পার্থ দত্ত
মেরুদণ্ডে টিউমারটা এতটাই বাড়াবাড়ি জায়গায় পৌঁছেছিল যে দ্রুত অপারেশন না করলে জীবন সংশয় হতে পারত বছর সাতাশের তরুণীর। অপারেশন করালে তিনি বেঁচে যাবেন, কিন্তু বাকি জীবনটা তাঁকে কাটাতে হবে হুইলচেয়ারে। এমন চরম সঙ্কটে হরিয়ানার সোনিপতের দীপা মালিকের পাশে ছিলেন না স্বামী বিক্রম সিংও। সেনা অফিসার বিক্রম তখন কার্গিল যুদ্ধে লড়ছেন দেশের জন্য। এই অবস্থায় পুনের সেনা হাসপাতালে দীপা টিউমার অপারেশন করান। আড়াই মাস পর বাড়ি ফেরেন হুইল চেয়ারে।
শরীরের তিন ভাগের দু'ভাগ অসাড় হয়ে থাকা সেই দীপার হাত ধরেই ভারতীয় প্যারালিম্পিক্স এ বার বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে মাথা তুলে দাঁড়াল। ২০১৯ সাল থেকে দীপা ভারতীয় প্যারালিম্পিক কমিটির চেয়ারপার্সন। রবিবার শেষ হওয়া প্যারালিম্পিক্সে ১৯ পদক নিয়ে পদক তালিকায় ভারত ২৪ নম্বরে। ভারতের এই সাফল্যকে কেউ বিস্ময়জনক, কেউ অভূতপূর্ব, কেউ অত্যাশ্চর্য আখ্যা দিচ্ছেন।
আর তিনি কী বলছেন? রবিবার সন্ধেয় যখন ফোনে দীপাকে টোকিওয় ফোনে ধরা হল, তখন তিনি গেমসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত। তারই ফাঁকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন রিও প্যারালিম্পিক্সে রুপো জেতা এই শট পাট থ্রোয়ার।
এতগুলো পদক জেতার স্বপ্ন কী দেখেছিলেন? দীপার জবাব, 'আমার জীবনটা এতটাই কঠিন জমির উপর দিয়ে পেরোনো যে আমি স্বপ্ন দেখিনি। বাস্তবের অঙ্ক কষে এগোই। ১৯ নয়, টোকিওয় আমার অঙ্ক ছিল ২১ পদকের। আমি সেটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজীকেও বলেছিলাম। ২১ না হলেও ২০ পদক তো এ বার হয়েই গিয়েছিল। যদি না ডিসকাসে বিনোদ কুমারের পদকটা বাতিল হত।' সঙ্গে জোড়েন, 'তবে ১৯ পদক জেতাটাও বিরাট ব্যাপার। রিওতে ছিল চার পদক। অর্থাৎ ভারতীয় প্যারালিম্পিক্স সে বার হাঁটি হাঁটি পায়ে এগোতে শিখেছিল। এ বার পাঁচ বছরের মধ্যেই তারা পদক পেল নাইন্টিন। অর্থাৎ টিন পেরিয়ে তারা সাবালক হল। আগামী দিনে প্যারা মিটে ভারতের উপর প্রত্যাশার চাপ বাড়ল। অর্থাৎ সাবালক হয়ে দায়িত্বও বাড়ল অনেকটা।'
ভারতের এই সাফল্যে দীপার ভূমিকা কতটা ছিল? প্যারালিম্পিক্সের লোকজন বলছেন, 'দীপা ম্যাম প্যারা কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর দু'বছর দিনরাত এক করে খেটেছেন। খেলোয়াড়, কোচেদের পাশে থাকার সঙ্গে সরকারি সুযোগ সুবিধে এনে দেওয়ার জন্য লড়ে গিয়েছেন।' এ নিয়ে দীপার মন্তব্য, 'ভারতে এখন বিভিন্ন খেলার প্রশাসনে খেলোয়াড়রা আসছেন। এটা দারুণ ব্যাপার। আমিও খেলোয়াড় হিসেবেই এই দায়িত্বে এসেছি। আমি প্যারা অ্যাথলিটদের সমস্যাটা ভীষণ ভাবে বুঝি। তাই ওদের সমস্যাটা বুঝে সরকারের কাছ থেকে অনুদান আদায়ের চেষ্টা করি। কার মুভেবল চেয়ার দরকার, কার প্রস্থেটিক পা দরকার, কার বিদেশি জ্যাভেলিন দরকার তা আমার মুখস্থ।'
না থেমেই তিনি বলে চলেন, 'টোকিওয় আমি সবার আগে এসেছি। এখানে খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়া, প্র্যাক্টিসের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে তাদের প্রয়োজন মতো গাড়িতে করে ভেনুতে পৌঁছনোর ব্লু প্রিন্টও আমাকে করতে হয়েছে। সোমবার সবাই দেশে ফিরে গেলেও আমি মঙ্গলবার দেশে ফিরব। সবার সব জিনিস গুছিয়ে নিয়ে।'
ভারতীয় প্যারালিম্পিক্সের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল হল? দীপার গলাতে উচ্ছ্বাস। 'এ বার একঝাঁক জুনিয়র ছেলেমেয়ে উঠে এল। অবনী, মণীশ, প্রবীণ, নিশাদ, কৃষ্ণরা সবে টিনএজে। আগামী দিনে এরা তো সাফল্য পাবেই। এদের দেখে আরও বিশেষ ভাবে সক্ষম অনেক নতুন ছেলেমেয়ে খেলার মাঠে নেমে পড়বে নতুন জীবনের লক্ষ্যে।'
২২ বছর আগে যে মেয়ের জীবনটাই ফুরিয়ে যেতে বসেছিল, সেই মেয়েটাই এখন অনেকের নতুন জীবন গড়ে দেওয়ার কারিগর হয়ে উঠেছেন।
মেরুদণ্ডে টিউমারটা এতটাই বাড়াবাড়ি জায়গায় পৌঁছেছিল যে দ্রুত অপারেশন না করলে জীবন সংশয় হতে পারত বছর সাতাশের তরুণীর।
শরীরের তিন ভাগের দু'ভাগ অসাড় হয়ে থাকা সেই দীপার হাত ধরেই ভারতীয় প্যারালিম্পিক্স এ বার বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে মাথা তুলে দাঁড়াল। ২০১৯ সাল থেকে দীপা ভারতীয় প্যারালিম্পিক কমিটির চেয়ারপার্সন। রবিবার শেষ হওয়া প্যারালিম্পিক্সে ১৯ পদক নিয়ে পদক তালিকায় ভারত ২৪ নম্বরে। ভারতের এই সাফল্যকে কেউ বিস্ময়জনক, কেউ অভূতপূর্ব, কেউ অত্যাশ্চর্য আখ্যা দিচ্ছেন।
আর তিনি কী বলছেন? রবিবার সন্ধেয় যখন ফোনে দীপাকে টোকিওয় ফোনে ধরা হল, তখন তিনি গেমসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত। তারই ফাঁকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন রিও প্যারালিম্পিক্সে রুপো জেতা এই শট পাট থ্রোয়ার।
এতগুলো পদক জেতার স্বপ্ন কী দেখেছিলেন? দীপার জবাব, 'আমার জীবনটা এতটাই কঠিন জমির উপর দিয়ে পেরোনো যে আমি স্বপ্ন দেখিনি। বাস্তবের অঙ্ক কষে এগোই। ১৯ নয়, টোকিওয় আমার অঙ্ক ছিল ২১ পদকের। আমি সেটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজীকেও বলেছিলাম। ২১ না হলেও ২০ পদক তো এ বার হয়েই গিয়েছিল। যদি না ডিসকাসে বিনোদ কুমারের পদকটা বাতিল হত।' সঙ্গে জোড়েন, 'তবে ১৯ পদক জেতাটাও বিরাট ব্যাপার। রিওতে ছিল চার পদক। অর্থাৎ ভারতীয় প্যারালিম্পিক্স সে বার হাঁটি হাঁটি পায়ে এগোতে শিখেছিল। এ বার পাঁচ বছরের মধ্যেই তারা পদক পেল নাইন্টিন। অর্থাৎ টিন পেরিয়ে তারা সাবালক হল। আগামী দিনে প্যারা মিটে ভারতের উপর প্রত্যাশার চাপ বাড়ল। অর্থাৎ সাবালক হয়ে দায়িত্বও বাড়ল অনেকটা।'
ভারতের এই সাফল্যে দীপার ভূমিকা কতটা ছিল? প্যারালিম্পিক্সের লোকজন বলছেন, 'দীপা ম্যাম প্যারা কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর দু'বছর দিনরাত এক করে খেটেছেন। খেলোয়াড়, কোচেদের পাশে থাকার সঙ্গে সরকারি সুযোগ সুবিধে এনে দেওয়ার জন্য লড়ে গিয়েছেন।' এ নিয়ে দীপার মন্তব্য, 'ভারতে এখন বিভিন্ন খেলার প্রশাসনে খেলোয়াড়রা আসছেন। এটা দারুণ ব্যাপার। আমিও খেলোয়াড় হিসেবেই এই দায়িত্বে এসেছি। আমি প্যারা অ্যাথলিটদের সমস্যাটা ভীষণ ভাবে বুঝি। তাই ওদের সমস্যাটা বুঝে সরকারের কাছ থেকে অনুদান আদায়ের চেষ্টা করি। কার মুভেবল চেয়ার দরকার, কার প্রস্থেটিক পা দরকার, কার বিদেশি জ্যাভেলিন দরকার তা আমার মুখস্থ।'
না থেমেই তিনি বলে চলেন, 'টোকিওয় আমি সবার আগে এসেছি। এখানে খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়া, প্র্যাক্টিসের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে তাদের প্রয়োজন মতো গাড়িতে করে ভেনুতে পৌঁছনোর ব্লু প্রিন্টও আমাকে করতে হয়েছে। সোমবার সবাই দেশে ফিরে গেলেও আমি মঙ্গলবার দেশে ফিরব। সবার সব জিনিস গুছিয়ে নিয়ে।'
ভারতীয় প্যারালিম্পিক্সের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল হল? দীপার গলাতে উচ্ছ্বাস। 'এ বার একঝাঁক জুনিয়র ছেলেমেয়ে উঠে এল। অবনী, মণীশ, প্রবীণ, নিশাদ, কৃষ্ণরা সবে টিনএজে। আগামী দিনে এরা তো সাফল্য পাবেই। এদের দেখে আরও বিশেষ ভাবে সক্ষম অনেক নতুন ছেলেমেয়ে খেলার মাঠে নেমে পড়বে নতুন জীবনের লক্ষ্যে।'
২২ বছর আগে যে মেয়ের জীবনটাই ফুরিয়ে যেতে বসেছিল, সেই মেয়েটাই এখন অনেকের নতুন জীবন গড়ে দেওয়ার কারিগর হয়ে উঠেছেন।