ভাস্বতী ঘোষ
মাহির প্রশ্ন, 'স্যারজি চান্স মিলেগা?'
কপিলের উত্তর, 'আ যা মাহি...'
কিন্তু কপিলের বলে খেলতে গিয়ে মাহি প্রথমে কাত৷ তারপর? ওস্তাদের মার শেষ রাতে হবে না? হেলিকপ্টার শট হবে না, হয় নাকি? তা যতই বোলারের নাম কপিল দেব হোক না কেন!
মুখোমুখি ব্যাট-বলের ডুয়েলটা অবশ্য সত্যিকারের নয়৷ টিএমটি বারের বিজ্ঞাপন শ্যুট৷ সৌমিক হালদারের প্রযোজনায় অরিন্দম শীলের পরিচালনায় বৃহস্পতিবার ইডেন গার্ডেন্সে শ্যুটিং করলেন দুই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব নিখাঞ্জ আর মহেন্দ্র সিং ধোনি৷ আজ, শুক্রবারও ধোনি বিজ্ঞাপনের বাকি অংশের শু্যটিং করবেন শহরের এক স্টুডিওতে৷
বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ন'টা পেরনোর আগেই মাহি পৌঁছে যান ইডেনে৷ কয়েকটা শট দেওয়ার পর মাহিকে যখন জানানো হল, 'কপিল পাজি এসেছেন, ওঁর তৈরি হতে আরও একটু সময় লাগছে', মাহির উত্তর, 'কোনও অসুবিধে নেই৷ আমি অপেক্ষা করছি৷' অপেক্ষার ফাঁকে অভ্যেসবশত যথারীতি ইডেনের বহুপরিচিত পিচের কাছে৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বৃহস্পতিবার মাঠে মিডিয়া প্রবেশ চাননি ধোনি৷ এমনকী এদিন মাঠে তাঁর স্ত্রী সাক্ষী ধোনি আসার পর দু'জনের মধ্যে একপ্রস্থ কথোপকথন হলেও, সে ছবি তোলার অনুমতি পাওয়া যায়নি ধোনি ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে৷ তবে বর-বউয়ের মধ্যে যে সর্বক্ষণ চলে খুনসুটি, সে কথা জানাচ্ছেন পরিচালক৷ যেমন বুধবার রাতে তাজ বেঙ্গলে ধোনির ঘরে পরিচালক যখন চিত্রনাট্য শোনাতে যান, তখন ধোনি বলেন, 'আমি একেবারেই অভিনয় করতে পারি না৷ আমার বউকে জিজ্ঞেস করুন৷' এরপর পরিচালক যখন বলেন, 'সাক্ষী আপনি শু্যটিং দেখতে মাঠে আসুন', তখন তা শুনে ধোনি বলে ওঠেন, 'সি ইজ ইনটেলিজেন্ট৷ ও মাঠে যাবে না...'
তবে সাক্ষী এদিন মাঠে এসে ধোনিকে বললেন, 'কাম অন মাহি, ওয়ান টেক ওকে'৷ পরিচালক তা শুনে বলে উঠলেন, 'কী হল? কনসেন্ট্রেশন চলে গেল তো?' তা শুনে হালকা হাসলেন ধোনি৷ বিকেল চারটের সময় সাক্ষী একটু তড়বড় করতে শুরু করলেন, তখনও প্যাকআপ হচ্ছে না বলে৷ তা হলে কি ধোনির সঙ্গে এ শহরেই কিছু জায়গায় যাওয়ার প্ল্যান তৈরি করেছিলেন সাক্ষী, যার সাক্ষী থাকতে চাইছিল সকলে?
'পিস্তল শু্যটিং? জানি না৷ ওটা কাছে বলে হয়েও যেতে পারে', বলছেন মাহি৷ তবে এদিন মাঠে কপিল দেবের সঙ্গে তাঁর কলকাতা শহর নিয়ে একটা কথাও হয়নি৷ বরং কপিল দেব তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, 'টিমের কেউ গলফ খেলে এখন'? তাতে ধোনির রসিকতা, 'স্টুয়ার্ট খেলত৷ ইশান্ত (শর্মা) আবার এমনভাবে গলফ খেলল একদিন যে বলটা পিছন দিকে চলে গেল! ফুটবল যেরকমভাবে খেলে, গলফও সেরকমভাবে খেলে!' হেসে গড়িয়ে পড়লেন কপিল৷
ব্যাট তৈরির খুঁটিনাটি নিয়ে এদিন পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন ধোনি৷ ধোনির কথায়, 'যে কাঠ দিয়ে এই ব্যাট তৈরি হয়, সেটা কোনও কাজে লাগে না৷ না এই দিয়ে ফার্নিচার তৈরি হবে, এমনকী চা করেও খাওয়া যাবে না৷' আবার পরিচালকের ছবি 'ধনঞ্জয়' নিয়েও একপ্রস্থ আলোচনা হল দু'জনের৷ সঙ্গত যুক্তি ছাড়াও কীভাবে কারও সমালোচনা শুরু হয়ে যায় মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা থেকে শুরু হয়েছিল দু'জনের আলোচনা৷ এদিন কপিল-ধোনির ক্রিকেট আলোচনায় উঠে এলেন বুমরা, বিরাটরা৷
জানা গেল, তাঁর অধুনা প্রেম অত্যাধুনিক বাইক কাওয়াসাকি এইচটুআর৷ সেটা অবশ্য গত দু'বছরে দু'বারের বেশি বাড়ি থেকে বেরোয়নি৷ মাঠে নেমে এদিন অভিনয়ে ছয়ও হাঁকালেন৷ অরিন্দম শীল তাঁর অভিনয় প্রতিভা দেখে অবাক হয়ে বললেন, 'তোমায় ছবি অফার করেননি কেউ?' মাহির উত্তর, 'যে রাস্তায় হাঁটতে চাই না, তা নিয়ে ভেবে কী লাভ? আমি শুধু ক্রিকেট খেলতে পারি৷ সেটাই খেলব৷' পরিচালকের মতে কিছু বিজ্ঞাপনে স্টিফ লাগে বিরাটকে৷ মাহি কিন্ত্ত দুর্দান্ত৷ শট দেখে মনেই হল না অভিনয় করছে৷
কপিল দেব আবার ডিরেক্টর্স অ্যাক্টর৷ প্রথম দিকের শটগুলো মনের মতো না হওয়ায় অরিন্দম গিয়ে দেখিয়ে দিলেন৷ কপিল সেটা হুবহু করে দিলেন৷ ইডেনে পা রেখে বললেন, '১৫ বছর পর বল ধরছি, পিচে পা রাখছি৷' প্রশ্ন করতেই হয়, ক্রিকেট খেলা মিস করেন না? কপিলের উত্তর, 'আমরা কি স্কুলে যাওয়া মিস করি?' সকালে ইডেনে ঢুকে কপিল বলছিলেন, '৩০ বছর আগে যা করেছি, সেটা আলাদা ব্যাপার৷ আজ কী করে বল করব জানিনা৷' কিন্ত্ত তিনি মাঠে পা দেওয়ার পরই চোখের সামনে দেখা গেল কপিল ম্যাজিক৷ সেই পুরনো অ্যাকশন, অল্প লাফ দিয়ে ডেলিভারি৷
সাত দিন বাদে টেস্ট ইডেনে৷ কিন্ত্ত দিন দশেক আগে পাওয়া চিঠিতে যখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দেখেন, বিজ্ঞাপনের দুই তারকার নাম, তখন এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে তিনি ইডেনে এই বিজ্ঞাপন শ্যুট করার সব বন্দোবস্ত করে দেন৷ এদিন দুপুরে ইডেনে৷ ধোনি আর কপিলের পাশে৷ তৈরি হল অসাধারণ এক মুহূর্ত৷
ভারতীয় ক্রিকেটের তিন কিংবদন্তি ক্যাপ্টেন এক ফ্রেমে৷ আর এই ছবি দেখবে ইডেন?