অ্যাপশহর

অসাংবিধানিক, অবৈধ, ইসলামের অংশও নয়, ঐতিহাসিক রায়ে জানাল সুপ্রিম কোর্ট

মর্জিমাফিক এক নিশ্বাসে তিন বার তালাক বললেই আর বিচ্ছেদ অনিবার্য নয়৷ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছে৷

Ei Samay 23 Aug 2017, 8:06 am
অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় ■ নয়াদিল্লি
EiSamay.Com supreme court of india outlaws practice of instant triple talaq by muslim men
অসাংবিধানিক, অবৈধ, ইসলামের অংশও নয়, ঐতিহাসিক রায়ে জানাল সুপ্রিম কোর্ট

মর্জিমাফিক এক নিশ্বাসে তিন বার তালাক বললেই আর বিচ্ছেদ অনিবার্য নয়৷ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছে৷ মুসলিম মহিলাদের অধিকার সুনিশ্চিত করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে , ১৪০০ বছর ধরে চলে আসা এই তাত্ক্ষণিক তালাক প্রথার কোনও বৈধতা নেই৷ এটি ইসলামের অংশও নয়৷ ভারতীয় সংবিধানে সমানাধিকারের চড়ান্ত পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে একে ‘পাপ ’ ও ‘অবৈধ ’ বলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা৷

সেই জন্যই সুন্নি মুসলিমদের তাত্ক্ষণিক তিন তালাক বা তালাক -ই -বিদ্দত কে অসাংবিধানিক বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট৷ প্রধান বিচারপতি জে এস কেহরের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ৩:২ অনুপাতে মঙ্গলবার এই রায় দেয় দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়৷ পাশাপাশি এ -ও স্পষ্ট করে দেয় , আগামী ছ’মাস ‘তালাক -তালাক -তালাক ’ বললেই কোনও বিচ্ছেদ হবে না৷ এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল৷ এই ৬ মাসের মধ্যে সরকারকে আইন প্রণয়ন করতে হবে৷ সেই সময়ের মধ্যে যদি এই আইন না হয় , তা হলেও এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে৷ যদিও ৩৯৫ পাতার এই ঐতিহাসিক রায় দেওয়ার সময় পাঁচ বিচারপতি সহমত ছিলেন না৷ প্রধান বিচারপতি কেহর ও বিচারপতি আব্দুল নাজিব তিন তালাক বাতিলের পক্ষে ছিলেন না৷ কেহর বলেন , ‘হানাফি স্কুলের সুন্নিদের জন্য তিন তালাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাঁদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই এটিকে গ্রহণ করতে হবে৷ তিন তালাক সংবিধানের ২৫ , ১৪ ও ২১ ধারার বিরোধী নয়৷
পার্সোনাল ল ’র অংশ হিসেবে এটিকে পালন করা হলে সাংবিধানিক নৈতিকতার ভিত্তিতে বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপে সেটিকে খারিজ করা যায় না৷ তিন তালাককে যদি বাতিল করতেই হয় , তবে আইনি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন৷ ’ তা সত্ত্বেও অবশ্য তাঁরা বলেন , আপাতত ছ’মাস নিষিদ্ধ হোক এই রীতি৷ এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত ছিল না অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি )৷ তারা শুনানির সময় থেকেই বলে আসছিল যে , মুসলিম ব্যক্তিগত আইনে কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না কোর্ট বা সরকার৷ বিচারপতিরা বাংলাদেশ -পাকিস্তান সহ ২২টি ইসলামি রাষ্ট্রের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন , ‘সে -সব দেশেও তালাক -ই -বিদ্দত বৈধ নয়৷

সেখানেও আইনি পথেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হয়েছে৷ তা হলে ভারতে কেন তা নিষিদ্ধ হবে না ?’ এই ক্ষেত্রে পাঁচ আইনজীবী সহমত পোষণ করলেও অন্য ক্ষেত্রে ভিন্ন মত ছিলেন বাকি তিন আইনজীবী৷ বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ এবং বিচারপতি উদয় ললিত ও বিচারপতি আর এফ নরিমান তিন তালাকের বিরোধিতা করেন৷ জোসেফ বলেন , ‘আমি প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই৷ ইসলামি আইনের চারটি উত্স রয়েছে৷ কোরান ইসলামি আইনের প্রথম উত্স৷ অন্য উত্সগুলো কোরানে যা আছে , তারই পরিপূরক৷ সেক্ষেত্রে কোরানে যা লেখা আছে , তার অতিরিক্ত কিছু থাকতে পারে না৷ কোরান বিয়েকে মান্যতা দেয়৷ সেক্ষেত্রে তালাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধাপ মেনে চলা প্রয়োজন৷ তিন তালাক কোরানের বিরোধী , আর তাই শরিয়তেরও বিরোধী৷ ’

এর পরে নিজের রায়দান করতে গিয়ে বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ এবং বিচারপতি উদয় ললিতকে সমর্থন করে বিচারপতি নরিম্যান বলেন , ‘তিন তালাক বিবাহ বিচ্ছেদের অননুমোদিত একটি পন্থা৷ যে হানিফি স্কুলের বিশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে সেই বিশ্বাসেও তিন তালাককে পাপ বলা হয়েছে৷ কাজেই সেই তালাকের শিকার হয়ে মহিলারা যখন ন্যায়বিচারের জন্য আসবেন , তখন আদালতের পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব নয়৷ দেশের সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী যে কোনও নাগরিকের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে এই তিন তালাক৷ ’ তাঁরা বলেন , ‘তিন তালাক যেহেতু তাত্ক্ষণিক ও অপরিবর্তনীয় , তাই স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা মেটানোর উদ্যোগও দুই পরিবারের কেউ নিতে পারবেন না , যা যে কোনও বিবাহ বাঁচানোর জন্য অতি প্রয়োজন৷ ’

বহু দিন ধরেই আইনজীবী , মানবাধিকার কর্মীরা বলে আসছেন তালাক -ই -বিদ্দতের ক্ষেত্রে মুসলিম পার্সোনাল ল ’তে মহিলাদের কোনও অধিকার নেই , তা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হোক৷ যদিও ধর্মীয় নেতারা বলেন , এই তাত্ক্ষণিক তালাকও দু’পক্ষই দিতে পারেন৷ কিন্ত্ত সে কথা মানতে চায় না অপর পক্ষ৷ তাঁদের বক্তব্য , পুরোটাই একতরফা৷ স্ত্রীকে স্বামীরা তালাক দেন৷ এমনকী ফোন , এসএমএস , হোয়াটসঅ্যাপ , ই -মেলেও ‘তালাক তালাক তালাক ’ লিখে স্ত্রীকে তালাক দেন অনেকেই৷ এটা ইসলামের অংশ নয়৷ তালাক -ই -বিদ্দত আদৌ ইসলামের অংশ কি না , তা নিয়ে এই প্রথম হস্তক্ষেপ করল শীর্ষ আদালত৷ প্রধান মামলাকারী ছিলেন তিন তালাকপ্রান্ত সায়রা বানো৷ এই রায়কে মুসলিম মহিলাদের ক্ষমতায়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবেই দেখছেন তাঁরা৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন , এই রায়ের ফলে সরকার এ বার অভিন্ন দেওয়ানি বিধির দিকে এগোবে কি না , সেটাও একটা বড় প্রশ্ন৷

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল