অ্যাপশহর

৩৩ বছর পর বাবা-মেয়েকে মিলিয়ে দিল কোভিড

প্রিয়জনের সঙ্গে চির বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ানো করোনাই মিলনসেতু এক মা মরা মেয়ে ও তাঁর বাবার মধ্যে... জন্মের পর থেকে বাবার দেখাই পায়নি মেয়ে... কিন্তু মারণ ভাইরাস কোভিড সুযোগ করে দিল বাবা-মেয়ের প্রথম সাক্ষাতের...

Ei Samay 14 May 2021, 1:05 pm
এই সময়, তিরুবনন্তপুরম: কোভিড সংক্রমণে প্রিয়জনকে হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু কোভিডই ৩৩ বছর পর বাবাকে মেয়ের কাছে ফিরিয়ে দিল! এ কাহিনি কেরালার ৩৩ বছরের সিপিএম কর্মী আর অজিতা এবং তাঁর ৬৫ বছরের বাবা শিবাজির। খুনের একটি মামলায় দীর্ঘদিন ধরে জেল খাটছেন শিবাজি। মেয়ের জন্মের বছরই গ্রেপ্তার হন তিনি, সেই থেকে মেয়ের সঙ্গে কখনও দেখা হয়নি জেলবন্দি শিবাজির। চার বার জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করলেও ধরা পড়ে যান, বাড়তে থাকে সাজার মেয়াদ।
EiSamay.Com istockphoto-1183202829-640x640
Representative Image


অজিতার কথায়, 'আমার বাবা আলাপুঝায় থাকাকালীন এক স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীর সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয়, আর তাতে কংগ্রেস কর্মী গুরুতর আহত হন। পরে ১৯৮৫ সালে ফের দু'জনের হাতাহাতি হয়, আর তাতে মৃত্যু হয় কংগ্রেসের ওই কর্মীর। আমার বাবা এলাকা ছেড়ে পালান। খুনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার পর আমার মায়ের সঙ্গে বিয়ে। ১৯৮৮ সালে, যে বছর আমার জন্ম হয়, সে বছরই খুনের অভিযোগে বাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আমার বয়স তখন সবে কয়েক মাস! আমাদের কাছে ফিরে আসার জন্য চার বার জেল পালানোর চেষ্টা করেছেন বাবা, কিন্তু প্রতিবার ধরা পড়ে গিয়েছেন।'

'তেরা মুঝসে হ্যায়...' করোনায় মরণাপন্ন মা, ভিডিয়ো কলে গান গেয়ে অন্তিম বিদায় ছেলের

শিবাজি গ্রেপ্তার হওয়ার এক বছরের মাথাতেই আত্মহত্যা করেন তাঁর স্ত্রী। তার পর মামারবাড়িতে দিদার কাছেই মানুষ অজিতা। সেখানে বাবার নাম শুনলেও জেলবন্দিত্বের কথা পরে জানতে পারেন। অজিতা বলেন, 'জেল চত্বরে একটা অনুষ্ঠানের টেলিকাস্ট দেখে জানতে পারি আমার বাবা সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। ঠিক করি, বাবার সঙ্গে দেখা করতেই হবে।' অজিতার স্বামী কোঝিকোড়ের ফুড ইউনিটে কর্মরত। পালাক্কড়ে স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে অজিতার সুখের সংসার। সেখানে সিপিআইএম নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাবাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন অজিতা, কিন্তু বাদ সাধেন নিহত সেই কংগ্রেস নেতার ছেলে, যিনি এখন পুলিশ আধিকারিক।

অজিতার কথায়, 'এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছরের। জেল পালানোর চেষ্টার জন্য সাজা বাড়লেও ১৬ বছরের বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমাকে বলা হলো জেলে বাবার আচরণ ভালো ছিল না, তাই তাঁকে ছাড়া যাবে না।'

'বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দিলে বাঁচত কত প্রাণ', কেন্দ্রকে তীব্র ভৎসর্না বম্বে হাইকোর্টের

২০২০ সালে কোভিডের কারণে আদালত বন্দিদের প্যারোলে মুক্তির নির্দেশ দিলে আশার আলো দেখেন অজিতা। কিন্তু সে বছর মুক্তি পাননি শিবাজি। ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে ২০২১-এ। এ বছর প্যারোলে তাঁর বাবার মুক্তির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বুধবারই পালাক্কড় পৌঁছে যান অজিতা, সেখান থেকে রাতের ট্রেনে বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এখন নাতি-নাতনিদের সঙ্গে খুব ভালো আছেন শিবাজি। কিন্তু তিন মাসের প্যারোল শেষে ফের জেলে ফিরে যেতে হবে বাবাকে, সেই ভেবেই মন ভারী হয়ে ওঠে মেয়ের।

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল