অ্যাপশহর

২০০ শতাংশ জরিমানা নিয়ে প্রশ্ন

পুরোনো নোট অচল ঘোষণা করার পরেই ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক ঋণের বোঝা সেই নোটেই মেটানোর কাজ শুরু হয়েছে৷

EiSamay.Com 17 Nov 2016, 8:46 am
এই সময় : লুকোনো টাকায় ২০০ শতাংশ জরিমানা কি আদৌ সম্ভব ? আয়কর নিয়ে যাঁরা ঘাঁটাঘাঁটি করেন প্রশ্নটা তুলছেন তাঁরাই৷ ৮ নভেম্বর কেন্দ্র পুরোনো ৫০০ টাকা ও ১,০০০ টাকার নোট বাতিল করার পরের দিন কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব হাসমুখ আধিয়া ঘোষণা করেন , আমানতকারীর ঘোষিত আয়ের সঙ্গে ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া টাকার পরিমাণ সামঞ্জস্যপূর্ণ না -হলে আয়কর আইনের আওতায় ২০০ % পর্যন্ত জরিমানা নেওয়া হবে৷ এই ঘোষণার সাতদিনও পেরোয়নি৷ সরকারের দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল বিভিন্ন মহলে৷ কেন্দ্রের এই নির্দেশ মেনে আয়কর আধিকারিকরা আদৌ কতটা জরিমানা ধার্য করতে সক্ষম হবেন বা আদৌ এই আইনের আওতায় ২০০ শতাংশ জরিমানা নিতে পারবেন কি না , তার যৌক্তিকতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছ
EiSamay.Com 200 persent penalty tax for hide money
২০০ শতাংশ জরিমানা নিয়ে প্রশ্ন


পুরোনো নোট অচল ঘোষণা করার পরেই ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক ঋণের বোঝা সেই নোটেই মেটানোর কাজ শুরু হয়েছে৷ আর তার অঙ্কও নেহাত কম নয়৷ কাজেই এর উপর ২০০ % জরিমানা কী ভাবে বসানো যেতে পারে তা নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন আয়কর দন্তরের কর্তারা৷ পুরোনো নোটেই কাঁচামাল সরবরাহকারীদের বকেয়া মেটানো থেকে পুরোনো ঋণ পরিশোধ করতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করা , বিভিন্ন ক্লাব , স্পা , জিমের সদস্যপদ গ্রহণ করার হিড়িক পড়ে গিয়েছে৷ প্রতি ক্ষেত্রেই লেনদেন সরকারের পুরোনো নোট বাতিলের আগেই হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে৷ এই টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়লেও কর আইনে তার উপর স্বয়ংক্রিয় ভাবে কর বসানোর কোনও পদ্ধতি নেই বলে কর দন্তরের কর্মীরা তাঁদের শীর্ষ কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানাতে শুরু করেছেন বলে আয়কর আধিকারিক , ব্যাঙ্ক কর্মী , চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের দাবি৷ বিশিষ্ট চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট সুমন্ত্র গুহ বলেন , ‘কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির ঘোষিত আয়ে অসঙ্গতি দেখা গেলে আয়কর আইনের ২৭০এ ধারার ৮ নম্বর উপধারা অনুযায়ী ২০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা যেতে পারে৷

কিন্ত্ত , ২০১৩ -১৪ অর্থবর্ষে আয়কর আইনে ১১৫ বিই ধারা যুক্ত করা হয়৷ ওই ধারা অনুযায়ী , কোনও ব্যক্তির আয় এবং ঘোষিত আয়ের মধ্যে যে ফারাক থাকবে সেই ফারাকের উপর ৩০ শতাংশ কর এবং সারচার্জ সমেত মোট ৩৩ .৯ শতাংশ কর দিতে পারেন৷ ’সুমন্ত্রবাবুর অভিমত , কোনও ব্যক্তি যদি তাঁর কাছে জমা থাকা টাকার উত্স সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে না পারেন তা হলে তিনি তা আয়কর আইনের ১১৫ বিই ধারায় তাঁর চলতি অর্থবর্ষের আয় হিসাবে দেখিয়ে ২০১৭ -১৮ অ্যাসেসমেন্ট বর্ষের আয়কর রিটার্ন ফাইলে উল্লেখ করতে পারেন এবং ওই অর্থের উপর আগাম করও দিতে পারেন৷

এর পর তিনের (টঙ্কাপুরাণ ) পাতায়অর্ধেক এটিএমে নয়া ৫০০ , ২০০০ পেতে এক সন্তাহএই সময় : দেশের প্রায় ২ লক্ষ এটিএম মেশিনের অর্ধেকে নতুন ৫০০ টাকা এবং ২ ,০০০ টাকার নোট দেওয়ার উপযোগী করে তুলতে আরও এক সন্তাহ সময় লাগবে বলে বুধবার জানিয়েছে কেন্দ্র৷ এর ফলে আগামী এক -দু’দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল তাতে জল পড়ে গেল৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন , ‘সরকার আরও বেশি করে নতুন ৫০০ টাকার নোট ছাপানো শুরু করে দিয়েছে৷ সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত ওই টাকা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ৷ দেশের অর্ধেক এটিএমকে নতুন নোট দেওয়ার উপযোগী করে তুলতে এখনও এক সন্তাহ সময় লাগবে৷ ’৷

সে ক্ষেত্রে তিনি মার্জিনাল রেট অফ ইন্টারেস্ট অনুযায়ী ৩৩ .৯ শতাংশ হারে কর দিয়েই ছাড় পেতে পারেন৷ তা হলে সরকারের ২০০ শতাংশ জরিমানার ঘোষণা কেন ? সুমন্ত্র বলেন , ‘সরকারের এই ঘোষণার ফলে দেশের বেশ কিছু করদাতা যদি পুরোনো টাকা জমা দিয়ে তার উপর ৩০ শতাংশ হারে করও দেন , তা হলে সরকারি কোষাগারে মোটা অর্থ ঢুকবে৷ ইনকাম ডিক্লারেশন স্কিমের আওতায় সরকার ৪৫ শতাংশ জরিমানা নিয়ে ৬৫ ,০০০ কোটি টাকা তুলতে সমর্থ হয়েছিল৷ এর ফলে কমপক্ষে ২৯ ,০০০ কোটি টাকা কর আদায় করতে পারবে৷ ’এ প্রস ঙ্গে কর দন্তরের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন , ‘লুকোনো আয়ের উপর জরিমানা নেওয়া যেতে পারে৷ কিন্ত্ত , কোনও ব্যক্তি যদি ব্যাঙ্কে এক কোটি টাকা জমা দিয়ে তার উপর ৩৩ শতাংশ কর এবং সেই টাকা ২০১৭ -১৮ অ্যাসেসমেন্ট বর্ষের রিটার্ন ফাইল করার সময় চলতি অর্থবর্ষের আয় হিসাবে দেখান তা হলে কী হবে ? এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজের থেকেই জমা থাকা অর্থ প্রকাশ্যে আনছেন এবং রিটার্ন ফাইল করার সময় ‘অন্য সূত্র থেকে আয় ’ হিসাবে দেখাচ্ছেন৷

গত কয়েকদিন আমাদের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে৷ ২০০ শতাংশ জরিমানা নিতে গেলে আগের কর আইনগুলি বদলাতে হবে৷ ’ সুমন্ত্র বলেন , ‘ইনকাম ডিক্লারেশন স্কিমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখার অঙ্গীকার থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা পাওয়া যাবে না৷ আয়কর দন্তর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মতো অন্য আর্থিক জালিয়াতির তদন্তকারী সংস্থার কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তথ্য দিতে পারে এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারেন৷ ২০০২ সালের পিএমএলএ আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তির কাছে জবাব চাওয়া হতে পারে৷ ’এক প্রাক্তন কর আধিকারিকের মতে , ‘জরিমানার হাত থেকে বাঁচতে কোনও ব্যক্তি তা তাঁর সন্তানের অ্যাকাউন্টেও উপহার হিসাবে দেখাতে পারেন৷ বাড়ির মহিলাদের অ্যাকাউন্টেও টাকা জমা দেওয়ার সময় পে ইন স্লিপ এবং প্যান কার্ডের ফোটোকপিতে ‘পরিবারের খরচ থেকে বাঁচানো নোট বাতিল হওয়ায় জমা দেওয়া হচ্ছে ’ লিখে জমা দিতে পারেন৷

সে ক্ষেত্রে আয়কর দপ্তরের ২০০ শতাংশ জরিমানা নেওয়ার কোনও উপায় থাকবে না৷ ’ ব্যাঙ্কে জমা পড়া বিপুল অর্থের সূত্র খোঁজা আয়কর দপ্তরের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি সংস্থা , ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তিগত ঋণগ্রহীতা তাঁদের বকেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য এবং এককালীন সমঝোতার জন্য লুকোনো অর্থ কাজে লাগাতে শুরু করেছে৷ এমনই এক ব্যাঙ্কের আধিকারিক জানান , ‘আমাদের কাছে বকেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য এককালীন ২০ কোটি টাকা জমা পড়েছে , আমরা বিষয়টি আয়কর দন্তরকে জানিয়ে দিয়েছি৷ ’হিসাব পরীক্ষাকারী সংস্থা চোক্সি অ্যান্ড চোক্সি -র সিনিয়র পার্টনার মিতিল চোক্সি বলেন , ‘ব্যাঙ্কগুলিতেই পুরোনো ৫০০ টাকা এবং ১,০০০ টাকার নোট জমা পড়ছে না , হেলথ সেন্টার , স্পা এবং বিভিন্ন সংস্থা আগাম বিক্রির জন্য টাকা নিচ্ছে৷ হোটেলগুলিতেও প্রিপেড প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে এবং এ সবই পুরোনো অচল টাকায় হয়েছে৷ ’

পরের খবর

Nationসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল