অ্যাপশহর

সন্ত্রাসের ইতিহাস ভুলে ভোটে ত্রিপুরা

কয়েক দশক আগে এমনই এক ভোটের দিন অন্তত ১১ জনকে খুন করে ফেলে রাখা হয়েছিল সিপাহিজলা জেলার গর্বাদি সিনাই নদীর সেতুতে৷

EiSamay 19 Feb 2018, 11:43 am
জয় সাহা ■ আগরতলা
EiSamay.Com tripura assembly elections 78 per cent voter turnout
সন্ত্রাসের ইতিহাস ভুলে ভোটে ত্রিপুরা

কয়েক দশক আগে এমনই এক ভোটের দিন অন্তত ১১ জনকে খুন করে ফেলে রাখা হয়েছিল সিপাহিজলা জেলার গর্বাদি সিনাই নদীর সেতুতে৷ সত্কার পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি সে দিন৷ বাংলাভাষীদের মনে ভয় তৈরি করতে ভোট মিটে যাওয়ার পরও পচে গলে যাওয়া লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল৷ ত্রিপুরার নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়া সন্ত্রাসের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল না দ্বাদশ বিধানসভা নির্বাচনে৷ আদিবাসী অধ্যুষিত টকারজলা বা অন্যান্য কয়েকটি কেন্দ্রে দু-একটি বিক্ষিন্ত ঘটনা বাদ দিলে নির্বাচন ছিল প্রকৃত অর্থেই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ৷ শাসক থেকে বিরোধী কোনও দলকেই সন্ত্রাস , গোলমাল , ছাপ্পা , বুথ জ্যামের মতো কোনও অভিযোগ করতে দেখা গেল না৷ রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৮ .৫০ %৷ রাত ১০ পর্যন্ত অনেক বুথে ভোট হয়েছে৷ সিপিএমের অভিযোগ ৫১৯টি ইভিএম খারাপ হয়ে গিয়েছে৷

তবে এই আয়োজনের মধ্যে রবিবার সারাদিন ছন্দপতন ঘটাল রাজ্য জুড়ে ইভিএমে ব্যাপক গোলমাল৷ একবার দু’বার নয় , বারবার ইভিএম বিকল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ ফলে কোথাও ভোট শুরুই হল কয়েক ঘণ্টা দেরিতে৷ অনেক বুথে ভোট শুরু হয়ে যাওয়ার পর ইভিএমে গোলমাল দেখা যায়৷ ফলে রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত ভোট চলে একাধিক কেন্দ্রে৷ নির্বাচন কমিশনও এই ত্রুটি মেনে নিয়েছে৷ তাদের ব্যাখ্যা , ত্রিপুরা জুড়ে ভিভিপ্যাট দেওয়া ইভিএমে ভোট হয়েছে৷ ভিভিপ্যাট সংক্রান্ত গোলযোগের কারণেই এই সমস্যা হয়েছে৷ যদিও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক শ্রীরাম তরুণীকান্ত বলেছেন , ‘অনেক কেন্দ্রে ভোট শুরু করতে দেরি হয়েছে৷ অনেক জায়গায় ভোট স্থগিত রাখতে হয়েছে৷ ’তবে কমিশনের ভূমিকা , কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের ভূমিকা এবং সার্বিক আইন -শৃঙ্খলা নিয়ে কোনও পক্ষই অভিযোগ করেননি৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজের কেন্দ্রে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন , ‘মানুষ উত্সবের মেজাজে ভোট দিচ্ছেন৷ সব ঠিকই আছে৷ ’ বিজেপি রাজ্য সভাপতি বিপ্লব দেব বলেছেন , ‘ভোটের আগের রাতে সিপিএম কোনও কোনও এলাকায় ভোটারদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে৷ কিন্ত্ত মানুষই ওদের চক্রান্ত রুখে দিয়েছে৷ ’ তৃণমূলের রাজ্য নেতা আশিস লাল সিংহও কোনও গোলমালের অভিযোগ করেননি৷

ত্রিপুরার ভোট শান্তিপূর্ণ করাই ছিল কমিশনের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ৷ খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ত্রিপুরায় এসে কমিশনকে বিজেপির সরকার তৈরি না -হওয়া পর্যন্ত শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য , একটা সময় ছিল উত্তরপ্রদেশ , বিহারের মতো রাজ্যে নির্বাচনী সন্ত্রাস নিয়ে তটস্থ থাকতে হত কমিশনকে৷ পরে নব্বইয়ের দশক থেকে সেই চিত্র পরিবর্তন হতে থাকে৷ ভোট সন্ত্রাসে ক্রমশ উপরে উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের স্থান৷ পাল্লা দিত ত্রিপুরা৷ ২০১৩ -এ বিধানসভা ও পরের বছর লোকসভা ভোটের সময়ও নানা প্রান্তে অশান্তি তৈরি হয়েছিল৷ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধর বলেন , ‘এই প্রথম ত্রিপুরা শান্তিপূর্ণ ভোট দেখল৷ লাল সন্ত্রাস ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন , কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা দারুণ৷ ’

তবে আদিবাসী অধ্যুষিত টকারজলা কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি বুথে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আইপিএফটি এবং বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছে সিপিএম৷ ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রমেন্দ্র দেববর্মা বলেন , ‘চারটি বুথে আমরা কোনও এজেন্ট দিতে পারিনি৷ ভোটের আগের রাত থেকে আমাদের ভোটারদের ভয় দেখানো , পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ আমার এক পোলিং এজেন্টকেও কাটারির কোপ মেরে রক্তাক্ত করেছে আইপিএফটি৷ ’ এই কেন্দ্রে আবার প্রার্থী আইপিএফটি প্রধান এন সি দেববর্মা নিজে৷ তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন , ‘হারার ভয়ে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে৷ আমি নিজে আমার কেন্দ্রে ছিলাম৷ সিপিএমের কাউকে আমরা বাধা দিইনি৷ ’

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল