অ্যাপশহর

দারিদ্রের বিমে স্বপ্ন ফেরি ত্রিপুরার নতুন 'দীপা' অস্মিতার

কে এই অস্মিতা? আমজনতার নামটা জানার কথা নয়৷ দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছেও যথেষ্ট অপরিচিত৷

EiSamay.Com 25 Aug 2016, 11:03 am
রূপক বসু, আগরতলা
EiSamay.Com tripuras new deepa asmita is struggling with poverty
দারিদ্রের বিমে স্বপ্ন ফেরি ত্রিপুরার নতুন 'দীপা' অস্মিতার


ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা বোধহয় ঢের সোজা! কিন্তু এ তো লাখ টাকার স্বপ্ন নয়৷ এ হল, ১২৫ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন৷ যা দেখাতে শুরু করছে অস্মিতা পাল৷

কে এই অস্মিতা? আমজনতার নামটা জানার কথা নয়৷ দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছেও যথেষ্ট অপরিচিত৷ কিন্ত্ত জিমন্যাস্টিক্সের শহর আগরতলায় এসে বারবার এ নাম কানে এসেছে৷ দীপার কোচ দ্রোণাচার্য বিশ্বেশ্বর নন্দী পর্যন্ত দেখছেন টোকিও অলিম্পিকে অস্মিতার পদক জয়ের সম্ভবনা৷ ত্রিপুরার মুখমন্ত্রী মানিক সরকারের মুখেও শোনা গিয়েছে , বছর ষোলোর কিশোরীর নাম৷

স্বপ্ন সত্যি হবে কি না , উত্তর দেবে সময়৷ তবে অস্মিতা যে ভাবে এত দূর এসেছে , সেটা স্বপ্নের থেকে কোনও অংশে কম নয়৷ বাবা রাজমিস্ত্রি , মা পরিচারিকা৷ জীবনের এই এবড়ো খেবড়ো ফ্লোর থেকেই ‘দীপাদি ’-র উত্তরসূরি হয়ে ওঠার ভল্ট দিতে চাইছে অস্মিতা৷

আগরতলায় বিকেলে বিবেকানন্দ ব্যায়ামাগারে বসে অস্মিতার মুখ দিয়ে যেন কথা সরতে চায় না৷ এতটাই লাজুক৷ ফ্লোরে নামলেই অন্য মেয়ে৷

রিওতে ‘দীপাদি’-র হার মানতে পারে না৷ মাথা নামিয়ে বললেও গলার স্বরে ধরা পড়ে জেদ , ‘২০২০ সালে টোকিও থেকে মেডেল নিয়ে আসার চেষ্টা করব৷ ’ সিমোনে বাইলস নিয়ে অগাধ শ্রদ্ধা থাকলেও ভয় নেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর৷ ‘ওকে হারানোর চেষ্টা তো করবই ’, লাজুক মেয়ের প্রত্যয়ী প্রতিশ্রীতি৷

অবশ্য স্বপ্ন আর বাস্তবে তফাত্ প্রচুর৷ দীপার মতো অস্মিতারও প্রিয় প্রোদুনাভা ভল্ট৷ কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী অলিম্পিকে ব্যস্ত থাকায় তাঁর স্ত্রী সোমা নন্দীর কাছে আপাতত প্র্যাক্টিস চলছে অস্মিতার৷

সেই সোমার গলায় আক্ষেপ , ‘দীপার মতোই দশা অস্মিতার৷ এখানে আর প্রোদুনোভা ভল্ট দেবে কী করে ?’ তবে সুযোগ পেলে অস্মিতা যে বিশ্বজয় করতে পারে , জানাতে ভুললেন না৷ ত্রিপুরায় ওপেন টু অল এক মিটে বড় দিদিদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নজর কেড়েছিল তখনকার সাব জুনিয়রের অস্মিতা৷ এখন ভারতীয় ক্যাম্পে শিকে ছিঁড়েছে৷ দিল্লি সাইয়ে প্র্যাক্টিস করে দীপার সঙ্গে৷ তুরস্কে স্কুল গেমস গিয়েছিল৷ পদক এনেছে জাতীয় স্তরেও৷ তবে জাতীয় জিমন্যাস্টিক্স সংস্থার বিভাজনে কেমন যেন দিশেহারা ‘নতুন দীপা ’৷ অস্মিতার গলায় অসহায়তা , ‘আমি জানি না , সামনে কী মিট আছে৷ ’ মিট না জানলেও অস্মিতা জানে তাকে এখন শুধু প্র্যাক্টিস করে যেতে হবে৷ করছেও৷ শুধু ভল্ট নয় , অলরাউন্ড জিমন্যাস্টিক্সে সাফল্য পাওয়াই লক্ষ্য৷ ভল্টের পর সবচেয়ে পছন্দের ইভেন্ট ব্যালান্সিং বিম৷

সরু বিমের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে অসুবিধে হয় না৷ আর হবেই বা কী করে , জীবনের চলার সরু পথই যে প্রেরণা৷ গরীব পরিবার ডায়েট চার্ট করে খাওয়াতে পারে না৷ তা হলে হঠাত্ জিমন্যাস্টিক্সে দেওয়া কেন ? বাবা অরুণের মুখে শোনা গেল, ‘আমার মেজ মেয়ে জিমন্যাস্টিক্সে যেত৷ বিকেলে কী করবে ঘরে বসে , সে জন্য অস্মিতাকেও পাঠিয়ে দিয়েছিলাম৷ ’সেই শুরু ছোট্ট অস্মিতার৷ সেই ছোট মেয়ের মধ্যেই আজ বড় স্বপ্ন দেখছে ত্রিপুরা৷ কাল হয়তো দেখবে গোটা দেশ৷

পরের খবর

Sportsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল