অ্যাপশহর

বছর ঘুরেছে, তবু ফ্রি অধরা অর্ধেক রোগীর

কখনও ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কখনও বা বাইরে থেকে ---রোজই কিছু না -কিছু ওষুধ , ইঞ্জেকশন কিনতে হয়েছে৷

EiSamay.Com 25 Oct 2016, 9:59 am
এই সময় : ভাঙড়ের হালিমা বিবি কোমর আর শিরদাঁড়ার ব্যথা নিয়ে এসেছিলেন ন্যাশনাল মেডিক্যালের অর্থোপেডিক বিভাগে৷ চিকিত্সক বছর পঁয়তাল্লিশের ওই গৃহবধূকে ব্যথানাশক দু’টি স্নায়ুর ওষুধ -সহ মোট চারটি ওষুধ লিখেছিলেন ---প্রেগাবালিন , গাবাপেন্টিন , রেজুনেক্স ও অ্যাসিক্লোফিন্যাক৷ ফার্মেসি থেকে বিনামূল্যে চারটিই মেলার কথা৷ তবে মিলেছে দ্বিতীয় ও চতুর্থ ওষুধ দু’টি৷ প্রথম ও তৃতীয়টি কিনতে হয়েছে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে৷ ‘পয়সা দিয়ে ওষুধও কিনতে হল৷ আবার পিঠ -কোমরের ব্যথা নিয়ে দু’-দু’বার লাইনেও দাঁড়াতে হল ,’ মন্তব্য হালিমার৷ চুঁচুড়ার প্রীতম টুডুর বয়স সবে ১৩ মাস৷ ভাগচাষি পরিবারের একরত্তির এ দিন অস্ত্রোপচার ছিল কলকাতা মেডিক্যালে৷ তার দূর সম্পর্কের দাদু শ্যামল মান্না বলছিলেন , ‘অপারেশনের পর ওর অক্সিজেন চলছে৷ বিশ্বাস করুন , অক্সিজেন মাস্কটাও কিনে দিতে হয়েছে৷ সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট দরকার ছিল বলে বুকের কালার ডপলার এক্স -রে পরীক্ষটাও বাইরে থেকে করাতে হয়েছে৷ একদিনেই অন্তত হাজার দেড়েক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে৷ ’ রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত ডানলপের ববি কৌরের চিকিত্সা চলছে এনআরএস
EiSamay.Com no free medicine for patient at govt hospital
বছর ঘুরেছে, তবু ফ্রি অধরা অর্ধেক রোগীর


ডাক্তারবাবু তাঁকে দিনে দু’টো করে ডাসাটিনিব ট্যাবলেট খেতে বলেছেন আগামী একমাস৷ হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিতে গিয়ে মাথায় হাত ববির৷ ওষুধ নেই৷ বাজারে যে ৬০টি ট্যাবলেটের দাম কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা ! ‘কী করব বুঝতে পারছি না৷ ওষুধটা এখনই না -কিনলেই নয় ! এত টাকা পাব কোথায় ?’---প্রশ্ন কিংকর্তব্যবিমূঢ় রোগিণীর৷ নজিরগুলো বিক্ষিন্ত নয় একেবারেই৷ হাসপাতাল ঘুরলেই স্পষ্ট , সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে জনদরদি করার চেষ্টা মাঠে মারা যাচ্ছে৷ মহার্ঘ ওষুধ তো বটেই , অসংখ্য সাধারণ ওষুধই ঠিকঠাক মিলছে না সরকারি হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে৷ হাসপাতালে পরীক্ষা হলে তার রিপোর্ট পেতে এত দেরি হচ্ছে যে , বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে করাতে হচ্ছে এক্স -রে , ইসিজি কিংবা রক্তপরীক্ষার মতো অসংখ্য পরীক্ষা৷ ফলে গুচ্ছ গুচ্ছ টাকা খরচ হচ্ছে গরিব রোগীদের৷ সোমবার শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলি ঘুরে দেখা গেল , অর্ধেক রোগীও ‘ফ্রি ’ পরিষেবার সুযোগ পাচ্ছেন না৷ অথচ বিনামূল্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন এক বছর দু’দিন আগে৷ ফলে বেলগাছিয়ার নওসাদ আলমকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে হচ্ছিল , ‘অন্তত পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে এই ক’দিনে৷

কখনও ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কখনও বা বাইরে থেকে ---রোজই কিছু না -কিছু ওষুধ , ইঞ্জেকশন কিনতে হয়েছে৷ তারপরও মাকে বাঁচাতে পারলাম না৷ উল্টে এতগুলো টাকা ধার হয়ে গেল৷ ’ তাঁর মা সাহারানা বিবি গত ১২ অক্টোবর আর জি করে ভর্তি হয়েছিলেন হূদরোগের সমস্যা নিয়ে৷ দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের গৃহবধূ সোমবারই মারা গিয়েছেন৷ রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন নওসাদ৷ পেটের ক্যান্সারে আক্রান্ত সিঙ্গুরের সুনীতা সরকারের হতদরিদ্র পরিবারও ভুক্তভোগী৷ গত শুক্রবার অপারেশন হয়েছে সুনীতার৷ তাঁকে খাওয়ানো হচ্ছে ফর্মুলা ফুড যার এক -একটি কৌটোর দাম ৮০০ টাকা৷ চটজলদি রিপোর্ট পেতে গিয়ে বেশ কয়েক বার রক্তপরীক্ষা হয়েছে হাসপাতাল লাগোয়া প্যাথলজি সেন্টার থেকে৷ প্রতিবারই খরচ পড়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা৷ অথচ ঠিক গত বছর ২২ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণামতো রাজ্য স্বাস্থ্য দন্তর রীতিমতো বিজ্ঞন্তি দিয়ে জানিয়েছিল , সরকারি চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানে সব পরিষেবাই মিলবে বিনামূল্যে৷ আউটডোরে চিকিত্সকের লেখা ‘এসেন্সিয়াল মেডিসিন ’ বিনামূল্যে মেলার সরকারি সিদ্ধান্ত তো নেওয়া হয়েছিল তারও কয়েক মাস আগে৷ তবে ঘোষণাই সার৷ সন্তাহের প্রথম দিনে শহরের চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল , ঘোষণা থেকে আলোকবর্ষের ফারাক বাস্তব ছবিটার৷

স্বাস্থ্যকর্তাদের সাফাই অবশ্য গতানুগতিক ও দায়সারা৷ বিভিন্ন হাসপাতালের ফার্মেসি সূত্রে খবর , সরকারি সরবরাহের তালিকায় সিংহভাগ ওষুধই রয়েছে৷ তবে সেগুলির সরবরাহ এতটাই অনিয়মিত যে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের ভিড় তেমন একটা কমেনি৷ মেডিসিন , অর্থোপেডিক এবং জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিত্সকদের লেখা ওষুধই সবচেয়ে বেশি অমিল৷ কয়েক সন্তাহ আগে এনআরএসে প্যারাসিটামল পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছিল না দিন পাঁচেক৷ মেডিক্যাল আর ন্যাশনালে নেই ওন্ডানসেট্রন -ডোমপেরিডনের মতো মামুলি বমি -অম্বলের ওষুধও৷ চিকিত্সকদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্টরাও বিরক্ত এবং অকপট --- ‘অতি সাধারণ অনেক ওষুধের সরবরাহ এখনও এতটাই অনিয়মিত যে , শতকরা ৩০ জন রোগীকেই প্রেসক্রিপশনে লেখা সব ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে৷ বাকিদের একটা , কাউকে দু’টোর বেশি ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না৷ ’ ফলে দু’টাকার টিকিটে সরকারি ডাক্তার দেখিয়েও এখনও ন্যায্য মূলের দোকান থেকে কয়েকশো , কখনও আবার ভিড় এড়িয়ে বাইরের দোকান থেকে কয়েক হাজার টাকার ওষুধ কিনতে গিয়ে জেরবার হচ্ছে রোগীকুল৷ ইন্ডোরে ভর্তি রোগীদের দুর্দশা আরও বেশি৷

কারণ , ওষুধ কেনা কিংবা বিভিন্ন ডায়গনস্টিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে তড়িঘড়িই তাঁদের টাকা খরচ করে ‘কিনতে ’ হচ্ছে সরকারি পরিষেবা৷ ফ্রি ফার্মাসিতে লাইন দিয়েও মিলছে না ওষুধ ---এই সময়টনক নড়ল স্বাস্থ্য দন্তরেরএই সময় : রাধা পাসির খবর ‘এই সময় ’-এ প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসল স্বাস্থ্য দন্তর৷ আসানসোলের গৃহবধূর মতো বিশেষ পুষ্টির প্রয়োজন এমন রোগীদের জন্য ব্যবহূত ফরমুলা ফিড খুব শিগগিরই ক্যাটালগ আইটেমে নিয়ে আসার প্রস্ত্ততি শুরু করা হল৷ এসএসকেএমের উপাধ্যক্ষ করবী বড়াল বলেন , ‘ফরমুলা ফিড ক্যাটালগ আইটেমে চলে এলে আমরা অনেক বেশি পরিমাণে সেগুলো কিনতে পারব৷ আশা করি , তার পর কোনও রোগীর পরিজনকে আর হাজার হাজার টাকা খরচ করে ফরমুলা ফিড কিনতে হবে না৷ ’ পিজি সূত্রে খবর , রাধা পাসির ওষুধ খাতে খরচ হওয়া টাকা কী ভাবে ফেরত দেওয়া যায় , তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে৷ ‘এই সময় ’-এর খবর পড়ে রাধাকে সাহায্য করার কথা বলেছেন অনেকে৷ রাধার স্বামী সঞ্জয় এ দিন বলেন , ‘গত সাত মাস বাড়ি ফিরিনি৷ রাধাকে ছুটি দিলে গুমটিটা হয়তো খুলব৷ সেখানে দিনে ১০০ টাকার বেশি রোজগার হবে না৷ এদিকে ডাক্তারবাবুরা বলছেন , আগামী এক বছর ওকে নিয়মিত ফিজিয়োথেরাপি করাতে হবে৷ কিন্ত্ত , ফিজিওথেরাপিস্টেরই তো খরচ ২০০ টাকা করে দিতে হবে প্রতিদিন৷ ওষুধের টাকাগুলো পেলে সত্যিই উপকার হয়৷ ’৷

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল