অ্যাপশহর

৫ গোলে হারের ধাক্কায় কম্পোজার হতে শুরু করেছিলাম: শিলাজিৎ

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। আর তারপরই ISL ময়দানে হতে চলেছে মহাসংগ্রাম। মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের লড়াই। তবে পুরনো ডার্বির স্মৃতি নিয়েই কলম ধরলেন শিলাজিৎ মজুমদার।

EiSamay.Com 29 Jan 2022, 3:11 pm
শিলাজিৎ মজুমদার

ঠাকুমার একটা সিল্কের শাড়ি ছিল, লাল পাড়। আমি আর সন্টাই (আমার ভাই) দুপুরে মায়ের ভাতঘুমের ফাঁকে চুপিচুপি আলমারি থেকে শাড়িটা সরিয়ে ফেলেছিলাম। তারপর? পাড়টা কেটে সুভাষদার দোকান থেকে রঞ্জক সাবান, গরম জল, একটা সবুজ একটা মেরুন বালতিতে নুন দিয়ে চুবিয়ে রেখেছিলাম খানিকক্ষণ। সেটা আবার পিসতুতো দিদি বুজুকে দিয়ে সেলাইও করিয়েছিলাম। তারপর সেই সবুজ মেরুন পতাকাই টলটল করত ৯ নম্বর, বিকে পাল অ্যাভিনিউয়ের বারান্দায়। ডার্বি ফার্বি বুঝতাম না তখন। মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল? নাহ, সেটাও না। তবে ঘটিরাই যে বেশি মোহনবাগান সেটা দেখতাম। দু'চারটে কালে-ভদ্রে এমন বাঙাল চোখে পড়ত যারা কিনা মোহনবাগানী। তবে মনে আছে, ম্যাচের শেষে হেরে গেলে বাঙালদের 'জার্মান' বলে আওয়াজ দেওয়া হত। পাড়ার চ্যাম্পিয়ান স্পোর্টসম্যান ছিলেন আমাদের কাজল কাকু। সেই কাজল ভদ্র ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবল দুটোই খেলেছেন কাস্টমসের হয়ে। তিনি ছিলেন বাঙাল, কিন্তু পাক্কা মোহনবাগানী। যদিও কোনও দিন কাজল কাকুকে আমার জিজ্ঞাসা করা হয়নি, কেন?

সালটা ১৯৭৬। পাড়ায় কয়েকটা বাড়িতে তখন সবে টিভি ঢুকেছে। কিন্তু সে বার লিগের ডার্বি আমরা দেখেছিলাম খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সন্ধেবেলায়, ডেফার্ড লাইভে। ততক্ষণে রেডিয়োতে আমরা খেলা শুনে নিয়েছি। দুরু দুরু বুকে! সন্টাইয়ের তো জ্বর চলে এল! জ্বর ছাড়ল ম্যাচের শেষে। কমেন্ট্রি শুরু হতেই ...হাবিব-প্রসূন-উলগানাথন...গোল!!!! ভাবতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল ঠিক শুনছি তো? এত অল্প সময়েও গোল হয়! খেলা শুরুর ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে গোল! আকবর-মহম্মদ আকবর। সেদিন নীতু দাকে দেখেছিলাম টলমল করতে করতে পাড়ার ইস্টবেঙ্গল সাপোর্টারদের বলছে- 'কী রে জার্মান, কী রে জার্মান'। তাসা বাজছে, সেই আওয়াজ ছাপিয়ে ভেসে আসছিল নীতুদার গলা। আমার তখন বয়স কত হবে? ৬৫-তে ল্যান্ড করেছি, বাকিটা হিসেব করে নিন।

১৯৭৬-র আগের পাঁচ-ছবছর পর্যন্ত মোহনবাগান তাঁবুতে বোধ হয় ডুরান্ড, রোভার্স ছাড়া কিছু ঢোকেনি। টানা ছ’বার লিগ, আর পাঁচবার আইএফএ শিল্ড তখন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতেই। মনে আছে ৭৫-এ পাঁচ গোল খেয়ে আমি আর সন্টাই খবরের কাগজ দলা পাকিয়ে ফুটবল বানিয়ে দাদুর খাটের উপরেই খেলতাম, আমি গোলকিপার, ভাই স্ট্রাইকার।
ডার্বি দেখতে গিয়ে অভিনব গালাগালি শিখেছি: মীর
আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে একসময় গান বেঁধেছিলাম, 'ওরে শ্যাম থাপ্পা, দিস না ধাপ্পা, দেখেছিস তো গোষ্ঠ পালের পা'। পাঁচ গোলে হারের ধাক্কায় আমি বোধ হয় সেদিনই প্রথম কম্পোজার হতে শুরু করেছিলাম। আমাদের দু’জনের সেই গান আর খাটের উপর কাগজের বলের প্রাকটিসে ক্লান্ত হয়ে ঘুমোবার আগে পর্যন্ত আমি ভেবেছিলাম আমি চরণ বসুর মতো গোলকিপার হব। আর ইস্টবেঙ্গলের করা সব গোল আমায় বাঁচাতেই হবে। তবে আমার ভাই কী ভেবেছিল জানি না।
ATK না মোহনবাগান, এটা একটা অস্বস্তির কারণ: উপল
মাঠে গিয়ে খেলা দেখা খুব একটা বেশি হয়ে ওঠেনি। খেলেছিও সামান্য। জোড়াবাগান মাঠে একটা সেভেন ও সাইড টুর্নামেন্ট হত। সেখানে দেখেছি কিছু ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবলারদের 'খেপ' খেলা। প্রণব গাঙ্গুলির বাঁ পায়ের শট গোলকিপারের মাথায় লেগে তা বার পোস্টে ঠুকে ফেটে যেতে দেখেছি। কান্ননকে বার পোস্টে থ্রো বল মারতে দেখেছি। একবার কোনও এক ফার্স্ট ডিভিশন মাঠে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখেছি স্ট্রাইকারের মাথার উপর থেকে 'এক হাতে চামচ করে রসমালাইয়ের ভাঁড় থেকে গোল্লা তুলে নেওয়ার মতো' করে বল গ্রিপ করতে। ম্যাজিক যেন! আজ লিখতে গিয়ে অতীতের এরকমই ম্যাজিকাল কিছু মোমেন্ট ভেসে উঠছে চোখের সামনে। খেলোয়াড় হব ভেবেছিলাম, হতে পারিনি। তাতে কোনও আফসোসও নেই। সে তো আমি রাখালও হতে পারিনি...

পরের খবর

Sportsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল