অ্যাপশহর

দেশের এই আজব গাঁয়ের বাসিন্দারা নাম ধরে নয়, একে অপরকে ডাকেন শিসের সুরে

মেঘালয়ের কংথং গ্রাম। বাইরের আর পাঁচজন একে এই নামেই চেনে। আবার এই গ্রামের সাবেকি নাম জিঙ্গরই লবেই। এর মানে সুরের গাঁ। এই আজব গাঁয়ের বাসিন্দারা নাম ধরে নয়, একে অপরকে ডাকেন শিসের সুরে।

Produced byDebnil Saha | Lipi 3 Aug 2022, 12:32 pm
“নামে কিবা এসে যায়? গোলাপকে যে নামেই ডাকো না কেন তাকে চেনা যাবে তার সুগন্ধে”, সেই কোন কালে একথা বলে গিয়েছেন শেক্সপিয়র সাহেব। সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের সাহেবের নামও হয়তো এই গ্রামের মানুষরা শোনেননি। তাতে কী। তার বলা কথাগুলি এই গ্রামের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে রয়েছে বংশ পরম্পরায়। গ্রামের বাসিন্দা কাউকে নাম ধরে ডাকেন না। ডাকেন সুরের ভাষায়, ছন্দের ভাষায়। বিশ্বের সেরা তিন গ্রামের তালিকাতেও স্থান পেয়েছে এই গ্রামটি।
EiSamay.Com kongthong meghalaya whistling village of india
দেশের এই আজব গাঁয়ের বাসিন্দারা নাম ধরে নয়, একে অপরকে ডাকেন শিসের সুরে


গ্রামের নামটি...
মেঘালয়ের কংথং গ্রাম। বাইরের আর পাঁচজন একে এই নামেই চেনে। আবার এই গ্রামের সাবেকি নাম জিঙ্গরই লবেই। এর মানে সুরের গাঁ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মেঘালয়ের এই অপূর্ব সুন্দর পাহাড়িয়া গ্রাম জিঙ্গরই লবেই-এর ঐতিহ্য অনুযায়ী সেখানে নবজাতকের জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে তার মা যে ঘুমপারানিয়া গান গেয়ে ওঠেন সেই অনুযায়ীই নবজাতকের নামকরণ হয়। শুধু তাই নয় প্রত্যেক মায়ের গলার সুর ভিন্ন ভিন্ন হয়। যাতে সেই সুর অনুযায়ী তাঁর সন্তানকে চিনতে কেউ ভুল না করে। এই সুরই সেই সন্তানের প্রকৃত পরিচয়।

​সুরের গ্রাম

মায়েরা ছাড়াও এই গ্রামজুড়ে রয়েছে নানা গানের সুর। সেই সুরগুলি একান্তই তাদের নিজস্ব এবং ভাষা স্থানীয়। প্রত্যেক গ্রামবাসীর দুটি নাম। একটি রোজকার নাম এবং অন্যটি তাঁর মায়ের দেওয়া সুরেলা নাম। গানের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী তাঁদের নাম হয়। যাঁর মা ছোটো করে সুর ধরেছিলেন তাঁর নাম হয় ছোট্টো, আর কারও মা যদি বড় করে সুর ধরেন সন্তানের নামও তেমন বড় হয়। এতে কেউ কিছু মনে করে না। এটাই সেই গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য। আসলে সুরেলা নামটি হল অনেকটা আমাদের ডাকনামের মতো। রোজকার জীবনে ছোটো নামটিতেই সকলে অভ্যস্ত থাকেন। আর বড় নামটি দেওয়া হয় অরণ্যে বসবাসকারী অপদেবতার হাত থেকে বাঁচতে।

(ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া / ইন্ডিয়া টাইমস)

আরও পড়ুন: বিদেশেই স্থায়ীভাবে থাকতে চান? তাহলে কানাডায় আবাসিক ভিসা নিয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন!

​বিশ্বের সেরা গ্রাম

কংথং গ্রামটি বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে জনপ্রিয় হুইসলিং ভিলেজ নামে। ২০১৯ সালে গ্রামটিকে দত্তক নিয়েছিলেন বিহারের রাজ্যসভার সাংসদ রাকেশ সিনহা। খাসি পাহাড়ের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এই গ্রাম রাজধানী শিলং থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। গ্রামে বাস করে মাত্র ৬৫০ জন বাসিন্দা। গত বছর ইউনাইটেড নেশনস্ ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন বা UNWTO-এর সেরা পর্যটন গ্রামের জন্য মনোনয়ন পেয়েছে কংথং। তালিকায় আছের দেশের আরও দুটি গ্রাম। মধ্যপ্রদেশের লাডপুরা খাস এবং তেলাঙ্গানার পোচমপল্লি।

(ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া / ইন্ডিয়া টাইমস)

আরও পড়ুন: হোটেলের বিছানায় সব সময় সাদা চাদর পাতা থাকে কেন, কখনও নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছেন কি?

​গ্রামের কথা

কংথং গ্রামের বাসিন্দারা সকলেই স্বনির্ভর। গ্রামবাসীরা মধু সংগ্রহ করে তা জৈব মধু রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় পারদর্শী। মধুই হয়ে ওঠে এই গ্রামের অত্যন্ত বিক্রয়যোগ্য পণ্য এবং রাজ্যের নিজস্ব পণ্যগুলির মধ্যে একটি, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে এই গ্রামকে। নিজেদের গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সম্পদকে রক্ষা করতে গ্রামবাসীরা সদা তৎপর। গ্রামে রয়েছে পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা। গ্রাম ঘোরার সেরা সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস। শিলং থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছোনো যায় এই কংথং গ্রামে।

(ছবি সৌজন্য: টাইমস অফ ইন্ডিয়া / ইন্ডিয়া টাইমস)

Read More: দেশের এই ৫টি জায়গা দেখতে বিদেশের মতো, লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ না করে একবার ঘুরে আসুন না!

লেখকের সম্পর্কে জানুন
Debnil Saha
Debnil Saha is working as a Consultant in Eisamay.com, Bengali News website of the Times Internet, a product of the Times of India Group.... আরও পড়ুন

পরের খবর