অ্যাপশহর

মা-বাবার এই ভুলই কিন্তু ভবিষ্যতে ক্ষতি করে সন্তানের, আপনি করছেন না তো?

অনেক অভিভাবক ভাবেন, তাদের সন্তান এখনও এত ছোট যে ছোটখাটো দায়িত্ব সামলানোর ক্ষমতাও নেই তার। এর ফলে ছোট থেকে দায়িত্ব নেওয়ার অভ্যাস থাকে না, পরে বড় হয়ে নানা সমস্যা তৈরি হয়। কাজেই ছোট থেকেই তাকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিন, তার নিজের, ঘরের এবং অন্যের। সে কীভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছে সেদিকে নজর রাখুন।

Produced byDebnil Saha | Lipi 12 Aug 2022, 2:32 pm
সব বাবা - মাই সন্তানকে ভালো করে মানুষ করতে চান। চান সে ভালো মানুষ হোক। দশ জনের একজন হোক। কিন্তু কেউ পারেন, কেউ পারেন না। তাদের প্রভাবে সন্তানের সঠিক ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠার বদলে উল্টো বিপত্তি হয়। কারণ সন্তানকে প্রতিপদে উৎসাহ দেওয়া ও কীভাবে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হয় তা শেখানোর বদলে তারা তাকে সব সময় আগলে রাখার চেষ্টা করেন। গঠনমূলক সমালোচনা করে উৎসাহ দেওয়ার বদলে হয় নিরুৎসাহ করেন নয়তো বকাঝকা করে থামিয়ে দেন। ফলে সন্তান নিজে থেকে নতুন কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তার আত্মবিশ্বাস কমে যায়।
EiSamay.Com parenting expert shares the common mistake that psychologically damages kids and what to do instead
মা-বাবার এই ভুলই কিন্তু ভবিষ্যতে ক্ষতি করে সন্তানের, আপনি করছেন না তো?

ভাবছেন, কীভাবে এগোলে সন্তানের প্রতিভার সঠিক বিকাশ হতে পারে? বাড়তে পারে তার আত্মবিশ্বাস? আসুন, দেখে নেওয়া যাক।

ছবি সৌজন্য: unsplash.com

​সন্তানকে শেখান, কীভাবে দায়িত্ব নিতে হয়

অনেক বাবা-মা ভাবেন তাদের সন্তান এখনো এত ছোট যে ছোটখাটো দায়িত্ব সামলানোর ক্ষমতাও নেই তার। নিজে হাতে খাওয়া, নিজের পোশাক নির্বাচন করে নিজে সাজগোজ করে নেওয়া কি স্কুলের ব্যাগ গোছানো, নিজের খাবারের প্লেট নিজে ধুয়ে নেওয়া ইত্যাদি ছোটখাটো কাজও তাই তাদের করতে দেন না তারা। কিন্তু তারা ভুল করেন। একদম ছোট থেকে তাকে তার কাজ করে নিতে দিলে, যেভাবেই সে করুক, অন্তত করার চেষ্টা করলেও তার প্রতিভার বিকাশ হতে শুরু করে। কীভাবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয় সেই বোধ গড়ে ওঠে। ফলে পরবর্তী কালে বড় কাজের দায়িত্ব নিতেও সে আর ভয় পায় না। এবং সে কাজের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে তার দায়িত্ব নিতে শেখে। ধরা যাক স্কুলের ব্যাগ গোছানোর সময় সে যদি কোনো বই কি খাতা কি কলম নিতে ভুলে যায়, তার ফলে স্কুলে গিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, এবং তাকে যেভাবে তা সামলাতে হয়, তা এক লম্বা প্রসেস, এবং এই প্রসেস একযোগে তাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। তার সব কিছু সঠিকভাবে করার দক্ষতা জন্মায়, ভুল স্বীকার করার ও শুধরে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়, বিরূপ পরিস্থতি কীভাবে সামলাতে হয় তারও একটা আন্দাজ হয়ে যায়। কিন্তু এই কাজটি যদি তাকে করতে না দেওয়া হত, এ সব গুনের বিকাশ হওয়ার সুযোগই হতো না। কাজেই ছোট থেকেই তাকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিন, তার নিজের, ঘরের এবং অন্যের। সে কীভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছে সেদিকে নজর রাখুন কিন্তু প্রতি পদক্ষেপে খিট খিট করবেন না। যতক্ষণ না খুব বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে তাকে তার মতো করে করতে দিন। এতে সন্তান স্বাবলম্বী হবে, আত্মবিশ্বাসী ও কর্মঠ হয়ে গড়ে উঠবে।

​আগলে রাখবেন না, তার যুদ্ধ তাকেই লড়তে দিন

সন্তানকে সঠিক দিশা দেখানো ও সে যাতে ভুল পথে চলে না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে একেবারে আগলে আগলে রাখবেন। তাকে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেবেন। তাকে তার পছন্দমত জীবন বেছে নিতে দিন, ভুল করতে দিন। ভুলের চেয়ে বড় শিক্ষক আর নেই। ভুল থেকে যে শিক্ষা নিতে পারে তার চেয়ে বড় সাহসী আর কেউ হয় না। এই সাহস তার মধ্যে সঞ্চারিত করুন। এতেই তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হবে।

আরও পড়ুন: বাবা-মায়ের এই ভুলগুলো কিন্তু সন্তানের ভবিষ্যতে ক্ষতি হয়ে দাঁড়াতে পারে!

​আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখান

আবেগ নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা খুব বড় শিক্ষা। কারণ জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষকে নানা রকম বিপর্যয় ও টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তখন সেই ঝড় সামলানোর প্রধান আয়ুধ হয় বাস্তব বোধ, যুক্তি বুদ্ধি ও নিয়ন্ত্রিত আবেগ। সমস্যাকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে দেখে মাথা ঠাণ্ডা রেখে এগিয়ে যেতে হয়। ছোট থেকে বাস্তববাদী চিন্তাধারা তৈরি না হলে, অযৌক্তিক আবেগে রাশ টানতে না শিখলে যা করা সম্ভব হয় না বেশিরভাগ সময়। কাজেই সন্তানের চরিত্রের দুর্বলতম জায়গাটিকে চিহ্নিত করতে শেখান। কীভাবে সেই দুর্বলতা সে কাটিয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে ধাপে ধাপে তাকে অবহিত করুন। তাকে ভাবতে শেখান। একমাত্র তাহলেই সে আবেগ সামলে দৃঢ় চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।

​নিজেকে দয়ার পাত্র করবেন না

কখনো বলবেন না, আমরা গরীব তাই এই আনন্দের অধিকার নেই আমাদের। বলবেন না, আমাদের হাজার সমস্যা আছে, তাই অন্যরা যা পারে তা আমরা পারি না। তাহলে তার মধ্যে হেরে যাওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠবে। সে নিজেকে অসহায় ভাববে। ভাগ্যকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার বদলে ভাগ্যকে দোষারোপ করে নিজে হাত গুটিয়ে বসে থেকে পরাজয়কে মেনে নেবে। আর তখনই পুরোপুরি পরাজিত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সূত্রপাত হয়ে যাবে। কাজেই কোনরকম ছুতোনাতার মধ্যে না গিয়ে যা আছে, যতটুকু আছে তা নিয়েই পরিপূর্ণ ভাবে বাঁচতে শেখান। টিম স্পিরিট যাতে গড়ে ওঠে সেই চেষ্টা করুন। ভুলভাল কথাবার্তা বন্ধ করে তার যা পছন্দ তেমন কাজে বা খেলায় উৎসাহিত করুন। ফুটবল বা ক্রিকেট ক্লাসে ভর্তি করে দিতে পারেন। বিতর্ক সভায় অংশ নিতে উৎসাহ দিতে পারেন, যাতে নিজের দুর্বলতা ভুলে সে সকলের সঙ্গে খোলামেলা ভাবে মিশতে পারে।

আরও পড়ুন: বাচ্চাদের সঙ্গে এমন আচরণ আপনিও করেন? ক্ষতি করছেন কিন্তু!

​শাস্তি দেওয়ার কথা ভুলে যান

কারণ শাস্তি দিয়ে কোনো কাজের কাজ হয় না। মা বাবার রাগের বহিঃপ্রকাশ হয় আর সন্তানের মনে জাগে বিরুদ্ধ ভাব। সে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। আরো বেশি অবাধ্য হয়। বিপথে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়। কাজেই একটু ধৈর্য ধরুন। সহজ ভাবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝানোর চেষ্টা করুন। কঠোর হন কখনো, কিন্তু ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করবেন না। তাহলেই দেখবেন সে নিজে থেকেই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবে ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

আরও পড়ুন: বাচ্চা কি সহজেই রেগে যায়, খারাপভাবে বহিঃপ্রকাশ করে? দেখুন কী বলছেন শিশু মনোবিদ

লেখকের সম্পর্কে জানুন
Debnil Saha
Debnil Saha is working as a Consultant in Eisamay.com, Bengali News website of the Times Internet, a product of the Times of India Group.... আরও পড়ুন

পরের খবর