অ্যাপশহর

বিরোধীদের মধ্যেই বিরোধিতা প্রবল, মোদীর বিরুদ্ধে মহাজোট সম্ভবই নয়

মহাজোট সম্ভবই নয়৷ আমি অবশ্য ওদের বেস্ট অফ লাক উইশ করছি৷ ওদের একসঙ্গে আসা এবং তারপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরীক্ষা আগেও হয়েছে৷

EiSamay.Com 18 Jun 2017, 8:55 am
অতিথি বেঙ্কাইয়া নাইডু, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন ও সংসদীয় মন্ত্রী
EiSamay.Com interview of minister of urban development of india venkaiah naidu
বিরোধীদের মধ্যেই বিরোধিতা প্রবল, মোদীর বিরুদ্ধে মহাজোট সম্ভবই নয়

আলাপে গৌতম হোড়

বিরোধীদের মধ্যেই বিরোধিতা প্রবল, মোদীর বিরুদ্ধে মহাজোট সম্ভবই নয় বিরোধীরা আবার একজোট হচ্ছেন, বলা হচ্ছে, ২০১৯ সলে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মহাজোট হবে৷ আপনারা কতটা চিন্তিত ?
মহাজোট সম্ভবই নয়৷ আমি অবশ্য ওদের বেস্ট অফ লাক উইশ করছি৷ ওদের একসঙ্গে আসা এবং তারপর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরীক্ষা আগেও হয়েছে৷ কোনও মতাদর্শগত ঐক্য না থাকলে এবং একজন সর্বমান্য নেতা ও সাধারণ কর্মসূচি না থাকলে জোট সফল হয় না৷ ন্যাশনাল ফ্রন্ট তো নোশনাল ফ্রন্ট হয়ে গিয়েছিল৷ ইউনাইটেড ফ্রন্ট আবার ডিভাইডেড ফ্রন্ট হয়ে যায়৷ ইতিহাস বলে , তৃতীয় বিকল্প বহু পিছনে তৃতীয় থেকে গেল৷ বিরোধীদের মধ্যে বিরোধিতা প্রবল৷ কংগ্রেস , সিপিএম ও তৃণমূল কি বাংলায় এক হয়ে লড়তে পারবে ? হলে তো আমরা খুশি হব৷ বিজেপি -র জন্য খোলা মাঠ থাকবে৷ জোট বনাম বিজেপি -র লড়াই হবে৷ কংগ্রেস কি কেরলে বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়বে ? লড়লে এখানেও আমাদের খুশির শেষ থাকবে না৷ আমাদের জন্য রাজনৈতিক জায়গা খুলে যাবে৷ আমরা এগিয়ে যাব৷ দ্বিতীয়ত , এমন কোনও নেতা নেই , যিনি ওদের আত্মবিশ্বাস যোগাতে পারবেন৷ যে সব নাম সামনে আসছে , রাহুল গান্ধী , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় , কেজরিওয়াল এবং অন্যরা তাঁরা কেউই দেশের বিশ্বাস বাড়াতে পারবেন না৷ তাঁদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিপক্ষ হওয়াটা অসম্ভব৷ নীতীশ কুমার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি এই দৌড়ে নেই৷ তাই আমি তাঁকে ধরছি না৷ মহাজোট মানে এই সব নেতারা সামনে থাকবেন৷ লোকে দেখবেন , যাঁরা সামনে আছেন , তাঁদের প্রায় সকলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে৷ তখনই আর ওই জোট সফল হবে না৷ বিজেপি -র দিকে দেখুন৷ আমরা পরিষ্কার৷ নেতৃত্ব নিয়ে কোনও সংশয় নেই৷ ৩৩টি দল একসঙ্গে এসে একমাস আগে ঘোষণা করেছে , মোদীর নেতৃত্বে তাঁরা ভোটে লড়বেন৷ মোদী এখন দেশে সবথেকে জনপ্রিয় নেতা৷ সব সমীক্ষা বলছে , এখন যদি লোকসভা ভোট হয় তো এনডিএ ৩৪০ বা তার বেশি আসন পাবে৷ এনডিএ -র সামনে কোনও বিপদ নেই৷ এই মহাজোটের পরীক্ষা কিছুতেই সফল হবে না৷


কিন্ত্ত অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে তো জোট সফল হয়েছিল, ইউপিএ -র সময়েও তো হয়েছে?
হ্যা , সেখানে অটল বিহারী বাজপেয়ী সর্বজনগ্রাহ্য নেতা ছিলেন৷ এখানে নেতা কোথায় ? দ্বিতীয়ত , সেখানে এরকম কোনও বৈপরীত্য ছিল না৷ ডিএমকে সঙ্গে থাকলে এডিএমকে উল্টোদিকে থাকত৷ আবার এডিএমকে সঙ্গে থাকলে ডিএমকে উল্টোদিকে থাকত৷ তৃণমূল থাকলে বামেরা অন্যদিকে থাকত৷ কোনও বৈপরীত্য ছিল না৷ তাই বাজপেয়ীজি ২৩ দলের জোট নিয়ে চলতে পেরেছিলেন৷ মতাদর্শগত কিছু বৈপরীত্য ছিল৷ জোট হলে এরকম হয়৷ জোট শুধু মতাদর্শভিত্তিক হয় না , সেখানে অন্য কিছু জরুরি প্রয়োজনও থাকে৷ না হলে কী করে আমি ব্যাখ্যা করব যে , কখনও এডিএমকে , কখনও ডিএমকে , এমডিএমকে বা মমতাজি সকলেই আমাদের সঙ্গে ছিলেন৷ আজ কিন্ত্ত পরিস্থিতি সেরকম নয়৷ আমি কেরল ও বাংলার উদাহরণ দিলাম৷ উত্তর প্রদেশও দেখুন৷ চেষ্টা হচ্ছে ঠিকই , কিন্ত্ত সমাজবাদী ও বহুজন সমাজ পার্টির একজোট হওয়াটা তো প্রায় অসম্ভব৷

আপনার কি মনে হয়, এসব কারণেই নীতীশ কুমার বিজেপি-র দিকেই শেষ পর্যন্ত আসবেন ?
আমি জানি না৷ আমি কোনও আনফেয়ার মন্তব্যও করতে চাই না৷ একটা বিষয় আমি দূর থেকে বুঝতে পারছি , তিনি অস্বস্তি বোধ করছেন৷ কারণ , লালু প্রসাদ হলেন শাস্তিপ্রান্ত নেতা , তিনি জেলে গিয়েছিলেন , এখন জামিনে বাইরে আছেন৷ তিনি বড় শরিক৷ পরিস্থিতি এখন রীতিমতো অস্বস্তিকর৷ আগে নীতীশ লালুর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন , তখন তাঁর প্রধান বিষয় ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই৷ তারপর সুশাসন এবং জঙ্গল রাজের সমান্তি৷ এখন রিপোর্ট বলছে , সেই পরিস্থিতি এসে গিয়েছে৷ সাহাবুদ্দিন জেল থেকে নির্দেশ দিচ্ছে , এসপি -কে বদলানো হচ্ছে৷ তাই আমার মনে হচ্ছে , তিনি অস্বস্তিতে আছেন৷ এই অবস্থায় তিনি কী করবেন , সেটা আমি জানি না৷

আপনি যেটা বলছিলেন, বিরোধী নেতারা অনেকেই অভিযুক্ত৷ চিদম্বরম, মায়াবতী, লালুপ্রসাদ অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে৷ তদন্ত হচ্ছে৷ এতে আপনাদের কতটা সুবিধা হচ্ছে?
নিঃসন্দেহে আমরা সুবিধা পাচ্ছি৷ আর একটা জিনিস দেখুন৷ এঁদের সকলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আগের আমলে এসেছে৷ আমাদের সরকার কিছু করেনি৷ এমনকী সারদা -নারদও আগের আমলে হয়েছে৷

না , না , নারদ তো আপনাদের সময়ে হল ?
এখন তো অ্যাকশন হচ্ছে৷ কিন্ত্ত কেলেঙ্কারিটা আগে হয়েছিল৷ কিছু অ্যাকশন তো আগেই নেওয়া শুরু হয়েছিল৷ যেমন , লালু, মুলায়ম , মায়াবতীর বিরুদ্ধে৷ কয়লা কেলেঙ্কারি , স্পেকট্রাম , ২জি , ডিএমকে সব আগের সময়ে হয়েছে৷ তাই দুর্নীতির স্টিগমা ওদের বিরুদ্ধে যাবে৷ আর তুলনায় দেখুন , এখানে এমন একজন নেতা , যাঁর তিন বছরের শাসনে দুর্নীতির একটা অভিযোগও আসেনি৷ বিরোধীরাও সে কথা বলতে পারছে না৷ তারা অন্য নানা ধরনের অভিযোগ করছে৷ এখন একটা স্বচ্ছতা আছে৷ জাতীয় সম্পদের নিলাম করে বন্টন করা হচ্ছে৷ কোটি কোটি টাকা সরকারের ভান্ডারে আসছে৷ যা দিয়ে জনগণের কল্যাণমূলক কাজ করা হচ্ছে৷ এখন ওদের নেতা হতে পারেন রাহুল গান্ধী৷ কংগ্রেস যদি মনে করে , রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে তো ভাল৷ গত বারো বছর ধরেই তো তিনি বস্ত্তত কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ সকলেই এটা জানেন৷ প্রশ্ন হল , এই সময়ে তিনি করেছেনটা কী ?

রজনীকান্ত কি বিজেপি-র হাত ধরে রাজনীতিতে আসছেন?
প্রথমত, রজনীকান্ত নিজেই নিশ্চিত নন, রাজনীতিতে আসবেন কি না৷ তিনি কিছু সঙ্কেত দিচ্ছেন৷ আগে তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন৷ তিনি দক্ষিণের অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা৷ দক্ষিণের মোস্ট পপুলার স্টারও বলা যায়৷ তাঁর অনুগামীদের সংখ্যাটা বিশাল৷ এর আগে তিনি ডিএমকে ও তামিল মানিলা কংগ্রেস জোটকে সাহায্য করেছিলেন৷ তাঁকে নিজেকেই তো একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ তিনি বিজেপি -র কাছে আসতে চাইছেন বা বিজেপি তাঁর কাছে আসতে চাইছে বলে যে কথাটা বলা হচ্ছে , তাতে তেমন কোনও ভিত্তি নেই৷ হ্যাঁ, এ কথাটা ঠিকই যে , বিজেপি -র রাজ্য সভাপতি বলেছেন , তিনি রাজনীতিতে এলে স্বাগত৷

আপনি তো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন? আমারা মাঝে মধ্যে দেখা করি৷ প্রধানমন্ত্রীকেও তিনি শ্রদ্ধা করেন৷ এই পর্যন্ত৷

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন এগোচ্ছে, আপনারা ,,(প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই বেঙ্কাইয়া বললেন )
আমার কাছ থেকে শুনে নিন , পশ্চিমবঙ্গে আগামী বার বিজেপি সরকার হবে৷ কারণ , রাজ্যের জমিতে অসন্তোষের একটা আবহ রয়েছে৷ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইমেজ শেষ হয়ে গিয়েছে৷ দ্বিতীয়ত ,সকলেই বিশৃঙ্খলা অনুভব করছেন৷ তৃতীয়ত , জনজীবনে হিংসা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গিয়েছে৷ চতুর্থত , তোষণের বিষয়টিও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বুঝতে পেরেছেন৷ এ সবই বিজেপি -র পক্ষে যাচ্ছে৷ সিপিএম এখন ট্রায়েড অ্যান্ড টায়ার্ড পার্টি৷ ক্যাডাররা তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করতে চান না৷ নেতারা কেবল বিবৃতি দিয়ে কাজ সারেন৷ সিপিএমের সমর্থন ভিত্তি বিজেপি -র দিকে চলে আসছে৷ তাঁরা মনে করছেন , বিজেপি -ই একমাত্র বিকল্প৷ তার সঙ্গে রয়েছে মোদীজির জনপ্রিয়তা৷
কিন্ত্ত সংগঠন? আপনাদের তো তৃণমূলের সঙ্গে লড়ার মতো সংগঠন নেই৷
লেট আস সি৷ অন্য রাজ্য সম্পর্কেও এ কথা বলা হয়েছিল৷ শিবসেনার সংগঠন আমাদের থেকে বেশি৷ সেখানে , ঝাড়খন্ড , হরিয়ানায় আমরা ক্ষমতায় এসেছি৷ আমি স্বীকার করছি , অন্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় আমাদের সংগঠন কমজোরি৷ কিন্ত্ত প্রতিদিন আমরা ভাল করছি৷ গত দুটি উপ নির্বাচন দেখুন৷ সিপিএমকে পিছনে ফেলে আমরা দু নম্বরে এসেছি৷

আপনার নগরোন্নন মন্ত্রকের কথায় আসি৷ আপনি কি এরকম পরিকল্পনা করছেন যে , প্রতি বছর নয় , রাজ্য একসঙ্গে দু-তিন বছরের পরিকল্পনা এলে আপনারা তাঁকে অনুমোদন করবেন?

থিংস আর চেঞ্জিং৷ ইটস আ ট্রান্সফমিং ইন্ডিয়া৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন , রিফর্ম, পারফর্ম অ্যান্ড ট্র্যান্সফর্ম৷ আমি পরে তার সঙ্গে ইনফর্মকে জুড়েছি৷ প্রতিটি শহরকে আগে দিল্লিতে আসতে হত পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য৷ প্রতিটি রাজ্যকে প্রতি বছর আসতে হত একই কারণে৷ আমি এখন তাঁদের বলেছি , আগামী তিন বছরের জন্য প্রকল্প তৈরি করুন৷ একবারে অনুমোদন নিয়ে নিন৷ তা হলে ডিপিআর , প্রস্ত্ততি ও রূপায়ণের অনেক সময় পাবেন৷ বাজেটও এগিয়ে এসেছে৷ তাই টাকা অনেক আগে সকলে হাতে পেয়ে যাবেন৷ সব ফ্রন্টেই পরিবর্তন হচ্ছে৷ দেশে এখন মিশন মোদী চলছে৷ মোদী মানে নরেন্দ্র মোদী নয় , মোদী মানে এমওডিআই বা মেকিং অফ ডেভলাপড ইন্ডিয়া৷ এখন হল অ্যাসপিরেশনাল ইন্ডিয়া৷ এটা একদিক দিয়ে আমাদের কাছেও সমস্যা৷ কারণ , লোকের চহিদা ও আকাঙ্খা অনেক বেড়ে গিয়েছে৷ আমাদের অনেক বেশি খাটতে হবে এবং কাজ করতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী দিনে আঠারো ঘন্টা কাজ করেন৷ কিছু লোক বলে , এ শোনে দেতে নেহি৷ এই পরিবর্তন সকলেই অনুভব করছেন৷

নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হিসাবে বাংলা সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা কীরকম?
বেঙ্গল সামহাউ ইজ নট কো অপারেটিং উইথ সেন্টার৷ এরা স্মার্ট সিটি প্রোগ্রামে যোগ দেয়নি৷ অন্য ক্ষেত্রেও নয়৷ আমি বাংলাতে যাব৷ এদের ইমপ্রেস করার চেষ্টা করব যে , আমাদের একসঙ্গে আসা উচিত৷

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল