অ্যাপশহর

দায়িত্ব বনাম আদর্শের লড়াই শুরু

সংসদ ভবনে সামান্য সময়ের ব্যবধানে মনোনয়ন পত্র পেশ করলেন উপরাষ্ট্রপতি পদে দুই প্রার্থী বেঙ্কাইয়া নাইডু এবং গোপালকৃষ্ণ গান্ধী৷

Ei Samay 19 Jul 2017, 12:35 pm
গৌতম হোড় ■ নয়াদিল্লি
EiSamay.Com venkaiah naidu is ndas vice presidential candidate
দায়িত্ব বনাম আদর্শের লড়াই শুরু

সংসদ ভবনে সামান্য সময়ের ব্যবধানে মনোনয়ন পত্র পেশ করলেন উপরাষ্ট্রপতি পদে দুই প্রার্থী বেঙ্কাইয়া নাইডু এবং গোপালকৃষ্ণ গান্ধী৷ একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে বড় সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার জন্য নিজেকে প্রস্ত্তত করছেন, অন্য জন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিকল্প মতাদর্শের কথা জনসমক্ষে আনবেন বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷

বেঙ্কাইয়া তাঁর এতদিনের জীবনযাপনের ধারা পরিবর্তন করে , রাজনীতির আঙিনা ছেড়ে সাংবিধানিক দায়িত্বের ঘেরাটোপে বন্দি হওয়ার অপেক্ষায়৷ গোপালকৃষ্ণর সেই দায় নেই৷ কারণ , তিনি তো জেতার জন্য লড়ছেন না , লড়ছেন , নিজের ভাবনাকে তুলে ধরতে৷ তাই মনোনয়নপত্র পেশ করে নিজের ভাবনাকে তুলে ধরার তাগিদে ছোটখাট সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেললেন৷ বেঙ্কাইয়াও সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করলেন ঠিকই , কিন্ত্ত নিজের কথা বললেন৷ আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন , কোনও সওয়াল -জবাব হবে না৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী , বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ , এনডিএ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বেঙ্কাইয়া মননোয়নপত্র পেশ করেছেন৷ আর সনিয়া গান্ধী , মনমোহন সিং , শরদ যাদব , ডেরেক ও ’ব্রায়েন , সীতারাম ইয়েচুরিদের নিয়ে গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও মনোনয়ন পেশ করলেন৷ তবে গোপালকৃষ্ণ এ দিন নিজের দিকে বিজেডিকে টেনে এনেছেন৷

নবীন পট্টনায়েক ও গোপালকৃষ্ণ সহপাঠী ছিলেন৷ উপরাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী প্রার্থী এ দিন ফোন করেন তাঁর বন্ধুকে৷ কারণ , এ দিন সকালেই বিজেপি -র দিকে ঝুঁকে থাকা বিজেডি সাংসদ জয় পান্ডা টুইট করে বলেছিলেন , তাঁর বেঙ্কাইয়া নাইডুকেই পছন্দ৷ যখন গোপালকৃষ্ণ মনোনয়নপত্র পেশ করছেন , তখনই খবর এসে যায় , নবীন পট্টনায়েক তাঁকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে ১৯ দলের সমর্থন তিনি পাচ্ছেন৷ তবে এরপরও তাঁর জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ বেঙ্কাইয়া সেটা জানেন৷ তাই তিনি এ দিন বলেছেন , ‘এত দিন ধরে লোকের মধ্যে ঘোরার পর আমায় একটা নির্দিষ্ট সাংবিধানিক দায়িত্ব নিতে হবে৷

আমার আশা , ন্যায়বিচার করতে পারব৷ মোদীজির প্রতি, অমিত শাহর প্রতি কৃতজ্ঞ৷ আমার প্রচার করার কোনও দরকার নেই৷ লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদরা ভোট দেবেন৷ উপরাষ্ট্রপতির আলাদা গুরুত্ব আছে৷ ভারতের শক্তি হল তার সংসদীয় ব্যবস্থা৷ তা আরও শক্তিশালী করাটা আমার লক্ষ্য৷ রাধাকৃষ্ণন , জাকির হোসেন , হিদায়েতউল্লা , বেঙ্কটরামন , শেখাওয়াতের মতো নেতারা উপরাষ্ট্রপতি হয়েছেন৷ আমি দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত৷ সংস্থার মর্যাদা রাখব৷ রাজ্যসভা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা৷ ঐতিহ্য ও মান বজায় রাখব৷ ’বাস্তবটা জানেন বলেই গোপাল কৃষ্ণ বলেছেন , ‘আমি সামান্য নাগরিক৷ কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নই৷ নির্দলীয় , স্বতন্ত্র৷

আমার বিচার আমার নিজের৷ জনতা ও রাজনীতির মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে৷ সেটা আমি কম করতে চাই৷ দেশের সমস্যা তা নাগরিকের থেকে বেশি কেউ জানে না৷ নাগরিকের অনুভব থেকেই সমাধান আসবে৷ ’ সেই অনুভবই সামনে রাখতে গিয়ে গোপালকৃষ্ণ বলেছেন , ‘আমরা একটা বিভাজনের সময়ে চলছি৷ বিভাজনের প্রয়াস চলছে৷ ’ তারই প্রতিবাদ করতে চান তিনি৷ বেঙ্কাইয়া বলছেন , ‘একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চাই , আমি সাধারণ মানুষ৷ কৃষক পরিবার থেকে এসেছি৷ সাধারণ জায়গা থেকে এখানে আসার পিছনে দল ও লোকের ভূমিকা রয়েছে৷ আমি মাকে হারিয়েছি দেড় বছরে৷ দলকে মা -র মতো দেখেছি৷ দলই আমায় বড় করেছে৷ দল ছাড়াটা দুঃখের৷ তাই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম৷ আমি চেয়েছিলাম , মোদী ২০১৯ -এ আবার আসুন৷ তারপর সমাজসেবা করব৷ কিন্ত্ত ভাগ্যে অন্য কথা লেখা থাকে৷ এখন আমি দলের ওপরে৷ আর বিজেপির সদস্য নই৷ সাংসদ থাকছি৷ ভোট রয়েছে৷ তারপর সেই দায়িত্বও ছাড়ব৷ এনডিএ ও অন্য দলের নেতাদের সঙ্গ ছাড়ছি৷ আমি দলের অফিসে যাব না৷ ’ দল ছাড়াটা তাঁর কাছে এতটাই বেদনার যে, তিনি কেঁদেই ফেলেন৷ গোপালকৃষ্ণ আবার এই প্রশ্নের মুখে পড়লেন , তিনি কেন ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির বিরোধিতা করেছিলেন৷

মহাত্মা গান্ধীর নাতির জবাব , ‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি ফাঁসির বিপক্ষে৷ আমি মনে করি মৃত্যুদণ্ড থাকা উচিত নয়৷ গান্ধীজিও তাই মনে করতেন৷ তাঁর হত্যার পর গান্ধীজির দুই ছেলে সরকারকে বলেছিলেন , নাথুরাম গডসের যেন ফাঁসি না হয়৷ আমি চিন্তার সেই ঐতিহ্য বহন করছি৷ ’ যিনি অহিংসাকে হাতিয়ার করে স্বাধীনতা আনলেন , সেই দেশেই হিংসা বড় বেশি করে ছড়াচ্ছে৷ জঙ্গিদের হিংসা , আন্দোলনকারীদের হিংসা , পুলিশের লাঠি -গুলি চালানোর অভ্যাস , এর মধ্যে চিন্তা ও চেতনায় একজন অন্য পথে হাঁটতে পারেন , সেটা মিডিয়া মনে রাখছে না৷

এই সময় , নয়াদিল্লি : উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনও প্রচারের মধ্যেই যাচ্ছেন না এনডিএ -র প্রার্থী বেঙ্কাইয়া নাইডু৷ তবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী গোপালকৃষ্ণ গান্ধী আবার অভিনব সব প্রচার পরিকল্পনা সেরে ফেলেছেন৷ বিরোধী নেতাদের কাছে গোপালকৃষ্ণ অনুরোধ করেছিলেন , তিনি প্রত্যেক সাংসদকে পোস্টকার্ডে সামান্য কিছু লিখে পাঠাতে চান৷ আজকের দিনে পোস্টকার্ড প্রচার , তাও সাংসদদের৷ কিন্ত্ত গোপালকৃষ্ণ এই ইচ্ছের কথা প্রকাশ করা মাত্রই সঙ্গে সঙ্গে জিপিও থেকে এক হাজার পোস্টকার্ড কেনা হয়ে গিয়েছে৷ বিরোধী এক নেতা পোস্টকার্ড কিনে নিয়ে তৈরি৷ গোপাল কৃষ্ণ তাঁর নিজের কথা পোস্টাকার্ডে লিখে ডাকঘরে জমা করবেন৷ আজকের ক্যুরিয়ার ও স্পিড পোস্টের যুগে পোস্টাকার্ড খুব সামান্য ব্যবহার হয়৷ হয়ত পুরোনো মূল্যবোধের কথা প্রচার করবেন বলে গোপালকৃষ্ণও এই প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাইছেন৷ একেবারে সাধারণের ব্যবহার্য দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা যোগাযোগের মাধ্যমকে তিনি আঁকড়ে ধরেছেন৷ তিনি এ দিন বারবার বলেছেন , ‘আমি খুবই সধারণ মানুষ৷ ’ সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকা এক অনন্যসাধারণ মানুষের নাতি হওয়ার জন্য লোকের প্রত্যাশার চাপ কাটাতেই হয়ত গোপালকৃষ্ণকে বলতে হচ্ছে , তিনিও সাধারণ মানুষের একজন প্রতিনিধি৷ পোস্টকার্ড ব্যবহারের মধ্যে চমক আছে ঠিকই , কিন্ত্ত তাতে বিস্তারিত কিছু লেখা সম্ভব নয়৷ তার জন্য তিনি নিয়েছেন অন্য ব্যবস্থা৷ প্রতিটি সাংসদের কাছে তিনি নিজের বিস্তারিত বক্তব্যও পৌঁছে দেবেন৷ তবে সেটা যাবে চিঠি বা ই মেলে৷ সেই সঙ্গে একটা ভিডিও তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছে৷ দীর্ঘ চিঠিতে যা লিখবেন গোপালকৃষ্ণ , ভিডিয়োতে সেটাই বলবেন৷ সেই ভিডিয়ো সাংসদদের কাছে পাঠানো হবে৷ তাছাড়া সেটা জনসমক্ষেও থাকবে৷ মনোনয়নপত্র পেশ করে গোপালকৃষ্ণ বলে দিয়েছেন , তাঁর ভাবনাটা কোনও দলের ভাবনা নয়৷ বিরোধীরা তাঁকে বেছে নিয়েছেন বলে এমন নয় যে, তিনি তাঁদের শেখানো কথা বলবেন৷ তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা নন৷ তিনি সাধারণ নাগরিক হিসাবে নিজের মত রাখবেন৷ সেই মতটা একান্তভাবেই তাঁর মত৷ এই যে পোস্টকার্ড, চিঠি , ই মেল , ভিডিয়োতে সাংসদদের বার্তা দেবেন , সেটাও পুরোপুরি তাঁর মত৷ নিজের কথা জানাবেন বলেই তো তিনি প্রার্থী হয়েছেন৷ আর একটা কথা গোপালকৃষ্ণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন , তিনি এনডিএ প্রার্থী বেঙ্কাইয়া নাইডুর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলবেন না৷ কারণ , কোনও ব্যক্তির বিরোধিতা করাটা তাঁর লক্ষ্য নয়৷

বেঙ্কাইয়া নাইডু অবশ্য বলে দিয়েছেন তিনি প্রচারের মধ্যে নেই৷ যেহেতু এই নির্বাচনে কেবলমাত্র লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদরা ভোট দিতে পারেন , তাই তিনি আর প্রচারের মধ্যে যাবেন না৷ কোনও সওয়াল -জবাবের মধ্যেও তিনি থাকবেন না৷ এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময় বেঙ্কাইয়া স্পষ্ট বলে দেন তিনি কারও বিরুদ্ধে কোনও কথা বলবেন না৷ এখন আর তিনি দলের সঙ্গে যুক্ত নন৷ তিনি সাংসদ থাকছেন ভোট দেবেন বলে৷ পরে সেটাও ছেড়ে দেবেন৷ আগামী ১১ অগস্ট বেঙ্কাইয়া নাইডু উপরাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবেন৷ তাই তিনি এখন স্বভাবতই সংযত৷ তবে বেঙ্কাইয়া ও গোপালকৃষ্ণ অনেক দল ও সাংসদকে বিপাকে ফেলে দিয়েছেন৷ বেঙ্কাইয়া হলেন সেই ধরনের রাজনীতিক যাঁকে সব দলের নেতা পছন্দ করেন ও সুসম্পর্ক রাখেন৷ ফলে তিনি প্রার্থী হওয়ায় বিরোধীদের মধ্যে অনেকে কিছুটা দোটানায় পড়েছেন৷ আবার গোপালকৃষ্ণও জানিয়েছেন , সরকারপক্ষের অনেকে তাঁকে বলেছেন , তিনি প্রার্থী হওয়ায় তাঁদের বিড়ম্বনা বেড়েছে৷ কারণ , তাঁরাও গোপালকৃষ্ণকে খুবই পছন্দ করেন৷ তবে ভোটটা সাধারণত এই ধরনের আবেগের বাইরে গিয়ে দলের লাইন মেনে হয়৷ হুইপ না থাকলেও দলের নির্দেশই সচরাচর মানেন সাংসদরা৷

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল