অ্যাপশহর

দীপার কাছে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স কৃতজ্ঞ থাকবে

দীপা কর্মকারের আগে তিনিই ছিলেন ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের সেরা মেয়ে৷ দীপাকে নিয়ে কলম ধরলেন সেই টুম্পা দেবনাথ।

EiSamay.Com 15 Aug 2016, 11:08 am
টানা ১৪ বছর ভারতের হয়ে তিনটি বিশ্ব মিট ও দুটো এশিয়ান মিট সহ একাধিক টুর্নামেন্টে নেমে জিতেছেন ১০টি আন্তর্জাতিক পদক৷ জাতীয় স্তরে রয়েছে অসংখ্য পদক৷ দীপা কর্মকারের আগে তিনিই ছিলেন ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের সেরা মেয়ে৷ দীপাকে নিয়ে কলম ধরলেন সেই টুম্পা দেবনাথ।
EiSamay.Com indian gymnastics will be grateful to deepa karmakar
দীপার কাছে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স কৃতজ্ঞ থাকবে


দীপার ইভেন্ট দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আমি রিওতে আছি৷ কোয়ালিফিকেশনে আট নম্বরে৷ ফাইনালে চার৷ দারুণ উন্নতি করছে৷ একজন জিমন্যাস্ট হিসেবে আমি গর্বিত৷ দ্বিতীয় ভল্ট প্রোদুনোভার সময় মাটিতে শরীর স্পর্শ না করলে ব্রোঞ্জ পদকটা হয়তো নিয়ে ফিরত দীপা৷ ফারাক তো ছিল মাত্র ০.১৫০ পয়েন্টের৷ ও তুকাহারা ভল্ট প্রথমে দিয়েছিল৷ কৌশল পাল্টে খুব খারাপ কিছু হয়নি৷ জিমন্যাস্টিক্সের এ রকম ঘটনা আকছার ঘটে৷ রবিরার এই মেয়ের জন্য আমরা সবাই অর্ধেক রাত জাগলাম৷ ইভেন্ট না কী না, জিমন্যাস্টিক্স৷ এটাই তো বড় ব্যাপার! জিমন্যাস্টিক্স কী? খায় না, মাথায় দেয়---এতদিন কেউই তা জানতেন না৷ দীপা কর্মকারের দৌলতে সবাই জানলেন৷ অলিম্পিকে ফাইনালে চতুর্থ৷ অতীতে ভারতের কোনও জিমন্যাস্ট যা পারেননি৷ দীপা অনেকটা করে দিয়েছে৷ রিও অলিম্পিকে ভারতের চূড়ান্ত ভরাডুবির থেকে বাঁচতে সকলেই দীপাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন৷ বিন্দ্রা, সাইনা, সানিয়াদের ব্যর্থতার পর পদকের প্রত্যাশা ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিলাম আমরা৷ দীপা কিন্ত্ত লড়েছে৷ আশা করছি, ওর সাফল্য দেখে পাড়ায় পাড়ায় জিমন্যাস্টিক্স সেন্টার হবে৷ বিভিন্ন রাজ্য সরকার উদ্যোগী হবে৷ স্কুল পড়ুয়ারা জিমন্যাস্টিক্স শিখতে আসবে৷ বাবা -মায়েরা তাঁদের সন্তানদের সামনে দীপার উদাহরণ হিসেবে খাড়া করবেন৷ ইউটিউবে তাঁরা দীপার ইভেন্ট দেখবেন৷ এটাই কম কীসের! দীপার কাছে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্স কৃতজ্ঞ থাকবে৷

অতীতে মেয়েদের জিমন্যাস্টিক্সকে কেউ গুরুত্ব দিত না৷ কমনওয়েলথের জন্য ক্যাম্পের আগে শুনতে হয়েছে , শুধু ছেলেরা যাবে , মেয়েদের টিম পাঠানো হবে না৷ এক -দেড় মাস প্র্যাক্টিস করে ট্রেনে দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকিট কেটে বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে৷ পায়ের লিগামেন্টে চোট পেয়ে বসে থেকেছি৷ চোট পাওয়ার পর সকলেই আমার পাশ থেকে সরে গিয়েছিলেন৷ একটা এক্স রে প্লেট নিয়ে দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়িয়েছি৷ এম আর আই করার জন্য টাকা চেয়ে বেরিয়েছি৷ উল্টে চোটের অজুহাতে জাতীয় টিম থেকে বাদ পড়েছিলাম৷ টাকার জন্য বাংলা ছেড়ে অন্ধ্রপ্রদেশে চলে গিয়েছিলাম৷ ওখানে চ্যাম্পিয়ন হলে তিন লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে৷ পায়ে চোট নিয়ে সফল হলাম৷ টাকা পেলাম, সেই টাকা দিয়ে অপারেশন করালাম৷ অভিনন্দন দূরে থাক, উল্টে বাংলার জিমন্যাস্টিক্স কর্তাদের থেকে তিরস্কার জুটেছিল৷ এশিয়ান মিটে দীপার মতো প্রথম আটে থেকে ফাইনাল করেছিলাম৷ সে সময় বিশ্বেশ্বর নন্দীর মতো গুরু পাইনি৷ পাশে কেউ ছিল না৷ ট্রেনিং করতাম একজন কোচের কাছে৷ টুর্নামেন্টে গিয়ে পড়তাম অন্য কোচের কাছে৷ এ ভাবে সেরাটা দেওয়া সম্ভব হয়নি৷ আপাদমস্তক মানুষকে এ সব বোঝানো মুশকিল৷ তারপর নোংরা রাজনীতির শিকার প্রতিপদে হয়েছিলাম৷ দীপা সবকিছুর উর্ধ্বে৷ ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের রোল মডেল দীপা৷ এটাই আমাদের কাছে বড় পাওনা৷ এতদিন বলার কিছু ছিল না৷ লোককে বোঝাতে হত , জিমন্যাস্টিক্স নিয়ে কথা বলতে গেলে৷ দীপা সেই কাজটা শেষ করল৷ দীপা আমাদের নাদিয়া কোমানচি৷ আর কৃতিত্ব দেব কোচ বিশ্বেশ্বর স্যরকে৷ বহু দূর থেকে তাঁকে করজোড়ে নমস্কার করছি৷

পরের খবর

Sportsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল