অ্যাপশহর

করুণের কীর্তি ৩০৩, রেকর্ড রান ভারতের

সিরিজ পকেটে? পাটা উইকেট! দাঁত-নখ ভেঙে যাওয়া ইংল্যান্ড! কী আছে চেন্নাই টেস্টে?

EiSamay.Com 20 Dec 2016, 11:06 am
এই সময়: সিরিজ পকেটে? পাটা উইকেট! দাঁত-নখ ভেঙে যাওয়া ইংল্যান্ড! কী আছে চেন্নাই টেস্টে?
EiSamay.Com india vs england stats karun nair first indian batsman to score triple ton against england
করুণের কীর্তি ৩০৩, রেকর্ড রান ভারতের


সব প্রশ্নের উত্তর যেন সোমবারের চিপকে মিলে গেল! ইতিহাস থেকে নতুন সম্ভাবনার ‘জন্ম’ আছে৷ আছেন করুণ নায়ার!
সেই চেন্নাই৷ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বীরেন্দ্র সহবাগের ৩১৯-এর চিপকে ট্রিপল সেঞ্চুরির নয়া ইতিহাস বছর ২৫-এর করুণের৷ যা নিয়ে সহবাগ নিজের স্টাইলে টুইটে বলেওছেন, অনেক দিন পর সঙ্গী পেলেন৷ আসলে ভারতের ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান বলতে এই একজনই, বীরু৷ সেই দলে নতুন নাম৷

নিজেদের ছেলেদের নিয়ে কথাটা বলেছিলেন সহবাগ, ‘ওরা বারান্দায় সেঞ্চুরি করে দেখাক!’ বারান্দা নয়, বাইশ গজ দাপিয়ে বীরু পাজির একাকীত্ব দূর করলেন করুণ৷ প্রায় সাড়ে আট বছর পর সহবাগের রেকর্ড ছোঁয়া তরুণকে কিন্ত্ত কখনও বীরুর ছায়া মনে হয়নি৷ করুণের ব্যাট ঝোড়ো হলেও ‘বীরুচিত’ নয়৷ ধরার বল ধরেছেন, মারার বল মেরেছেন৷

চিপকে ২০০৮ সালে সহবাগের ৩১৯ ছিল ৩০৪ বলে৷ করুণের ব্যাটে ব্রিটিশ বোলারদের করুণ রাগিনী ৩৮১ বলে৷ ৩২ বাউন্ডারি, ৪ ওভার বাউন্ডারিতে ওয়ারদা সাইক্লোনের শহরে ধ্বংসলীলা কেরালার যুবকের৷

এ দিন সকালে যখন ব্যাট করতে নেমেছিলেন স্কোর বোর্ডে তাঁর নামের পাশে ১৩৬ বলে ৭১ নট আউট, স্ট্রাইক রেট ৫২.২১৷ শুধু সোমবার বাইশ গজে কাটানোর হিসেবে ২৪৫ বলে ২৩২, স্ট্রাইক রেট ৯৪.৬৯৷ সেঞ্চুরি এসেছিল ১৮৫ বলে, ডাবল সেঞ্চুরি ৩০৬ বলে৷ ২০০ করতে ২২টা চার আর একটা ছক্কা মেরেছিলেন করুণ৷ তারপর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইতিহাসে পা দেওয়ার ট্রিপল করলেন মাত্র ৭৫ বলে৷

কিছু কিছু সমস্যা সুখেরও হয়৷ করুণকে নিয়ে সেই সমস্যায় পড়তে হতে পারে কোচ অনিল কুম্বলেকে৷ মিডল অর্ডার বাছাই এখন বড় বালাই৷ করুণের ছয় নম্বর জায়গা নিয়ে কোনও কথা হবে না৷ আবার এটাও ঘটনা, এলাম আর টিমে ঢুকে গেলাম, করুণের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তেমন হয়নি৷ চোটের জন্য প্রথম এগারোয় বারবার বদলে শিকে ছিঁড়েছে করুণের৷ আগের দুটো টেস্টে একেবারেই নজর কাড়তে পারেননি৷ তবে সিরিজ ৩-০ হয়ে যাওয়ায় কর্নাটকের রঞ্জি ক্রিকেটারের সুযোগ পাওয়া নিয়ে তেমন চাপে পড়তে হয়নি৷ তিনিই এখন চাপে ফেলছেন দেশের তারকা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের৷

চোট সারিয়ে ফিরলে পাঁচ নম্বর জায়গা হয়তো ফিরে পাবেন অজিঙ্ক রাহানে৷ কিন্ত্ত করুণ ফর্ম ধরে রাখলে তাঁকে আপার অর্ডারে তুলে নিয়ে আসার সম্ভাবনা থেকে যাবে৷ কী হবে রোহিত শর্মার? এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটে কথা বলার সময় সৌরভও বলে দিলেন, ‘আমার মনে হয়, রাহানের জায়গা নিয়ে কোনও সংশয় নেই৷ ও সারা বিশ্বে রান করেছে৷ তিনে পূজারা, চারে কোহলির জায়গাও পাকা৷ তবে এটা ঠিক রোহিত শর্মা সাঙ্ঘাতিক চাপে পড়ে গেল৷’

অবশ্য চাপ নিয়ে আর এখন ভাবছে কে? ড্রেসিংরুমের বারান্দার ছবিতে এক দিনের আমূল বদল৷ রবিবার লোকেশ রাহুলের ডাবল হারানোয় হতাশ চোখে তাকিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি৷ এ দিন না আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাসের বান্দা নন বিরাট৷ করুণ ব্যাট ছোঁয়া বল বাউন্ডারি পেরোনোর পর উচ্ছ্বাস বিরাট-সহ গোটা টিমের৷ তার আগে চোখমুখে টেনশন ভিকের৷ যেন করুণ নন, তিনিই খেলছেন৷ কোচ কুম্বলের ক্যামেরাবন্দি হয়ে গেল করুণের কীর্তি৷

যাঁকে ঘিরে এত কিছু সেই করুণ অবশ্য একটু বেশিই স্বাভাবিক৷ যে ভাবে তৃতীয় টেস্টে জীবনের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির সেলিব্রেশন সারলেন, রঞ্জি সেঞ্চুরির সঙ্গে সেটা বেশ মানিয়ে যেত৷ এতটাই ভাবলেশহীন৷ যত আগ্রাসন যেন ব্যাটে৷ না হলে বিরাট, পূজারাদের ছাড়াই কী ভাবে ইংল্যান্ডের ২৮২ রানের লিড পাওয়া যায়! তা ছাড়া ২৯৯ রানে যখন ব্যাট করছেন করুণ, চাপে ফেলার খেলায় মাতলেন ক্যাপ্টেন কুক৷ সিঙ্গলস ঠেকানোর জন্য ক্লোজ ফিল্ডিং সাজালেন৷ জীবন প্রায় দিয়েও ফেলছিলেন৷ এলবিডব্লিউয়ের জোরালো আবেদনও হল৷ তার পর আর কোনও ঝুঁকি নেননি৷ রশিদের পরের ডেলিভারি কাট করে একেবারে বাউন্ডারিতে৷

ক্লিক করে দেখুন ম্যাচের LIVE স্কোর

সব মিলিয়ে ভারতের প্রথম ইনিংসের ৭৫৯-৭ ডিক্লেয়ার স্কোরের সামনে স্টুয়ার্ট ব্রড (২-৮০), মইন আলি (১-১৯০), আদিল রশিদের (১-১৫৩) মতো বড় বড় নামও যেন চুনোপুটি৷ অনায়াস ব্যাটিং প্র্যাক্টিস সেরে নিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৬৭), রবীন্দ্র জাডেজাও (৫১)৷ দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ১২-০৷ ক্রিজে কুক (৩) ও কেটন জেনিংস (৯)৷ ইংল্যান্ড পিছিয়ে ২৭০ রানে৷

সাধারণত ক্রিকেটীয় অঙ্কে চেন্নাই টেস্ট ড্র-এর দিকেই এগোচ্ছে৷ তবে ক্রিকেটে বিশেষ টেস্টে সব সময় দুইয়ে দুইয়ে চার হয় না৷ না হলে সিরিজের গোধূলিতে এসে করুণ-উদয় ঘটবে কেন? এ বার পরীক্ষা ভারতের স্পিনারদের৷ আরও ভালো করে বললে ঘরের মাঠে আজ অশ্বিনের অগ্নিপরীক্ষা৷

এমনিতে বাইশ গজ পাটা৷ উপমহাদেশের উইকেটের চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শেষ দিন কিছুটা হলেও বল ঘুরবে৷ এটাও ঠিক, সেটা দুরন্ত ঘূর্ণির মতো বন বন করে নয়৷ এখানেই কেরামতি দেখাতে হবে অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজাদের৷

শেষ বেলায় অশ্বিন-জাডেজার হাতে বল তুলে দিয়ে বিরাট বুঝিয়ে দিলেন, স্পিনারদের উপর কতটা নির্ভর করছেন৷ একই সঙ্গে এই টেস্টও জেতার জন্য কতটা মুখিয়ে৷ যদিও এ দিন কিছু করতে পারেননি স্পিনার-জুটি৷

শেষ দিন হিরো হয়ে যাওয়ার সুযোগ অমিত মিশ্রের৷ প্রথম ইনিংসে মাত্র এক উইকেট৷ তার মানে এই নয়, দ্বিতীয় ইনিংসে শূন্য হাতে ফিরবেন৷ এ দিনের আগে করুণকে নিয়েই বা কে ভেবেছিলেন?

পরের খবর

Sportsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল