শক্তিপীঠের কিংবদন্তি
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, রাজা দক্ষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মহাদেবকে বিয়ে করেছিলেন তাঁর কন্যা সতী। মহাদেবের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দক্ষ রাজা বৃহস্পতি নামে এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। যজ্ঞে সতী কিংবা মহাদেব কাউকেই আমন্ত্রণ জানাননি দক্ষ। মহাদেবের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সতী বাবার আয়োজিত যজ্ঞানুষ্ঠানে যান। সেখানে দক্ষ মহাদেবকে অপমান করেন। স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করেন। শোকাহত মহাদেব দক্ষর যজ্ঞ ভণ্ডুল করেন এবং দেবী সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। তাঁর তাণ্ডব বন্ধ করতে অন্যান্য দেবতাদের অনুরোধে বিষ্ণুদেব তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর মৃতদেহ ছেদন করেন। এতে সতীর দেহের ৫১ খণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে এবং পবিত্র পীঠস্থান শক্তিপীঠ বা সতীপীঠ নামে পরিচিতি। কামাখ্যা সেই শক্তিপীঠের অন্যতম।
কামাখ্যা মন্দিরে কালো জাদু দূর করতে পুজো
কামাখ্যা মন্দিরে কালো জাদুর পুজো নিয়ে এক প্রাচীন বিশ্বাস রয়েছে। তবে না, এই মন্দিরে কালো জাদু করা হয় না বা বশীকরণের কোনও কৌশলও হয় না। কামাখ্যা মন্দিরে লোকে যান কালো জাদু এবং বশীকরণ থেকে মুক্তি পেতে। আশ্চর্যের বিষয় হল, আজকের একবিংশ শতাব্দীতেও নাকি মানুষ কালো জাদু এবং বশীকরণের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এবং সে সব নিরাময়ের জন্যই মানুষ সেখানে যান।
সাধু ও অঘোরীরা কালো জাদু দূর করে
কালো জাদু বা বশীকরণ দূর করার জন্য সাধু এবং অঘোরীরা পুজো ও যাগযজ্ঞ করে থাকেন। মন্দির প্রাঙ্গণে সাধু এবং অঘোরীরা সর্বদা উপস্থিত থাকেন। এই অঘোরীরা সকলেই দশ মহাবিদ্যায় পারদর্শী হন। তাঁদের পুজোর মধ্যে রয়েছে কালো জাদুর দূর করার সমাধান। মানে বিশ্বাসীদের মতে, এখানকার তন্ত্রমন্ত্র মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। এখানকার সাধুরা মানুষকে অশুভ আত্মা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করেন। মন্দিরের চারপাশে বসে থাকা সাধুরাও সিদ্ধিপ্রাপ্ত এবং ক্ষমতাধর।
আরও পড়ুন: তামিলনাড়ুর এই মন্দিরে ৮৩ বছর ধরে চলে আসছে অদ্ভুদ এক নিয়ম, এখানে অভিষেক করা হয় লঙ্কাবাটা দিয়ে
কামাখ্যা মন্দিরে কালো জাদু দূর করার আচার অনুষ্ঠান
পশু বলিদান কামাখ্যা দেবী মন্দিরে আচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কামাখ্যা দেবীকে খুশি করার জন্য প্রায়ই ছাগল এবং মহিষ বলি দেওয়া হয়। তবে এখানে কোনও স্ত্রী পশু বলি দেওয়া হয় না।
আরও পড়ুন: দেশের এই মন্দিরগুলিতে কেবলমাত্র অঘোরী সন্ন্যাসীরাই প্রবেশ করতে পারেন!
বশীকরণ পুজো
এখানে বশীকরণ পুজোও হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, বশীকরণ হল আকর্ষণের পুজো। মূলত পূজাটি ইতিবাচক ইচ্ছা সহকারে করারর নিয়ম। অতিতে বশীকরণ পুজোর উদ্দেশ্য ছিল স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক রক্ষা করা। কামাখ্যা মন্দিরেও বশীকরণ করা হয়। এখানে দুটি মানুষের চিন্তাভাবনাকে একরকম করে তোলা এবং তাঁদের মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যময় করার লক্ষ্যে বশীকরণ হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্কটিকে রক্ষা করা এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করা।
কালো জাদু দূর করার জন্য আচার রীতি
- প্রতিষ্ঠা: দেবী, গণেশ, নবগ্রহ কলশ, ব্রহ্মা
- স্বস্তি বচন
- গণেশ পূজা
- নবগ্রহ পূজা
- কামাখ্যা দেবীর পূজা
- মা কালীর দশটি রূপের পূজা
- ২১,০০০ মন্ত্র জপ
- আবশ্যক যাগযজ্ঞ
- আরতি এবং পুষ্পাঞ্জলি
এই পূজা ও যজ্ঞ সম্পন্ন করতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। কালো জাদু দূর করার পর, ভক্তরা কামিয়া সিঁদুর, প্রসাদ সহ পুজোর ঝুড়ি, অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করার জন্য একটি তাবিজ এবং পুজো সময় রাখা রুদ্রাক্ষ।
কামাখ্যা মন্দিরে কীভাবে পৌঁছাবেন
সড়কপথে: কামাখ্যা মন্দিরটি শহরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সঙ্গে সড়কপথে সংযুক্ত। গুয়াহাটি থেকে বিমান, সড়ক এবং রেলপথের মাধ্যমে কামাখ্যা পৌঁছোনো যায়।
রেলপথে: কামাখ্যা শহরের রেলওয়ের নাম কামাখ্যা মাতা (কামাখ্যা রেলওয়ে স্টেশন)। এখান থেকে সহজেই মন্দিরে পৌঁছানো যায়।
আকাশপথে: এই এলাকার নিকটতম বিমানবন্দর গোপীনাথ বরদোলোই বিমানবন্দর। শহরের কেন্দ্র থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। মন্দির যাওয়ার জন্য কলকাতা থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের এই ৫ হাজার বছরের প্রাচীন হিন্দু মন্দিরে সতীর স্মৃতিতে আজও কাঁদেন দেবাদিদেব