অ্যাপশহর

কেন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই অবতরণ করবে চন্দ্রযান-২?

সোজা কথায়, বিষুবরেখার কাছাকাছি অবতরণ করা সহজ। নিরাপদও। কারণ, ভূখণ্ড এবং তাপমাত্রা-- দুইই সহনীয়। যে কারণে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। তা ছাড়া, চাঁদের মাটি এখানে মসৃণ।

EiSamay.Com 7 Sep 2019, 12:42 am
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-২ আর কয়েক ঘণ্টা পর এমন এক জায়গায় অবতরণ করবে, যেখানে অতীতে আর কোনও মহাকাশযান পৌঁছতে পারেনি। এই অবতরণ হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে। ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরাও জানেন চাঁদের দক্ষিণ মেরু অভিযান মোটেও সহজ কাজ নয়। তাই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো যদি সফল হয়, নিঃসন্দেহে মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।
EiSamay.Com Chandrayaan-2


চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণকারী ২৯ তম মহাকাশযান হতে চলেছে চন্দ্রযান-২। শুক্রবার রাত দেড়টা-দুটো নাগাদ এই ল্যান্ডিং ঘটবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে, চাঁদের বিষুবরেখার ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের কাছাকাছি। চাঁদের দুই মেরু অবস্থিত ৯০ ডিগ্রি অক্ষাংশে।

১ সেন্টিমিটার/সেকেন্ড গতিবেগে ১৪দিন চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরবে রোভার 'প্রজ্ঞান'

এতদিন পর্যন্ত চাঁদে যত মহাকাশযান নেমেছে, সবই বিষুবরেখার আশপাশে। বিষুবরেখা থেকে সবচেয়ে দূরে গিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র সার্ভেয়র ৭। সময়টা ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি। মোটামুটি ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের কাছে অবতরণ করেছিল সার্ভেয়র। চিনের পাঠানো চ্যাং’ই ৪ অবতরণ করেছিল ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের কাছাকাছি। চাঁদের যে অংশ পৃথিবীর দিকে মুখ করে নেই, সেখানে পৌঁছতে পারা প্রথম মহাকাশযান এটিই।

সোজা কথায়, বিষুবরেখার কাছাকাছি অবতরণ করা সহজ। নিরাপদও। কারণ, ভূখণ্ড এবং তাপমাত্রা-- দুইই সহনীয়। যে কারণে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। তা ছাড়া, চাঁদের মাটি এখানে মসৃণ। সমতল। খাড়াই কম বলে, টিলা ও গহ্বরও কম। সূর্যের আলোও পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছয়। ফলে, সৌরশক্তি-চালিত যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

'চন্দ্র অভিযানের আতঙ্কের শেষ ১৫ মিনিট', উদ্বেগের প্রহর গুনছেন ইসরো প্রধান

কিন্তু, চাঁদের মেরু অঞ্চলের ছবিটা একেবারেই অন্যরকম। বিশেষত, দক্ষিণ মেরুর। অনেক অংশই চির অন্ধকারে ঢাকা। কারণ, সূর্যের আলো সেখানে পৌঁছয় না। তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে শূন্যের ২৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত নীচে। অসম্ভব ঠান্ডার কারণে যন্ত্রপাতি চালনাও অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ছোটবড় গহ্বরে অভিযান-পথও বিপদসঙ্কুল।

১ সেন্টিমিটার/সেকেন্ড গতিবেগে ১৪দিন চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরবে রোভার 'প্রজ্ঞান'

এই কারণেই আজ পর্যন্ত অনাবিষ্কৃতই রয়ে গিয়েছে চাঁদের মেরু অঞ্চল। কিন্তু, এর আগের অনেক ক’টি অরবিটার মিশন এই ইঙ্গিত ছিল, এই অঞ্চলগুলিতে অনুসন্ধান করতে পারলে নানা অজানা তথ্য মিলবে। বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা হওয়ার ফলে এখানে মাটির নীচে যা-ই থাক, মোটামুটি অপরিবর্তিত অবস্থাতে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। যার জন্য এখান থেকে সংগ্রহ করা পাথর এবং মাটি পরীক্ষা করলে, সৌরজগতের গোড়ার কথা কিছু জানা গেলেও যেতে পারে।

১ সেন্টিমিটার/সেকেন্ড গতিবেগে ১৪দিন চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরবে রোভার 'প্রজ্ঞান'

ফলে, বোঝাই যাচ্ছে কতটা ঝুঁকি নিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-২কে পাঠানো হয়েছে। চাঁদের উত্তর মেরুতে বিপুল জলভাণ্ডার থাকার কথা আগেই শুনিয়েছিল ইসরো। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কি আরও বড় জলের ভাণ্ডার রয়েছে? সেই উত্তর মিলতে পারে আর কয়েকটা দিনের মধ্যেই।

পরের খবর