অ্যাপশহর

বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে বাড়ির সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া জরুরি, দাবি সমীক্ষায়

খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টায় আপনি নিজের সন্তানের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারবেন, কোনও বস্তুর অপব্যবহারের ঝুঁকি কমাতে পারবেন। এমনকি অবসাদ, স্থূলতার সম্ভাবনাও কমিয়ে আনতে পারবেন।

EiSamay.Com 27 Nov 2021, 3:25 pm
এই সময় জীবন যাপন ডেস্ক: অতীতে যৌথ পরিবারে এক সঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। দিনে ২-৩ বার এক সঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠত পারিবারিক সুসম্পর্ক। কিন্তু বর্তমানে একক পরিবারে মুষ্টিমেয় কয়েকজন সদস্যও একসঙ্গে বসে খাবার খান না। ব্যস্ততা, কাজের চাপ ইত্যাদি কারণ এর জন্য দায়ী থাকতে পারে। আবার অনেকে ফোনে মুখ গুঁজে খাবার থালা নিয়ে নিজের বেডরুমে চলে যান, কেউ টিভির পর্দায় চোখ আটকে রেখে খাবার খান। এর ফলে অতীতের খাবার টেবিলের সেই খোশগল্প এখন লোপ পেয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই শীথিল হচ্ছে পারস্পরিক সম্পর্কও। কিন্তু এক সঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার গুরুত্ব স্বীকার করেছে বিজ্ঞানও। বলা হচ্ছে, এর ফলে বাচ্চাদের মানসিক ও শারীরিক উন্নতি সাধন সম্ভব। ভাবছেন একসঙ্গে বসে খেলে কী এমন অসাধ্য সাধন হবে?
EiSamay.Com 7 unexpected benefits of eating together as a family according to science
বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে বাড়ির সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া জরুরি, দাবি সমীক্ষায়



গত ২ দশকের নানান সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে, প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে স্ক্রিন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে এবং আহারের সময় পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার মধ্য দিয়ে পরিবারের প্রতিটি সদস্য, বিশেষত বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ সম্ভব।

এক সঙ্গে বসে খাবার খেলে কী উপকার পাবেন ভাবছেন?

​আপনার সন্তান সঠিক খাদ্যাভ্যাস শিখবে

একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, পরিবারের প্রতিটি সদস্য বিশেষত কিশোর-কিশোরীরা এক সঙ্গে বসে খাবার খেলে তাদের সামগ্রিক ডায়েট ভালো হয়। যে সমস্ত কিশোর-কিশোরীরা পরিবারের সঙ্গে বসে খাবার খায়, তাঁরা ফাস্ট ফুড ও শর্করা যুক্ত খাবারের পরিবর্তে অধিক পরিমাণে ফল এবং সবজি খেয়ে থাকে।

​গভীর সাইকোসোশ্যাল বিষয় প্রতিরোধ করে

২০১৫ সালে ক্যানাডিয়ান সমীক্ষকদের একটি রিভিউ থেকে জানা যে, পরিবারের সঙ্গে বসে আহার গ্রহণ করলে কিশোরদের খাবারের বিশৃঙ্খলা, মদ্যপান ও অনুপযুক্ত খাদ্যবস্তুর সেবন, হিংস্র ব্যবহার, অবসাদ এবং আত্মহত্যার চিন্তা ভাবনা প্রতিরোধ করা যায়। রিভিউ থেকে জানা গিয়েছে যে, কিশোরীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার উপকারিতা উপভোগ করতে চেয়েছেন।

​স্থূলতার সম্ভাবনা কম করা যায়

জার্নাল অফ পিডিয়াট্রিকসে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে, পরিবারের সঙ্গে বসে আহার করা এবং স্থূলতা কম করার মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ১০ বছর পর এর সুফল লাভ করা যাবে। এই সমীক্ষায় বলা হয় যে, প্রতিটি পরিবারকে প্রতি সপ্তাহে এক বা দুবার এক সঙ্গে বসে খাবার খাওয়া উচিত। এর ফলে পরবর্তী জীবনে তাঁদের সন্তানরা ওজন বৃদ্ধির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবে।

​বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়তে পারে

খাবার খাওয়ার সময় কথাবার্তার মাধ্যমে সন্তান অভিভাবক ও বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে যে নিরাপত্তা অনুভব করতে পারে, তা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়, এমনই মত প্রকাশ করেন স্ট্যানফোর্ড চিলড্রেনস হেল্থ-এর বিশেষজ্ঞরা। সন্তানের কাছ থেকে তাদের দিন কেমন কাটল, তারা কী করল ইত্যাদি জানতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে আসলে আপনারা তাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, তারাও গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনারা তাদেরও সম্মান করেন। বাচ্চাদের নিজের খাবার টেবিল নিজে বেছে নিতে দিন। পাশাপাশি খাবারের প্রস্তুতি সংক্রান্ত কিছু কাজ যেমন খাবার পরিবেশন বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করতে দিন।

​যোগাযোগের স্কিল বাড়ায়

২০১৮ সালে একটি সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে সমস্ত পরিবারের ৬ বছরের বাচ্চাদের খাবার টেবিলের অভিজ্ঞতা সুখপূর্ণ এবং ইতিবাচক, তারা ১০ বছর বয়সে এসে তার সুফল লাভ করে। সাধারণ স্বাস্থ্য ও ফিটনেসের পাশাপাশি খাবার টেবিলে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর বিষয় কথোপকথন তাদের সমৃদ্ধ করে তোলে এবং তাদের যোগাযোগের স্কিল বাড়ায়।

​সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে বাচ্চারা

১৯০০০ ছাত্রদের ওপর সমীক্ষা চালায় জামা (JAMA) পেডিয়াট্রিকস। সাইবার বুলিং, অ্যাংসাইটি, অবসাদ এবং সাবস্ট্যান্স অ্যাবইউসের স্পষ্ট উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয় সেখানে। আবার ৫ জনের মধ্যে ১ জন সাইবার বুলিংয়ের শিকার ছিল। তবে সপ্তাহে চার বা তার চেয়ে বেশি দিন ধরে যে বাচ্চারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে খাবার খায়, তাদের মধ্যে সাইবার বুলিং জনিত সমস্যা কম দেখা যায়। কারণ পরিবারের সঙ্গে দৈনন্দিন যোগাযোগ অভিভাবকদের গাইডেন্স এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

পরের খবর

Lifestyleসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল