অ্যাপশহর

উদ্বেগ বাড়াল চন্দ্রবাবুর কথা

একজন বলছেন , রোজ দু’ঘণ্টা মাথা কুটেও নগদ সমস্যা সমাধানে কোনও আশার রেখা মিলছে না

EiSamay.Com 21 Dec 2016, 10:12 am
হায়দরাবাদ ও নয়াদিল্লি : একজন বলছেন , রোজ দু’ঘণ্টা মাথা কুটেও নগদ সমস্যা সমাধানে কোনও আশার রেখা মিলছে না৷ আর একজনের আশ্বাস , নগদ নিয়ে চিন্তা নেই৷ ৩০ ডিসেম্বরের পরেও সাধারণ মানুষের নগদের চাহিদা মেটানোর মতো যথেষ্ট নতুন পাঁচশো ও দু’হাজার টাকার নোট রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে৷ অথচ , দু’জনেই মোদী সরকারের প্রতিনিধি৷ প্রথম জন চন্দ্রবাবু নাইডু৷ এনডিএ শরিক তেলুগু দেশম পার্টির নেতা এবং নগদহীন অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য কেন্দ্রের গড়ে দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীদের কমিটির প্রধান৷ দ্বিতীয় জন অর্থমন্ত্রী অরুণজেটলি৷ বিমুদ্রাকরণ নিয়ে সরকারের অন্দরেই দিশাহীনতা যে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে , তা স্পষ্ট হয়ে গেল পর পর দু’দিন চন্দ্রবাবু এবং জেটলির করা এই দুই বিপরীত মন্তব্যে৷
EiSamay.Com demanetization now creat trouble for govt
উদ্বেগ বাড়াল চন্দ্রবাবুর কথা


সোমবার বিজয়ওয়াড়ায় একটি অনুষ্ঠানে আগের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি সরে গিয়ে নগদ সমস্যা নিয়ে অসহায়তার কথা কবুল করেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী৷ চন্দ্রবাবু বলেন , ‘বিমুদ্রাকরণের ফলে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে , তার সুরাহা খুঁজতে রোজ অন্তত দু’ঘণ্টা করে সময় ব্যয় করছি৷ রোজই মাথা কুটে ফেলছি৷ কিন্ত্ত কোনও সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না৷ ’ অথচ গত ৮ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদী যখন পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন , তখন প্রথম যাঁরা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান , তাঁদেরই এক জন ছিলেন চন্দ্রবাবু৷ তিনিই প্রধানমন্ত্রীকে বার বার বড় নোট বাতিলের আর্জি জানিয়েছিলেন বলে কৃতিত্ব দাবি করতেও কসুর করেননি এই নেতা৷

সোমবার অবশ্য তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে একেবারে উল্টো সুর৷ সটান ডিগবাজি খেয়ে তিনি দাবি করেছেন , ‘নোট বাতিল করায় আমাদের মত ছিল না , কিন্ত্ত তা সত্ত্বেও সেটা হয়েছে৷ তার পর ৪০ দিন কেটে গিয়েছে এবং আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও বহু সমস্যা রয়ে গিয়েছে৷ যার কোনও সমাধান এই মুহূর্তে চোখে পড়ছে না৷ ’ অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নেন , নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য প্রয়োজনীয় নগদ জোগাতে এখনও হিমসিম খেতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে৷ ব্যাঙ্ক এবং এটিএমে টাকার সরবরাহ যথেষ্ট নয়৷ আর অদূর ভবিষ্যতে অবস্থাটা বদলাবে , এমন কোনও আশার আলোও দেখা যাচ্ছে না৷ অর্থনৈতিক সঙ্কটের এই পরিস্থিতিকে ১৯৮৪ সালের অগস্টে অন্ধ্রের রাজনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গে তুলনা করেছেন চন্দ্রবাবু৷ তাঁর দাবি , শ্বশুর এন টি রামা রাওয়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সেই পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ যে জটিলতা তৈরি করেছিল , সেটাও ৩০ দিনের মধ্যে সামাল দেওয়া গিয়েছিল৷ কিন্ত্ত দেশের এই মুদ্রা সঙ্কট ৪০ দিন পরেও অব্যাহত৷ চন্দ্রবাবুর গলায় যখন এই হতাশা , তখন জেটলির কথায় কিন্ত্ত উদ্বেগের ছিটেফোঁটাও নেই৷

এক দিকে নগদহীন অর্থনীতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান মেনে নিচ্ছেন , এ রকম একটা পদক্ষেপের জন্য ব্যাঙ্কগুলি এখনও প্রস্ত্তত নয়৷ অন্য দিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি , যথেষ্ট প্রস্ত্ততি নিয়েই মাঠে নামা হয়েছে৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাণ্ডারে যা নগদ আছে তা শুধু ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় , তার ‘ঢের পরেও ’ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট৷ দিল্লিতে সাংবাদিকদের জেটলি বলেছেন , ‘পূর্ণ প্রস্ত্ততি ছিল৷ এমন একটা দিনও যায়নি , যখন আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে যথেষ্ট টাকা পাঠায়নি৷ কত টাকা বাজারে ছাড়তে হবে , তার একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল এবং তার জন্য সব রকম প্রস্ত্ততি নিয়েই এগোনো হয়েছে৷ ’ অর্থমন্ত্রকের সচিব শক্তিকান্ত দাসও দাবি করেছেন , ৮ নভেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা সামাল দেওয়ার মতো নোটের জোগান আছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে৷ আরও এক ধাপ এগিয়ে অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস , ৩০ ডিসেম্বরের পরেও কোনও সমস্যা হবে না৷ এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি রাহুল গান্ধী৷

টুইট করে কংগ্রেস সহ -সভাপতি বলেছেন , ‘আরবিআই ঠিক সেই ভাবে নিয়ম বদলাচ্ছে , যেমন করে মোদীজি পোশাক বদলান৷ ’ শীর্ষ ব্যাঙ্ক এবং অর্থমন্ত্রীর কথায় স্ববিরোধ নিয়ে সরব প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও৷ তাঁর দাবি , দু’জনের কারওর কথাই নির্ভরযোগ্য নয়৷ টুইটারে চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ৮ নভেম্বরের প্রতিশ্রীতি এবং অর্থমন্ত্রীর ১১ নভেম্বরের আশ্বাসের বিরোধিতা করে টাকা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করছে আরবিআই৷ অর্থমন্ত্রী তার উল্টো কথা বলছেন৷ সাধারণ মানুষ কার কথায় বিশ্বাস করবে ? কারওরই তো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই৷ ’নগদহীন ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন মোদী সরকার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে , সেই পথে অনেকটাই এগনো গিয়েছে বলে দাবি অর্থমন্ত্রীর৷ বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পর থেকে টাকা লেনদেনের বিকল্প বা সমান্তরাল মাধ্যমগুলির ব্যবহারও অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে বলে জানান জেটলি৷ অর্থ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী , ৮ নভেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে৷ এ বিষয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের উত্সাহ দিতে বাজেটে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি কর ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জেটলি৷

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল