকাতার অস্ত্বিত্বও সঙ্কটের মুখে পড়ে যাবে। সুতরাং ম্যানগ্রোভ রক্ষা করতেই হবে।’ কুলতলির প্রাক্তন বিধায়ক তথা মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা জয়কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘কুলতলি-সহ গোটা সুন্দরবন জুড়ে ম্যানগ্রোভ নিধন চলছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বন দপ্তর হাত গুটিয়ে বসে আছে। আমজনতাকে আরও সজাগ হতে হবে।’ ম্যানগ্রোভ কাটা প্রসঙ্গে জেলার বিভাগীয় বনাধিকারিক সন্তোষা জিআর বলেন, ‘আমার কাছে গাছ কাটার কোনও খবর আসেনি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করব।’২০০৯-এর ২৫ মে ভয়ঙ্কর আয়লার দাপটে মাটির নদীবাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যেতে দেখেছিলেন এখানকার মানুষ। এরপর ভিটেমাটি ছেড়ে পেটের তাগিদে হাজার হাজার বাসিন্দা শুধু রাজ্য নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। আবার তেমন দিন ফিরে আসুক, চান না সুন্দরবনের মানুষ। তাঁদের একটাই আকুতি। বেআইনি কারবারি ও টাকার লোভে অসৎ কাজে নাম লেখানো কিছু স্থানীয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক বন দপ্তর।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল