অ্যাপশহর

গরমকে পাত্তা না দিয়ে প্রকৃতির কোলে বসে সতেজ থাকুন, ঘুরে আসুন গোকর্ণ থেকে

কর্ণাটকের উত্তর কানাড়া জেলার ছোট্টো শহর গোকর্ণ। আরেক নাম কানাড়ার মন্দির নগরী। বহু মানুষ তীর্থ করতে গোকর্ণ যান। তবে অন্যান্য তীর্থক্ষেত্রের মতো কোলাহল এখানে নেই। যদিও তীর্থক্ষেত্র ছাড়াও গোকর্ণের একটি দিকে রয়েছে বিশাল আরব সাগর। আর সেই সাগরেই তীরেই রয়েছে মন্দির নগরী গোকর্ণের একাধিক সমুদ্র সৈকত।

Produced byDebnil Saha | Lipi 10 Jun 2022, 11:30 am
অস্বস্তিকর গরমের মধ্যে কাজের ফাঁকে ছোট্টো অবসর পেলে মন আর শরীর খানিকটা শান্তি চায়। মনে হয় এমন কোনও জায়গা যদি থাকত যেখানে মানুষে কিংবা যানবাহনের কোলাহল বা চেঁচামিচি নেই। মনোরম আবহাওয়া। প্রকৃতির নানা শব্দই হতে পারে একমাত্র সঙ্গী। সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন, পাখির কোলাহল, মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি এবং মন্ত্রের সুর শুনতে শুনতে মনে নেমে আসবে অপার শান্তি।
EiSamay.Com places in gokarna to visit in summers
গরমকে পাত্তা না দিয়ে প্রকৃতির কোলে বসে সতেজ থাকুন, ঘুরে আসুন গোকর্ণ থেকে

সেই রকমই একটি মনোরম স্থান হল গোকর্ণ। কর্ণাটকের উত্তর কানাড়া জেলার ছোট্টো শহর এটি। আরেক নাম কানাড়ার মন্দির নগরী। বহু মানুষ তীর্থ করতে গোকর্ণ যান। তবে অন্যান্য তীর্থক্ষেত্রের মতো কোলাহল এখানে নেই। যদিও তীর্থক্ষেত্র ছাড়াও গোকর্ণের একটি দিকে রয়েছে বিশাল আরব সাগর। আর সেই সাগরেই তীরেই রয়েছে মন্দির নগরী গোকর্ণের একাধিক সমুদ্র সৈকত।
১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের কাছে অবস্থিত কর্ণাটক-গোয়া সীমান্তের কাছেই অবস্থিত গোকর্ণ। ৭০-৮০-র দশকে গোকর্ণ ছিল হিপিদের প্রিয় জায়গা। গোয়ার থেকে গোকর্ণ অনেকবেশি নির্মল এবং শান্তিপূর্ণ। তাই হয়তো হিপিরা এই স্থানে যাতায়াত শুরু করে। গ্রীষ্মে অবশ্য এই স্থানটি বেশ গরম এবং আর্দ্র কিন্তু সমুদ্রের ধারে গরমের কষ্ট বিশেষ অনুভূত হয় না। এটিকে অফবিট সমুদ্র সৈকত বললেও অত্যুক্তি হয় না।

​মহাবালেশ্বর মন্দির

গোকর্ণে বেড়াতে গেলে ঈশ্বরে বিশ্বাসী হন কিংবা না হন, মহাবালেশ্বর মন্দিরে একবার ঢুঁ দিতেই হবে। দেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সঙ্গে আলাপ হতে পারে এই মন্দিরে। মন্দিরের শিবলিঙ্গটিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী শিবলিঙ্গ বলে বিশ্বাস করেন হিন্দুরা। মন্দিরের স্থাপত্য ভাস্কর্য্য অপূর্ব সুন্দর। দ্রাবিড় সভ্যতার স্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে সেখানে। কর্ণাটকের সাত মুক্তিস্থলের অন্যতম এই মহাবালেশ্বর মন্দির। পুরাণ মতে, কৈলাশ পর্বত থেকে নাকি এই মন্দিরটিকে উড়িয়ে এনেছিলেন শিবভক্ত লঙ্কাধিপতি রাবণ।

যদিও ইতিহাস বলছে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা কদম্ব রাজবংশের রাজা ময়ূরশর্মা। ধর্মপ্রাণদের বিশ্বাস রাবণ রাজার আনা পাথরের অংশ দিয়েই পরবর্তী সময় মন্দির তৈরি করেছিলেন কদম্বরাজ। আরবসাগরের কাছেই অবস্থিত এই মন্দির। মহাবালেশ্বর মন্দিরটি দক্ষিণ কাশী নামেও পরিচিত। সময়ে সময়ে সমুদ্রের গর্জন, মন্দিরের ঘণ্টা ধ্বনি এবং পুরোহিতের মন্ত্রের সুর মিলেমিশে একাকার হয়ে এলাকায় প্রতিষ্ঠা করে এক অপার শান্তির পরিবেশ। এই শান্তির খোঁজেই হয়তো অনেকে গোকর্ণে ছুটে যান।

মন্দিরের প্রসাদ সাম্বার এবং দই ভাত। প্রতিদিন ভোর ৬টা নাগাদ মন্দির খোলে, বন্ধ হয় সাড়ে ১২টা। ফের মন্দির খোলে বিকেল ৩টেয় এবং বন্ধ হয় রাত ৯টায়।

​মহাগণপতি মন্দির

মহাবালেশ্বর মন্দিরের কাছে অবস্থিত মহাগণপতি মন্দির এখানকার আরেক পবিত্র তীর্থস্থল। মন্দিরের প্রধান আরাধ্য দেবতা গণেশ। কিংবদন্তী অনুসারে, রাক্ষসরাজ রাবণ কৌশলে গণেশের একটি কালো পাথরের মূর্তি স্থাপন করেন। সেই মূর্তি আজও পূজিত হয়। এই মন্দিরও প্রতিদিন ভোর ৬টা নাগাদ মন্দির খোলে, বন্ধ হয় সাড়ে ১২টা। ফের মন্দির খোলে বিকেল ৩টেয় এবং বন্ধ হয় রাত ৯টায়।

​কোটী তীর্থ

কোটী তীর্থের অর্থ হাজার প্রস্রবনের দেশ। মহাগণপতি মন্দির এবং মহাবালেশ্বর মন্দির থেকে কোটী তীর্থ পায়ে হাংটা পথ। হিন্দুদের কাছে এই স্থান অতি পবিত্র। কিংবদন্তি, এই হ্রদে ডুব দিয়ে স্নান করলে মানুষের সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। স্থানটি অত্যন্ত আধ্যাত্মিক, শান্তিপূর্ণ এবং পবিত্র। গোকর্ণে ছুটি কাটাতে গেলে এই স্থানে অবশ্যই যাওয়া উচিত।

​মিরজান দুর্গ

কর্ণাটকের মিরজান দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন রানি চেন্নাভৈরদেবী। তিনি ছিলেন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অন্তর্গত গারসোপ্পা রাজ্যের রানি। তাঁর রাজত্বে উৎকৃষ্টমানের গোলমরিচ ফলত। সেকারণেই সেই এলাকায় পর্তুগিজ বণিকদের আনাগোনা লেগেই থাকত। রানিকে পর্তুগিজরা ডাকতেন গোলমরিচ রানি নামে। তাঁর নির্দেশে পর্তুগিজ স্থপতিদের সহায়তার সপ্তদশ শতকে মিরজান দুর্গ নির্মিত হয়। এই দুর্গে বাস করেই রাজ্য শাসন করতেন রানি চেন্নাভৈরদেবী। দক্ষিণ ভারতীর ইতিহাসে এই দুর্গের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। মিরজান দুর্গ দর্শকদের জন্য খুলে যায় সকাল ৮টায়। বন্ধ হয় ঠিক বিকেল সাড়ে ৫টায়। কোনও প্রবেশমূল্য নেই।

​হাফ মুন বিচ

তুলনামূলক ছোটো এই সমুদ্র সৈকতে দোকানপাটের সংখ্যা বেশ কম। কিন্তু হলে কী হবে, হাফ মুন বিচে একবার গেলে ফিরে আসতে ইচ্ছে করবে না। এই শান্তি যেন তার চিরকালীন বাসাটি এখানেই বেঁধেছে। যাঁরা একা থাকতে ভালোবাসেন তাঁরা এই বিচে সময় কাটাতে পারেন। ওম বিচ থেকে সড়কপথে কিংবা জলপথে হাফ মুন বিচে যাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে গোকর্ণের আবহাওয়া দিনের বেলায় গরম থাকেও সন্ধ্যায় সৈকত হয়ে ওঠে মনোরম।

​কুড়লি বিচ

সমুদ্র মার্গের আরেকটি সৈকত হল কুড়লি বিচ। বিচের কাছেই পেয়ে যাবেন নানা বাজেটের হোটেল। সমুদ্র সৈকতরে ধারে পেয়ে যাবেন খাওয়া দাওয়া সহ অন্যান্য বিনোদনের উপায়। তবে সন্ধের দিকে বিচে যেতে বারণ করেন স্থানীয়রা। কারণ আর কিছুই নয়, সূর্যাস্তের পর এখানে যাতায়াতের জন্য গাড়ি পাওয়া একটু কঠিন হয়ে পড়ে। এই বিচে লোকজন একটু কমই যান। তাই নিরিবিলিতে সময় কাটাতে গেলে এখান থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো পর্যটনের মরশুমে এখানে জলাভাব দেখা যায়। হোটেল কিংবা গেস্ট হাউজগুলিতেও জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অফ সিজনে এখানে গেলে অবশ্য ভালোই লাগবে।

শুধু ধর্মক্ষেত্র বা মন্দির নগরী হিসেবেই নয় গোকর্ণের খ্যাতি বিনোদনের দিকেও মন্দ নয়। যাঁরা তীর্থ করতে চান তাঁরা তীর্থ করুন। বাকিরা বিচ ট্রেকিং, নৌকাবিহার করতে পারেন অনায়াসে। গোকর্ণে দারুণ সব ফুড স্টল আছে। পেটপুজো মন্দ হবে না। স্থানীয় হস্তশিল্পের জিনিস থেকে গয়না, পোশাক ইত্যাদি অনেককিছু কিনতে পারবেন এখানে। বিচ ক্যাম্পেইন, বিচ যোগাসনেরও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। চাইলে ট্রি হাউজে রাত কাটাতে পারেন। কিংবা গোটা ছুটিই গাছ বাড়িতে থাকুন। চেনা অচেনা বন্ধুদের সঙ্গে বিচ স্পোর্টস্-এ মেতে উঠুন। স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি কাটাতে গোকর্ণের ম্যাসাজের জুড়ি মেলা ভার। পুরুষ নারী নির্বিশেষে এখানে আয়ুর্বেদিক ম্যাসাজ থেরাপি সেন্টার রয়েছে। সেখানে শরীর মন আরাম পাবে।

লেখকের সম্পর্কে জানুন
Debnil Saha
Debnil Saha is working as a Consultant in Eisamay.com, Bengali News website of the Times Internet, a product of the Times of India Group.... আরও পড়ুন

পরের খবর