অ্যাপশহর

কুকুর-বেড়ালদের দিয়ে হানার ছক

আর মানব বোমা বা ‘ফিদায়েঁ’হামলা নয়, ছোট চেহারার পশুদের দেহে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দিয়ে ভারতের বড় বড় শহরে জঙ্গি হামলার ছক কষেছে সীমান্ত পারের জঙ্গি সংগঠন গুলি৷

EiSamay.Com 14 Jan 2017, 11:41 am
অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়াদিল্লি
EiSamay.Com new terror attack plan by dogs and cats
কুকুর-বেড়ালদের দিয়ে হানার ছক


আর মানব বোমা বা ‘ফিদায়েঁ’হামলা নয়, ছোট চেহারার পশুদের দেহে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দিয়ে ভারতের বড় বড় শহরে জঙ্গি হামলার ছক কষেছে সীমান্ত পারের জঙ্গি সংগঠন গুলি৷ এই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের৷ অত্যন্ত উদ্বেগজনক এই তথ্য হাতে পাওয়ার পরে গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই সব রাজ্যের কাছে এই মর্মে বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ অ্যালার্ট করা হয়েছে দেশের সব কটি বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশনকে৷ কড়া সতর্ক পাহারায় মুড়ে দিতে বলা হয়েছে দেশের সব বড় মার্কেট কমপ্লেক্স, সিনেমা হল এবং জনবহুল স্থানকে৷

প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে প্রতি বছরই নাশকতার আশঙ্কা থাকে৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে জারি করা হয়, বিশেষ অ্যালার্ট৷ এবারেও ২৬ জানুয়ারির আগে সারা দেশের জন্য জারি হয়েছে নিরাপত্তা জনিত সতর্কতা৷ রুটিন অ্যালার্টের পাশাপাশি এ বারের বিশেষ সতর্ক বার্তার মধ্যে রয়েছে রীতিমতো আশঙ্কার তথ্য৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন যে, এবার প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে নাশকতা মূলক হামলার ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী গুলি৷ সূত্রের খবর, সম্প্রতি সীমান্ত পারের দুটি জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে রেডিয়ো কথোপকথন ‘ইন্টারসেপ্ট’ করে এই তথ্য হাতে পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ পুরো কথপোকথনে আফগান ভাষার ব্যবহার ছিল খুব বেশি৷ স্বভাবতই তার মর্মোদ্ধার করতে গোয়েন্দাদের সময় লেগেছে৷ জঙ্গিদের কথাবার্তার পুরো বিবরণ উদ্ধার করার পরেই গোয়েন্দাদের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানানো হয় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য৷

কী ভাবে এই নাশকতার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে চাইছে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী গুলি? গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে, ছোট ছোট চেহারার পশুদের ‘বিস্ফোরক (এক্সপ্লোসিভ) ক্যারিয়ার’হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে তারা৷ এই কারণে কুকুর, বিড়াল, ছাগল প্রভৃতি গবাদি পশুর দেহে অস্ত্রোপচার করে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠীদের৷ তারপরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে টার্গেটের জায়গায়৷ রিমোটের মাধ্যমে ঘটানো হবে বিস্ফোরণ৷ সাধারণত সব জনবহুল জায়গায় নিরাপত্তার কড়াকড়ির সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন থাকা সুরক্ষাকর্মীদের নজর থাকে মানুষের উপরে৷ কুকুর, বেড়াল, ছাগলদের উপরে নজর রাখার মতো কোনও ব্যবস্থা আজ অবধি এই উপমহাদেশে প্রচিলিত নেই৷ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এই জায়গাটার ফাঁক নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জঙ্গি গোষ্ঠী গুলি৷ এতদিন মানব দেহের মাধ্যমে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতার বীজ বুনতে থাকা লস্কর, হিজবুল, জৈশ জঙ্গিরা এ বার অনেক সহজে ভিড়ের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যই তাদের ছকে পরিবর্তন করতে চাইছে৷

সূত্রের খবর, সন্ত্রাসবাদীদের তরফে এই হামলার পরিকল্পনার কথা জানার পরে সারা দেশের ৪২ টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে দিতে বলা হয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের সতর্কবার্তায়৷ এই তালিকার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দুটি দর্শনীয় স্থানও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷

কিন্ত্ত হঠাত্‍ কেন নিজেদের চেনা ছক বাতিল করে নতুন ছকে নাশকতার পরিকল্পনা করছে সীমান্ত পারের জঙ্গি গোষ্ঠী ? গোয়েন্দারা মনে করছেন যে, বিস্ফোরণের নতুন এই ছকে চললে জঙ্গিদের আর্থিক দিক থেকে অনেক বেশি লাভ হবে এবং ফিদায়েঁ হামলার তুলনায় অনেক সহজে টার্গেটে আঘাত হানা সম্ভবপর হবে৷ একটা আত্মঘাতী বিস্ফোরণে বা ফিদাইন হামলায় আত্মঘাতী জঙ্গির পরিবারকে যে পরিমাণ টাকা দিতে হয়, সেই জায়গায় একটি ছোট মাপের পশুকে ব্যবহার করতে পারলে জঙ্গি গোষ্ঠীর অনেক টাকা বেঁচে যাবে৷ দ্বিতীয়ত, ছোট ছোট পশুকে ব্যবহার করে সহজেই নিরাপত্তা রক্ষীদের নজর এড়ানো সম্ভব হবে৷ এই পদ্ধতিতে যদি সাফল্যের সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটানো যায়, তাহলে পুরো উপমহাদেশেই তা একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, যা সামগ্রিক ভাবে গোটা সন্ত্রাসবাদকে অন্য একটা দিশা দেবে, এই ভাবনাও জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছে৷ জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এই সময়ে অত্যধিক তুষারপাতে জনজীবন যখন একেবারে বিপর্যস্ত, তখন অনুপ্রবেশে তৈরি জঙ্গিরাও সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে ঢুকতে পারছে না৷ এই অবস্থায় তাদের জঙ্গি আন্দোলনের ধারাকে সচল রাখতে পশু ব্যবহার করে বিস্ফোরণের ছককে সফল করে তুলতে মরিয়া হয়েই সন্ত্রাসবাদীদের এই উদ্যোগ বলেও মনে করছেন দুঁদে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল