অ্যাপশহর

ঘরে চিকিৎসকের দেহ, পাঁচদিন আগলে মেয়ে

প্রতিবেশীরা সপ্তাহ খানেক আগে বৃদ্ধকে বাজারের ব্যাগ হাতে দোতলা থেকে নামতে দেখেছিলেন। তারপর থেকে আর দেখা যায়নি তাঁকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পচাগলা দেহ উদ্ধার হল এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসকের।

EiSamay.Com 12 Jun 2020, 1:18 pm
এই সময়: প্রতিবেশীরা সপ্তাহ খানেক আগে বৃদ্ধকে বাজারের ব্যাগ হাতে দোতলা থেকে নামতে দেখেছিলেন। তারপর থেকে আর দেখা যায়নি তাঁকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পচাগলা দেহ উদ্ধার হল এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসকের। হাওড়ার জগাছা থানার অন্তর্গত ইছাপুর শিয়ালডাঙা এলাকায় মৃত ওই চিকিৎসকের নাম অমলকৃষ্ণ মান্না (৭০)। পুলিশের অনুমান, দিন পাঁচেক আগে ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হলেও তা বুঝতে পারেননি তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন কন্যা। বাবার মৃতদেহের সঙ্গেই গত কয়েকদিন একটি ফ্ল্যাটে বাস করছিলেন ওই তরুণী।
EiSamay.Com Daughter protects fathers body who was a doctor for five days
ইনসেটে মেয়ে।


শিয়ালডাঙার নামকরা চোখের ডাক্তার অমলকৃষ্ণ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে বসতেন। তাঁর স্ত্রী মারা যান কয়েক বছর আগে। তার পর থেকে তিনি মেয়েকে নিয়ে একাই একটি ফ্ল্যাটের দোতলায় ভাড়া থাকতেন। বাড়ির মালিক উত্তম দে জানান, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে তাঁরা এই বাড়িতে ভাড়ায় আছেন। মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার পর আর পড়াশোনা করেননি। মা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীনতাও আরও বাড়তে থাকে।’ বাবার মৃত্যুর পর ওই তরুণী নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ দিন কোনও কথা বলতে পারেননি তিনি। শুধু বাবার মৃতদেহ ঘর থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন অসুস্থ তরুণী।

বাড়িওয়ালা জানান, ওই চিকিৎসককে গত কয়েকদিন ধরে নীচে নামতে দেখা যায়নি। তবে লকডাউনে অনেকেই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না, তাই তাঁরাও বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ করেননি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফ্ল্যাট থেকে তীব্ব্র দুর্গন্ধ বেরোতে দেখে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। কী ভাবে মৃত্যু হল ওই চিকিৎসকের তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। করোনা সংক্রমণে মৃত্যু কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন ওই চিকিৎসক। তিনি। অসুস্থতার কারণে ওই চিকিৎসক বাইরে খাবারদাবার কেনাকাটা করতেও বেশি যেতে পারতেন না। ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে জগাছা থানার পুলিশ। এক প্রতিবেশী মুন্না প্রসাদ বলেন, ‘ডাক্তারবাবু এখানে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। বছর পাঁচেক আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই একটু চুপচাপ হয়ে যান। লকডাউন চলাকালীনও বাজার করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তিনি অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু করোনার জন্যে কেউ কারও বাড়িও যাতাযাত করত না। ডাক্তারবাবু নিজে থেকেও কাউকে কিছু বলতেন না।’ সদাশয় চিকিৎসকের মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অমলকৃষ্ণর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাঁর প্রতিবেশী ও পুরোনো রোগীরা বাড়ির সামনে ভিড় করেন। কিন্তু কোনও আত্মীয় পরিজনকে দেখা যায়নি। পরিবারটির কোনও আত্মীয় পরিজন ছিল কি না তাও কেউ বলতে পারেনি।

পরের খবর