অমিত চক্রবর্তী পরিবেশ রক্ষায় ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে হাইকোর্টের এক নজিরবিহীন রায়ে প্রশ্নের মুখে সুন্দরবনের কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ ও রিজার্ভ ফরেস্ট এখন থেকে শুধুমাত্র সংরক্ষণ, তদারকি এবং নিরাপত্তার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনওভাবে ব্যবহার করা যাবে না। ফলে সুন্দরবনের মানুষের প্রতিদিনের রুটিরুজির জন্য এই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল বলে মনে করছেন বন দপ্তরেরই আধিকারিকরা।
সুন্দরবনে সরকারি জমিতে বেআইনি ভাবে ভেড়ি তৈরি এবং ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়ায় সাম্প্রতিক মামলায় আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক একটি রিপোর্ট দেন। সেই রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেই প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, রিপোর্ট এবং নথি দেখে প্রবল উদ্বিগ্ন আদালত।
ওই রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীবজগতের উপরে যথেচ্ছ হামলা হচ্ছে। বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের ৪০০০ বর্গ কিলোমিটার, টাইগার রিজার্ভের ২৫০০ বর্গ কিলোমিটার ও রিজার্ভ ফরেস্টের ৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, গোটা এলাকাতেই প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। যত সম্ভব কম প্রয়োজনে সামান্য সংখ্যক লোককে কাজের জন্য ঢোকার অনুমতি দেবে বন দপ্তর। তবে শুধু বন দপ্তরের এলাকাই নয়, সুন্দরবনে সেচ দপ্তর ছাড়াও অন্য কোনও দপ্তরেরও যদি জমি থাকে, তারও বেআইনি ব্যবহার যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, কোনওভাবে যাতে সুন্দরবনের ওই তিনটি ভাগে মানুষের যাতায়াত না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। যদিও ঘটনাচক্রে তিন এলাকাতেই বহু গ্রাম, জনবসতি রয়েছে।
আপাতত আগামী ছ'মাসের জন্য এই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ চলবে। তার পরে অবস্থা বিবেচনা করে সংযোজন বা সংশোধন করার ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে। হাইকোর্টের এই নির্দেশকে হাতিয়ার করে এই কাজের জন্য দুই ২৪ পরগনার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে। যদি কেউ ওই এলাকায় ঢোকেন, সেক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্য বনপালের দায়িত্বে তা করতে হবে। হাইকোর্টের এই নির্দেশ যথাযথ কার্যকর করার জন্য রাজ্য সরকারকে ওয়েবসাইটে নির্দেশিকা প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে আদালতের এই রায় অনুযায়ী রাজ্যের নির্দেশ স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। আগামী ২৫ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি করবে আদালত।
সুন্দরবনের বাসিন্দাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে এই জল জঙ্গলের উপরে। মাছ ধরা, চিংড়ির মিন সংগ্রহ, মধু সংগ্রহ, কাঠ সংগ্রহ, কাঁকড়া ধরার মতো কাজে যুক্ত সুন্দরবনের কয়েক লক্ষ মানুষ। তাঁরা বন দপ্তরের অনুমতি নিয়ে গভীর জঙ্গলেও বাঘের ভয় উপেক্ষা করে পেটের টানে যান। এর সঙ্গেই পর্যটকদের আগমনে একটা বিরাট রোজগার হয় সুন্দরবনের মানুষের। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে বাস্তবে মানুষের রুটি রুজিতেই শুধু টান পড়বে না, সঙ্গে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা। কারণ এখান থেকে ধরা চিংড়ির মিন এবং কাঁকড়া যেমন বিদেশে রপ্তানি হয়, একইসঙ্গে সুন্দরবনের শুকনো গাছ কেটে তা বিক্রি হয়। আদালতের এই রায় যদি কার্যকর করতে হয়, সেক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল বিনোদ কুমার যাদবের বক্তব্য, 'এমনিতেই কোর এরিয়ায় আমরা কাউকে ঢুকতে দিইনা। কিন্তু অন্য অঞ্চলগুলিতে অনুমতি নিয়ে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে যান। আদালতের এই রায় নিয়ে রাজ্য সরকার তার অবস্থান ঠিক করবে।' প্রাক্তন সুন্দরবন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, 'আদালত যে উদ্যোগ নিয়েছে তা যথেষ্ট ইতিবাচক। কিন্তু সুন্দরবনের দ্বীপে ৪৬ লক্ষ মানুষ বসবাস করেন। তাদের অধিকাংশেরই জীবন-জীবিকা সুন্দরবনের জঙ্গল আর নদীতে। তাই মাছ ধরা, মধু সংগ্রহ করতে না পারলে অর্থনৈতিক ভাবে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।'
বিদায়ী সুন্দরবন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলছেন, 'কোর এলাকা এবং টাইগার রিজার্ভে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র বাফার জোনে মানুষ মাছ ধরার জন্য যায়। এখন আদালত যদি নির্দেশ দেয়, সে ক্ষেত্রে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাপারে ভাবতে হবে। যদিও আগের তুলনায় এখন সুন্দরবনের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বহু মানুষ বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন।'
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।no
সুন্দরবনে সরকারি জমিতে বেআইনি ভাবে ভেড়ি তৈরি এবং ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়ায় সাম্প্রতিক মামলায় আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক একটি রিপোর্ট দেন। সেই রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেই প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, রিপোর্ট এবং নথি দেখে প্রবল উদ্বিগ্ন আদালত।
ওই রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীবজগতের উপরে যথেচ্ছ হামলা হচ্ছে। বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের ৪০০০ বর্গ কিলোমিটার, টাইগার রিজার্ভের ২৫০০ বর্গ কিলোমিটার ও রিজার্ভ ফরেস্টের ৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, গোটা এলাকাতেই প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। যত সম্ভব কম প্রয়োজনে সামান্য সংখ্যক লোককে কাজের জন্য ঢোকার অনুমতি দেবে বন দপ্তর। তবে শুধু বন দপ্তরের এলাকাই নয়, সুন্দরবনে সেচ দপ্তর ছাড়াও অন্য কোনও দপ্তরেরও যদি জমি থাকে, তারও বেআইনি ব্যবহার যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, কোনওভাবে যাতে সুন্দরবনের ওই তিনটি ভাগে মানুষের যাতায়াত না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। যদিও ঘটনাচক্রে তিন এলাকাতেই বহু গ্রাম, জনবসতি রয়েছে।
আপাতত আগামী ছ'মাসের জন্য এই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ চলবে। তার পরে অবস্থা বিবেচনা করে সংযোজন বা সংশোধন করার ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে। হাইকোর্টের এই নির্দেশকে হাতিয়ার করে এই কাজের জন্য দুই ২৪ পরগনার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে। যদি কেউ ওই এলাকায় ঢোকেন, সেক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্য বনপালের দায়িত্বে তা করতে হবে। হাইকোর্টের এই নির্দেশ যথাযথ কার্যকর করার জন্য রাজ্য সরকারকে ওয়েবসাইটে নির্দেশিকা প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে আদালতের এই রায় অনুযায়ী রাজ্যের নির্দেশ স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। আগামী ২৫ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানি করবে আদালত।
সুন্দরবনের বাসিন্দাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে এই জল জঙ্গলের উপরে। মাছ ধরা, চিংড়ির মিন সংগ্রহ, মধু সংগ্রহ, কাঠ সংগ্রহ, কাঁকড়া ধরার মতো কাজে যুক্ত সুন্দরবনের কয়েক লক্ষ মানুষ। তাঁরা বন দপ্তরের অনুমতি নিয়ে গভীর জঙ্গলেও বাঘের ভয় উপেক্ষা করে পেটের টানে যান। এর সঙ্গেই পর্যটকদের আগমনে একটা বিরাট রোজগার হয় সুন্দরবনের মানুষের। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে বাস্তবে মানুষের রুটি রুজিতেই শুধু টান পড়বে না, সঙ্গে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা। কারণ এখান থেকে ধরা চিংড়ির মিন এবং কাঁকড়া যেমন বিদেশে রপ্তানি হয়, একইসঙ্গে সুন্দরবনের শুকনো গাছ কেটে তা বিক্রি হয়। আদালতের এই রায় যদি কার্যকর করতে হয়, সেক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল বিনোদ কুমার যাদবের বক্তব্য, 'এমনিতেই কোর এরিয়ায় আমরা কাউকে ঢুকতে দিইনা। কিন্তু অন্য অঞ্চলগুলিতে অনুমতি নিয়ে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে যান। আদালতের এই রায় নিয়ে রাজ্য সরকার তার অবস্থান ঠিক করবে।' প্রাক্তন সুন্দরবন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, 'আদালত যে উদ্যোগ নিয়েছে তা যথেষ্ট ইতিবাচক। কিন্তু সুন্দরবনের দ্বীপে ৪৬ লক্ষ মানুষ বসবাস করেন। তাদের অধিকাংশেরই জীবন-জীবিকা সুন্দরবনের জঙ্গল আর নদীতে। তাই মাছ ধরা, মধু সংগ্রহ করতে না পারলে অর্থনৈতিক ভাবে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।'
বিদায়ী সুন্দরবন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলছেন, 'কোর এলাকা এবং টাইগার রিজার্ভে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র বাফার জোনে মানুষ মাছ ধরার জন্য যায়। এখন আদালত যদি নির্দেশ দেয়, সে ক্ষেত্রে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাপারে ভাবতে হবে। যদিও আগের তুলনায় এখন সুন্দরবনের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বহু মানুষ বিকল্প পেশা বেছে নিয়েছেন।'
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।no