অ্যাপশহর

মুখ খুললেই হাজতবাস বলেও ঢোঁক নীতীশের

সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই হাজতবাসের নির্দেশিকা দিয়েও পরে পিছিয়ে এলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। তাঁর বিরুদ্ধে বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ আসতে শুরু হতেই চাপে পড়ে পিছু হটে বিহার সরকার।

Ei Samay 23 Jan 2021, 11:35 am
এই সময়: সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনা করলেই শাস্তির মুখে পড়তে হবে জানিয়ে নির্দেশিকার জারির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঢোঁক গিলতে বাধ্য হলেন নীতীশ কুমার। বৃহস্পতিবার রাতে জারি করা নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়, বিহার সরকারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও মানহানিকর বা আপত্তিজনক পোস্ট করলেই তা শাস্তিযোগ্য সাইবার অপরাধের তালিকাভুক্ত হবে। শুধু সরকারই নয়, মন্ত্রী বা আমলাদেরও ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। কিন্তু কোনটি মানহানিকর বা আপত্তিজনক হিসেবে ধরা হবে, তার কোনও সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। ফলে, নীতীশ কুমারের সরকারের বিরুদ্ধে বাক্‌-স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
EiSamay.Com NITISH KUMAR
ছবি সৌজন্যে- নীতীশ কুমারের টুইটার


রাজনৈতিক বিরোধীরা তো বটেই, মজার বিষয় হলো, সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্লাবন বয়ে যায় কড়া বিরোধিতা এবং প্রবল কটাক্ষের। উত্তরোত্তর চাপ বাড়ছে বুঝে শুক্রবার সকালেই সরকারি নির্দেশিকার একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। তাতে বলা হয়, গঠনমূলক সমালোচনা সবসময়েই স্বাগত। শুধুমাত্র গুজব ছড়ানো বা অপমানজনক পোস্ট করলে শাস্তির আওতায় আসতে হবে। তাতেও অবশ্য বিরোধীদের সমালোচনা থামছে না।

ফেসবুক বা টুইটারে আমজনতার একাংশ যে ভাবে সরকারের সমালোচনা করেন, যে ভাবে মিম ইত্যাদি বানিয়ে মজা করা হয়, তা বরাবরই না পসন্দ নীতীশের। আগেও তিনি এ নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেন অনেক হয়েছে, এ বার কড়া ব্যবস্থা। জানিয়ে দেন, যাঁরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকার, মন্ত্রী বা আমলাদের সমালোচনা করবেন, তাঁদেরই 'অপরাধী' হিসেবে গণ্য করে সাইবার আইন মোতাবেক সাজা দেওয়া হবে। বিহারের ইকনমিক অফেন্সেস উইং-এর আইজি নায়ার হাসনেন খানকে নির্দেশ দেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের পোস্ট দেখলেই যেন রিপোর্ট করা হয়। ব্যবস্থা হয় উপযুক্ত শাস্তির।

শুক্রবার সকালে নীতীশের সমালোচনা শুরু করেন বিহার রাজনীতিতে তাঁর অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তেজস্বী যাদব। অন্য কোথাও নয়, সটান টুইট করে তিনি নীতীশকে 'দুর্নীতির ভীষ্ম পিতামহ' বলে সম্বোধন করেন। পরপর লিখতে থাকেন, 'অন্তত ৬০টি কেলেঙ্কারির মূল পান্ডা নীতীশ কুমার তো দুর্নীতির ভীষ্ম পিতামহ। দুষ্কৃতীদের আশ্রয়দাতা, একটি অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক সরকারের দুর্বল প্রধান। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, আপনার নতুন নির্দেশিকা কাজে লাগিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে দেখান।' সুর চড়িয়ে টেনে আনেন হিটলারের প্রসঙ্গ- 'প্রতিবাদীরা প্রতিবাদ করতে পারবেন না। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই হাজতবাস। বিরোধী নেতাদের কাছে নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা বলতেই পারেন না সাধারণ মানুষ। নীতীশজি, আমরা জানি আপনি খুবই ক্লান্ত। কিন্তু কিছু তো লজ্জাশরম করুন!' সুর চড়াতে থাকেন বাকি বিরোধীরাও। কিন্তু সবথেকে বড় কথা হলো, সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যায় কটাক্ষ এবং কড়া সমালোচনায়।

এ সবের ফলে স্বাভাবিক ভাবেই চাপ বাড়তে থাকে নীতীশের সরকারের উপরে। ফলে তড়িঘড়ি রাজ্য পুলিশকে দিয়ে একটি সাফাই দেওয়া হয় নির্দেশিকার। এডিজি (হেডকোয়ার্টার্স) জীতেন্দ্র কুমার সেখানে লেখেন, 'গণতন্ত্রে সমালোচনা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি বিষয়। কিন্তু সমালোচনা হোক গঠনমূলক। যে ভাষা ব্যবহার করা হবে, তা অবশ্যই যেন শালীনতার সীমার মধ্যেই থাকে।' এডিজি-র ব্যাখ্যা, 'গুজব, প্রকৃত ঘটনা সরিয়ে রেখে ভুল তথ্য প্রচার এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মানহানিকর ভাষার ব্যবহারের কথা মাথায় এনে নির্দেশিকাটি দেওয়া হয়। এই তিনটিই কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য।'

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল