অ্যাপশহর

প্রশাসন কান দেয়নি, একার উদ্যোগেই একটা গোটা নদী বাঁচিয়ে দিলেন এক সাধু

সাধুর কথা কে আর কানে তোলে! সরকারি দফতরে ঘোরাই তাঁর সার হল। নগরের ময়লা নদীর পাড়েই পড়তে লাগল।

EiSamay.Com 30 Jun 2016, 8:05 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: শহরের আবর্জনা বুকে বয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে একটা নদী এ ভাবে মরে যাবে! সাধু মানুষের মন মানল না। ছুটলেন সরকারের কাছে। একবার নয়, কয়েক বার। কিন্তু সাধুর কথা কে আর কানে তোলে! সরকারি দফতরে ঘোরাই তাঁর সার হল। নগরের ময়লা নদীর পাড়েই পড়তে লাগল। আগে যেমন পড়েছে, সে ভাবেই।
EiSamay.Com after govt ignored him this man turned a dying river of human waste into paradise by himself
প্রশাসন কান দেয়নি, একার উদ্যোগেই একটা গোটা নদী বাঁচিয়ে দিলেন এক সাধু


হাল ছাড়লেন না সেই সাধু। নিরাশার অতলে না তলিয়ে, এটাকেই ধ্যানজ্ঞানচেতনাচৈতন্য করে, লক্ষ্যে থাকলেন অবিচল। চরম ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে, একাই নেমে পড়লেন। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে..., পরে পরে যদিও জুটে গেল আরও আরও অনেকে। পাঁকে নেমেই পাঁক তুললেন। হাতে হাতে নদীর বুক থেকে ময়লা উঠল। চক্ষুলজ্জার খাতিরে, নদীর পাড়ে ময়লা ফেলাও বন্ধ হয়ে গেল। মরা গাঙে আবার জোয়ার বইল! ঘাটে এসে ভাঙল ঢেউ। বার্ধক্যের বারাণসী থেকে এ যেন আবার ফিরে আসা উতলা যৌবনে। এ ভাবেই তো বয়ে চলার কথা ছিল কালী বেইনের।



বছর কয়েক আগেও লোকে যেখানে পারতপক্ষে পা ফেলত না, দূর দিয়ে গেলেও নাক চাপা থাকত রুমালে, শুধু সাফাইকর্মীদেরই আনাগোনা থাকত, তা-ও নিতান্ত পেটের তাগিদে, জীবিকার প্রয়োজনে, সেই ছবিটা আপাদমস্তক বদলেছে। ভাগাড় হয়ে উঠেছে ভূস্বর্গ! ইচ্ছেশক্তির জোরে কী করা যায়, দেখিয়ে দিয়েছেন বলবীর সিং সিচেওয়াল নামের ওই সাধু।

সময়টা যদিও খুব একটা কম নয়। মাঝে পনেরোটা বছর। এতদিন লেগে থাকার মতো ধৈর্য সবার থাকে না। বলবীরের তাই তুলনা হয় না।

পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কালী বেইন। দেড় দশক আগের কালী বেইন ছিল মরা নদী! জল ধরে রাখবে কী, নদীগর্ভে শুধুই আবর্জনা। হোশিয়ারপুরের যাবতীয় আবর্জনা জড়ো করার কেন্দ্রে হয়ে উঠেছিল নদীপাড়। পাড়ের সেই ময়লাই ক্রমে গ্রাস করতে থাকে নদীকে। ষোল বছর আগে কালী বেইনকে এ ভাবে মরতে দেখে মনমরা হন বলবীর। চলে যান সরকারি দফতরে। নদীকে রক্ষা করতে অনুনয়, বিনয় কিছুই বাদ যায়নি। গুরুত্ব না পেয়ে, শুরু হয় তাঁর স্বেচ্ছাশ্রম, শিখদের কাছে যা করসেবা।

রোজ এক কোমড় কাককালো জলে নেমে, টেনে তুলে আনেন ময়লা। ময়লার সঙ্গে সঙ্গে আগাছাও। পাশাপাশি লোকজনকে সচেতনও করতে থাকেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরতেন। পাখি পড়ার মতো করে বোঝাতেন, কেন বাঁচিয়ে রাখতে হবে কালী বেইনকে। নদী রক্ষায় একে একে আরও অনেক জনকে পাশে পেয়ে গেলেন। ২৪টা গ্রামের মানুষ এক হলেন। হাজার হাজার করসেবক। সাধুর দেখানো পথেই তাঁরা হাঁটলেন। ভালো উদ্যোগে টাকা জোগানোর লোকও জুটে গেল। কোদাল, বেলচা, এটা-সেটা প্রয়োজনীয় সবকিছুই কেনা হতে লাগল সেই টাকায়।

ক্রমে আবর্জনা দূর হল। নতুন করে আবর্জনা পড়াও একদিন বন্ধ হয়ে গেল। মরা নদীর বুকের মাটি উঠল। বাড়ল গভীরতা। নদী পেল আগের রূপ। পাড় হয়ে উঠল সুন্দর।

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল