বাংলায় তালিবান-বান্ধব কারা? খোঁজ গোয়েন্দাদের
আফগানিস্তান (Afghanistan) দখল করেছে তালিবানরা (Taliban)। আর এর জেরে এ দেশে তালিবানপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলির খোঁজ শুরু করতে তৎপর ভারতীয় গোয়েন্দারা। বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী এ রাজ্যেও সক্রিয় বলে ধারণা।
হাইলাইটস
- তালিবানপন্থী জঙ্গি সংগঠনগুলির হদিস পেতে এ বার সক্রিয় হয়ে উঠলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা
- এমন বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী রয়েছে যারা ইতিমধ্যে এদেশ শুধু নয়, এই রাজ্যেও বেশ কিছুদিন ধরে সক্রিয়
- যার মধ্যে একটি নাম, আনসার-উল-বাংলা টিম বা এবিটি
চিত্রদীপ চক্রবর্তী
মূলত আমেরিকান সরকার আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলার পর থেকে ভারতীয় এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জেএমবি, নব্য জেএমবি এবং আনসার-উল-বাংলার সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে।
গোয়েন্দা কর্তাদের বক্তব্য, বেশ কিছুদিন আগে আনসার-উল-ইসলাম রোহিঙ্গা ভিত্তিক হারাকা-আল-ইয়াকিনের সাহায্য নিয়ে মায়নমারের তিনটি বর্ডার আউট পোস্টে হামলা চালায়। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আল কায়দা বাংলাদেশের যুবকদের কাছে আবেদন জানিয়েছে ওই জেহাদি আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য। এর পাশাপাশি ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবেড়িয়ায় আল কায়দা ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের সঙ্গে আনসারুলের দাওয়াহিল্লা (বৈঠক)-এর সময় নতুন করে নাশকতার ডাক দেওয়া হয়।
দেশবিরোধী কাজের অভিযোগে বর্তমানে বাংলাদেশের জেলে আনসার-উল বাংলার মাথা মহম্মদ জসিমুদ্দিন বন্দি থাকলেও বিভিন্ন সময় সেখান থেকেই তিনি ব্লগারদের খুনের ঘটনার সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন। আল কায়দা নেতা আনওয়ার অল আওলাকির ঘনিষ্ঠ জসিমুদ্দিন ঢাকার একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, নিজের বক্তব্য সংগঠনের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি 'আনসার-উল বাংলা' নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেছিলেন, যার সার্ভারটি রাখা ছিল পাকিস্তানে। এই সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে আল-কায়দা এবং তালিবানদের হয়ে লাগাতার প্রচার শুরু করে এবিটি। সংগঠনের এই ভাবধারাকে 'মাদু' এবং সদস্যরা 'ইখাওয়া' নামে পরিচিত ছিলেন। এমনকী, এবিটির নিজস্ব স্লিপার সেল তৈরি করা হয়েছিল তিন থেকে চারজন সদস্য নিয়ে। প্রতিটি সেলে একজন করে কো-অর্ডিনেটর নিযুক্ত করা হত। যিনি সেকশন চিফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। আবার তিন-চারটি সেকশন মিলিয়ে তৈরি হত এক একটি ক্লাস্টার। এর প্রধানরা পরিচিত ছিলেন আইডিএন(ইজরাতুল-দাওয়াল-নুসরা) চিফ নামে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এরা অনলাইন রিক্রুটমেন্টের কাজও করতেন। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, যাঁরা মুসলিম নন, এমন যুবকদেরও এবিটিতে যোগ দিতে বলা হোত। সংগঠন চালানোর খরচ আসত আল কায়দা এবং মধ্যপ্রাচ্যের হাক্কানি নেটওয়ার্ক থেকে।
গোয়েন্দা রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আল কায়দার ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট দেশের পক্ষে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, কিছুদিন আগেই আলকায়দার ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের কমান্ডার আসিকুর রহমান তাঁর ভিডিয়ো বার্তায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা স্থানীয় যুবকদের নিজেদের সংগঠনে নিয়োগ করার কাজ শুরু করছেন।
এমনিতেই গত দেড় বছর ধরে কোভিডের থাবা বিভিন্ন দেশের জঙ্গি সংগঠনের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। তার প্রথম কারণ, বহু যুবক ঘরে বসে সময় কাটানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকটা সময় ধরে থাকছেন। দ্বিতীয়ত, কাজ না থাকায় তাঁরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আইএস এবং আল কায়দা এই অতিমারীকে 'ভগবানের যোদ্ধা' নাম দিয়ে ব্যাপক ভাবে প্রচার চালিয়ে এই যুবকদের নিজেদের দিকে টেনে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
কিন্তু এবিটি নিয়ে গোয়েন্দারা এত চিন্তিত কেন? এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালে জেএমবির কার্যকলাপের হদিশ পাওয়া যায়। খাগড়াগড়ের ঘটনার পর দেশজুড়ে ধরপাকড় হওয়ায় জেএমবি এমনিতেই সরাসরি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে একটি অংশ আইএস এবং অন্য অংশটি আলকায়দার ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের সঙ্গে যুক্ত। দ্বিতীয় অংশটি নব্য জেএমবি নামে পরিচিত। যুক্তি বলছে, বর্তমানে তালিবানদের হাত ধরে আলকায়দা শক্তিশালি হলে জেএমবির পুরো অংশটাই টাকা এবং ক্ষমতার লোভে সেদিকে ঢলে পড়বে। আর কে না জানে, এরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় নব্য জেএমবি এবং আনসারুল বাংলার সদস্যরা। তারা এই সুযোগের ফায়দা পুরো মাত্রায় তুলবে।