২০১৪ সালে আচমকাই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। সেইসময় শততম টেস্ট ম্যাচটা খেলতে তিনি মাত্র ১০ ম্যাচ দুরে ছিলেন। আর ৫,০০০ রানের চৌকাঠ স্পর্শ করতে মাত্র ১২৪ রান। অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিনি অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন।
এই একই ঘটনা ঘটেছিল ২০২০ সালের ১৫ অগাস্ট। এই দিনেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাকি দুটো ফরম্যাট থেকেও তিনি চিরবিদায় নেন। ইনস্টাগ্রামে তিনি শুধুমাত্র ছোট্ট একটা পোস্ট করেছিলেন। 'আজ সন্ধ্যে ৭টা বেজে ২৯ মিনিট থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে ধরা হোক।'
মহেন্দ্র সিং ধোনি হওয়া সত্যিই খুব কঠিন। আপনাকে ট্রোল করা হবে, দেশের জন্য বিশ্বকাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পরেও দেওয়া হবে গালাগালি। এই পরিস্থিতিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই একজন সাধারণ মানুষ মাথা গরম করে ফেলবে। তবে ধোনি কিন্তু সেই তালিকায় পড়েন না।
সমালোচকদের বিরুদ্ধে একবার মুখ খুলেছিলেন সাক্ষী ধোনি। তবে পরে তিনি নিজের টুইটটি ডিলিট করে দেন। ধোনির আইপিএল কেরিয়ারে অবসর নিয়ে সকলে যখন জল্পনা করছেন, তখন তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন 'ডেফিনেটলি নট'। তিনি সবসময় একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। বর্তমান ফলাফল যাইহোক না কোন, আগামী ভবিষ্যতে তাঁর সিদ্ধান্ত যে ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতিসাধন করবে, সেটা খুব ভালো করেই জানতেন। হতে পারে ২০২০ সালের আইপিএল টুর্নামেন্টে চেন্নাই সুপার কিংস পয়েন্ট তালিকায় সকলের নীচে ছিল, কিন্তু, ২০২১ সালের এই আর্থিক আভিজাত্যপূর্ণ টুর্নামেন্টে CSK পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আর তারপরই বন্ধ হয়ে গেছে সমর্থকদের যাবতীয় কথা।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে আগে যাঁরা অধিনায়কত্ব করেছেন, কিংবা বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলির ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় আমরা সকলেই জানি। কারণ তাঁরাও আমাদের জানাতে পছন্দ করেন। আজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় BCCI প্রেসিডেন্ট, রাহুল দ্রাবিড় জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচ, সচিনকেও টুইটারে হামেশাই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু, মহেন্দ্র সিং ধোনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কার্যত ভ্যানিশ হয়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে তাঁর স্ত্রী সাক্ষী সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো শেয়ার করেন। নাহলে, ধোনি অধিকাংশ সময়ই নিজেকে অজ্ঞাতবাসে রাখতে পছন্দ করেন।
এই গুণটা সবার মধ্যে থাকে না। নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনকে দেখলে আপনারা আরও ভালো করে বুঝতে পারবেন। ক্রিকেটে আগ্রাসনই শেষ কথা। আগে তো মাঠের মধ্যেই চলত তর্কাতর্কি। সেগুলো সরাসরি ধরা পড়ত ক্যামেরায়। তবে ধোনি এই ধারণাটা একেবারে বদলে দিয়েছেন। নাহলে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনালে ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি দলকে জেতানোর পর শুধুমাত্র একটা মুচকি হাসিতেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন! আসলে তিনি আগ্রাসী হলেও নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
একেবারে ছোটো শহর থেকে উঠে এসেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাঁর আগে ভারতীয় ক্রিকেট দল হোক কিংবা রনজি ট্রফি, কোনও একটা নির্দিষ্ট জোনের ক্রিকেটাররাই রাজত্ব করতেন। রাঁচির মতো একটা ছোটো শহর থেকে উঠে এসেও যে ধোনি লম্বা লম্বা ছক্কা হাঁকাতেন, সেটাই সকলের হৃদয় জয় করে নিয়েছিল। সেকারণে ধোনি যখনই মাঠে নামতেন, সবাই মনে করতেন বোধহয় পাশের বাড়ির ছেলেটা খেলতে নেমেছে। ধোনির ক্যারিশমা দেশের তরুণ প্রজন্মকে যে যথেষ্ট আকৃষ্ট করেছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁদের মনে এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে তাঁরাও একদিন না একদিন দেশের মহানগরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে।