অ্যাপশহর

দিল্লির স্বীকৃতি, শিশুবান্ধব পঞ্চায়েত সন্দেশখালিতে

উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি-১ ব্লকের সরবেরিয়া আগরহাটিকে শিশুবান্ধব গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বীকৃতি দিল কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক। গোটা দেশ থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে ২২টি পঞ্চায়েতকে।

EiSamay 18 Oct 2019, 9:37 am
কমলেশ চৌধুরী
EiSamay.Com recognition of delhi


বাংলার পঞ্চায়েতের মুকুটে নতুন পালক। ১০০ দিনের কাজে বেশ কয়েকবার সেরার শিরোপা পেয়েছে রাজ্য। এ বার আর বড়দের নয়, পুরস্কার এল ছোটদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি-১ ব্লকের সরবেরিয়া আগরহাটিকে শিশুবান্ধব গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বীকৃতি দিল কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক। গোটা দেশ থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে ২২টি পঞ্চায়েতকে।

এই পুরস্কারপ্রাপ্তি অনেক দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া যে অঞ্চলে পাচারের প্রবণতা বেশি, সন্দেশখালি তার মধ্যে অন্যতম। এই ধরনের অপরাধ কমাতে শিশুসুরক্ষা কমিটির উপর জোর দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। যাতে গ্রামবাসীদের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে নাবালক, নাবালিকাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায়। দ্বিতীয়ত, লোকসভা নির্বাচনের সময়েও রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল সন্দেশখালি। সেই ধূসর প্রেক্ষাপটে পুরস্কারপ্রাপ্তি রুপোলি রেখা তো বটেই। বস্তুত সরবেরিয়া আগরহাটির পঞ্চায়েত প্রধান বসিরহাট অঞ্চলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা শেখ শাহজাহান নিজেই। ২৩ অক্টোবরের পঞ্চায়েতের হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন তিনি। তৃতীয়ত, পঞ্চায়েতের কাজ হিসেবে সাধারণ ভাবে রাস্তা, নিকাশি, ১০০ দিনের কাজকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত শিশুসুরক্ষায় এগিয়ে এলে কাজ যে ভালো হয়, সরবেরিয়া আগরহাটি তার উদাহরণ। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, 'এটা সরাসরি পঞ্চায়েত দপ্তরের কাজ নয়। তবে কোনও পঞ্চায়েত যদি গ্রামের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে, তাহলে আমি গর্বিত। চাইব, অন্যরাও করুক।'

শিশুবান্ধব পঞ্চায়েত বলতে ঠিক কী বোঝায়? পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক চিঠিতে লিখেছে, শিশুরা যাতে সব ধরনের অধিকার পায়, তার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। যেমন, স্কুলছুট, পাচার, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম আটকানো। পোলিয়ো কর্মসূচি, মিড ডে মিল প্রকল্প সফল করা। জন্মের আগেও যাতে শিশুর অধিকার সুনিশ্চিত হয়, তা-ও দেখা। যেমন, আইসিডিএস প্রকল্পে অন্তঃসত্ত্বাদের পুষ্টির বন্দোবস্ত করা। হাসপাতালে প্রসব করানো। পুরস্কারপ্রাপ্তি হয়েছে এই মাপকাঠিতেই।

গোটা কাজটা নানা স্তরে হয়। যেমন, গ্রাম সংসদ, ব্লক এবং জেলাস্তরে রয়েছে শিশুসুরক্ষা কমিটি। সরবেরিয়া আগরহাটি পঞ্চায়েতে পাড়ায় পাড়ায় শিশুদলও গঠন করা হয়েছে। এদেরই কয়েকজন আবার শিশুসুরক্ষা কমিটির সদস্য। গ্রাম সংসদ ও ব্লকস্তরের কমিটির সঙ্গে সেতু হিসেবে কাজ করছেন 'কমিউনিটি ক্যাডার'রা। এর ফলে গ্রামের অন্দরের খবরাখবর সহজেই প্রশাসনের ঘরে পৌঁছে যায়। পঞ্চায়েত প্রধান শেখ শাহজাহান বলেন, 'স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি শিশুসুরক্ষার জন্য আমাদের বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। পাচার, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমের মতো ঘটনায় সবসময় নজর রেখেছি। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার, গ্রামের বাচ্চাদের নিয়ে যে দলগুলি তৈরি হয়েছে, ওরা আমাদের সম্পদ।' পঞ্চায়েত এবং গ্রামবাসীদের যৌথ নজরদারিতেই অপরাধ কমেছে অনেকটাই। স্বেচ্ছাসেবী সংঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের শীর্ষকর্তা চিত্তপ্রিয় সাধু বলেন, 'আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে নিখোঁজ শিশুদের নিয়ে একটি সমীক্ষা করিয়েছিলাম। তাতে দেখা গিয়েছিল, সন্দেশখালি অঞ্চলে নিখোঁজ হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। ২০০৭ সাল থেকে পঞ্চায়েতের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। এই পুরস্কার নিঃসন্দেহে অক্সিজেন জোগাবে।' স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ধাগাগিয়া সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির হৃদয়চাঁদ ঘোষের অভিজ্ঞতা, 'সবাই মিলে কাজ করায় বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, পাচার, স্কুলছুট সবই আটকানো গিয়েছে। আরও ভালো করার চেষ্টা চলবে।'

বড়দের সঙ্গে মিলেমিশে যারা পঞ্চায়েতকে শিশুবান্ধব করে তুলেছে, সেই খুদেরাও খুশি। ভাটিদহ গ্রামের কিশোর রাহুল সর্দার আত্মবিশ্বাসী, 'আমাদের কথা গ্রামের সবাই মানে এখন।' ভাটিদহ মল্লিকপাড়ার কিশোরী মমতা সর্দার বলে, 'শুরুর দিকে নাবালিকার বিয়ে আটকাতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এমন চোখে দেখত, রাস্তায় বেরোতে ভয় লাগত। তবু সাহস করে ছুটে গিয়েছি।' সরবেরিয়া পঞ্চায়েতেই বাড়ি আনোয়ারা খাতুনের। তিন বছর আগে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নারীশক্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা বছর বাইশের তরুণীর কথায়, '২০০৭ সালে যখন শিশুদলে যোগ দিই, তখন কিশোর-কিশোরীদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অনেকটা বদল আনতে পেরেছি। আমাদের লড়াই চলবে।'

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল