অ্যাপশহর

মেয়ের মুখ দেখা হল না কুন্দনের

সামনের বছরই অবসর নেওয়ার কথা ছিল হাবিলদার কে পালানির। ফেরা হল না আর। সূর্যপেট শহরের বিদ্যানগর মহল্লায় বেড়ে ওঠা সন্তোষের। ১৬ বিহার রেজিমেন্টের কম্যান্ডিং অফিসারের সেনার পাঠ নেওয়া হয় কোরুকোন্ডা সৈনিক স্কুলে।

EiSamay 17 Jun 2020, 11:32 am
নয়াদিল্লি ও কলকাতা: সদ্য খবরটা এসে পৌঁছেছে বাড়িতে। চিনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তাঁদের সেনা জওয়ান ছেলে। চরম আঘাত পেয়েও ভেঙে পড়েননি নিহত কর্নেল সন্তোষ বাবুর মা মঞ্জুলা। দৃঢ় গলায় তিনি জানালেন, ‘দেশের জন্য আমার ছেলে শহিদ হয়েছে। এর জন্য আমার গর্বের শেষ নেই। তবু মা তো ছেলেকে হারানোর বেদনা ভুলি কী করে।’ তেলঙ্গানার নালগোন্ডার সূর্যপেট শহরে ততক্ষণে ঢল নেমেছে প্রতিবেশীদের। তাঁর স্ত্রী সন্তোষী, ন’বছরের মেয়ে অভিনব এবং চার বছরের ছেলে অনিরুদ্ধ দিল্লির বাসিন্দা।
EiSamay.Com several indian army personnel killed
দেশের জন্য প্রাণ দিলেন যাঁরা।


সূর্যপেট শহরের বিদ্যানগর মহল্লায় বেড়ে ওঠা সন্তোষের। ১৬ বিহার রেজিমেন্টের কম্যান্ডিং অফিসারের সেনার পাঠ নেওয়া হয় কোরুকোন্ডা সৈনিক স্কুলে। সেখান থেকে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি। তার পর ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি। প্রথম পোস্টিং ছিল উপদ্রুত উপত্যকায়। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বি উপেন্দর। তাঁর কথায়, ‘আমার ছেলে সীমান্তে দেশের জন্য লড়ে শহিদ হয়েছে। বাবা হিসেবে এর চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে! তবে একটাই আক্ষেপ বড় অল্প বয়সে চলে যেতে হল ওকে।’ সন্তোষের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও।

সামনের বছরই অবসর নেওয়ার কথা ছিল হাবিলদার কে পালানির। বাড়ি ফিরলেই বলতেন, চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষে। এ বার গ্রামে এসে পাকাপাকি থাকতে শুরু করবেন। সেই ফেরা হল না। সীমান্ত সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন তিনিও। পালানির ছোটবেলা কেটেছে চরম দারিদ্রে। তামিলনাড়ুর রামনাথপুরমের একটি প্রত্যন্ত কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা পালানি ১৮ বছর বয়সে সেনায় যোগ দেন। ২২ বছর ছিলেন বাহিনীতে। স্ত্রী ভনথি দেবী, ১০ বছরের ছেলে আর ৮ বছরের মেয়ে গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। তাঁর এক আত্মীয় জানিয়েছেন, পালানি ফিরলে গ্রামের চেহারাটাই বদলে যেত। সবার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতেন। ছোটদের সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়তেন মাঠে। নিয়ম করে বাড়িতে রান্নাও করতেন। চাইতেন তাঁর সন্তানরাও সেনায় যোগ দিক। লেখাপড়ায় প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল শহিদ ওই জওয়ানের। দ্বাদশ পাশ করে সেনায় যোগ দেওয়ার পর দূরশিক্ষায় ইতিহাস নিয়ে বিএ পাশ করেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে বিএড-ভর্তি করেন। ওই কোর্স শেষ হওয়ার পর স্নাতকোত্তরেও স্ত্রীকে ভর্তি করেছিলেন পালানি। তাঁর ভাইও সেনায় কর্মরত।

মেয়ের বয়স মাত্র তিন সপ্তাহ। তাকে দেখতে আসার কথা ছিল। তবে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ায় ছুটি মেলেনি। সেই মেয়ের মুখ আর দেখা হল না সেপাই কুন্দনকুমার ওঝার। ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের প্রান্তিক কৃষক পরিবারের ছেলে কুন্দন (২৪)। ১৬ বিহার ব্যাটেলিয়নের এই জওয়ানের বছর দুই আগে বিয়ে হয়। পোস্টিং ছিল লাদাখে। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। কুন্দনের বাবা রবিশঙ্কর ওঝা প্রান্তিক চাষি। তাঁর দুই ভাই এবং এক বোন রয়েছে।

এ ছাড়াও লাদাখে নিহত হয়েছেন রাজেশ ওঁরাও নামে এক জওয়ান। তাঁর বাড়ি বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার বেলগাড়িয়ায়। ২০১৫ সালে সেনা বাহিনীতে যোগ দেন রাজেশ।

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল