শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমান বন্দর থেকে দার্জিলিঙের দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। বাস, গাড়ি কিংবা জিপে চড়ে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই দার্জিলিং পৌঁছে যাওয়া যায়। দার্জিলিং-এ গিয়ে টাইগার হিল, কার্শিয়ং, কালিম্পং সবকিছু একবারের লং ট্যুরেই সেরে নেওয়া যায়।
চা বাগানে ঘোরাঘুরি, ম্যাল ভ্রমণ তো থাকবেই। ঘুরে দেখতে পারেন দার্জিলিঙের অচেনা গ্রামগুলি। খাঁটি নেপালি খাবার চেখে দেখতে পারেন এই সব গ্রামগুলিতে। গরমের ছুটিতে দার্জিলিং ঘুরতে গিয়ে ভাগ্যক্রমে যদি বৃষ্টির দেখা পান তাহলে তো সোনায় সোহাগা। গরম এবং বর্ষার মাঝে দার্জিলিং ঘুরতে গেলে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়। এই সময় তিস্তা নদীতে জল থাকে। আর জলে ভরা তিস্তা নদীর রূপ একবার নিজের চোখে না দেখলে জীবনটাই যে বৃথা। বৃষ্টিতে ধুয়ে পাহাড়-জঙ্গল একেবারে সাফ সুতরো। আর গরমে তো দার্জিলিঙের আরামদায়ক মতো জায়গা খুঁজেই পাবেন না। (All photo credit : unsplash.com)
বজ্রের দেশ
তিব্বতি শব্দ 'দোর্জি' এবং 'লিং'-- এই দুই শব্দ যুক্ত হয়ে হিমালয়ের ছোট্টো শহরটির নাম হয়েছে দার্জিলিং। তিব্বতি 'দোর্জি' শব্দের অর্থ বজ্র। দেবাদিদেব ইন্দ্রের অস্ত্র এই বজ্র। আর তিব্বতি ভাষায় 'লিং' শব্দের অর্থ এলাকা বা স্থান। তাহলে দার্জিলিঙের অর্থ বর্জের দেশ। আসলে পাহাড়ি শহর বলে এখানে বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: হাজার দুয়েক টাকার মধ্যেই হয়ে যেতে পারে দিঘা ভ্রমণ
এশিয়ার দীর্ঘতম রোপওয়ে
দার্জিলিঙের রঙ্গিত ভ্যালি রোপওয়ে এশিয়ার দীর্ঘতম রোপওয়ে। এই রোপওয়ে চড়ে এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যেতে গেলে মেঘের চাদর ভেদ করে যেতে হয়। রোপওয়ে চড়ার সময় হিমালয়ের যে অপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়বে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। নীচের চা বাগানগুলি দেখে মনে হবে যেন সবুজ চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নাট-বোল্ট ছাড়াই ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সেতু আজও কলকাতার গর্ব
টয় ট্রেন রাইড
টয় ট্রেন হয়তো অনেক স্থানেই আছে। কিন্তু দার্জিলিঙের টয় ট্রেনের কোনও তুলনাই হয় না। আসলে দার্জিলিঙের ট্রেনকেই বলা হয় টয়ট্রেন। দুই ফিট চওড়া গজ লাইনের উপর দিয়ে একেবারে খেলনার গাড়ির মতো দেখতে ট্রেন চলে। ট্রেনের গতি খুব কম। ট্রেনের চেহারাটিও অপূর্ব সুন্দর। বাঁশি বাজিয়ে যখন টয় ট্রেন এগিয়ে চলে তখন মনে হয় যেন বিদেশি রূপকথার দেশে আপনি চলে গেছেন। এই ট্রেনযাত্রাকে বিশ্বের পাহাড়ি রেলপথের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলে বিবেচনা করেছে ইউনেস্কো (UNESCO)।
কাঞ্চনজঙ্ঘার সেরা দৃশ্য
কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গের সৌন্দর্য্যের এমনিতেই কোনও তুলনা হয় না। তবে দার্জিলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার যে দৃশ্য দেখা যায় সেটি সেরা। দার্জিলিঙের টাইগারহিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছন থেকে সূর্যোদয় হয়তো বিশ্বের সেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য। অন্ধকার থাকতে ঘুম থেকে উঠে ফ্লাস্কে চা এবং হটকেসে গরম খাবার ভরে টাইগির হিলে গিয়ে কিছুটা সময় কাটালে স্বর্গসুখ উপলব্ধি করতে পারেন।
আরও পড়ুন: ৬০০০ টাকার মধ্যেই হানিমুন সারা যায়, তাই দেশের এই ৫ স্থান নবদম্পতিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়
ব্রিটিশ উপনিবেশের স্মৃতি
ব্রিটিশ আমলের কিছুটা আস্বাদ পেতে চাইলে উঠতে পারেন দার্জিলিঙের বিখ্যাত উইন্ডামেরে হোটেলে। হোটেলের ভিতর গেলে মনে হবে যেন ব্রিটিশ যুগে পৌঁছে গেছেন। হোটেলের ফায়ার প্লেসে আজও কাঠ কয়লার আগুন জ্বলে। বিগত ভিক্টোরিয়ান যুগের বায়ুমণ্ডল আপনাকে সময়মতো ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এই উইন্ডামেরে ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল মূলত অবিবাহিত ইংরেজদের একটি বোর্ডিং হাউজ। পরে এটি হোটেলে পরিণত হয়।
পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটি থেকে নেপাল, ভুটান, তিব্বত এবং সিকিমের ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। ঔপনিবেশিক শাসনের আরও নিখুঁত অনুভূতি পেতে চাইলে, ব্রিটিশদের তৈরি গির্জা এবং পুরনো বাংলোগুলি ঘুরে নিতে পারেন। কালিম্পংয়ের কাছে ঔপনিবেশিক যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি বাংলো হল মরগান হাউজ এবং ক্রিকেটি।
শার্লক হোমস্ দার্জিলিঙে ইংলিশ শেখাতেন !
দার্জিলিঙে ইংলিশের শিক্ষক ছিলেন শার্লক হোমস্। না না, আর্থার কোনাল ডয়েলের গোয়েন্দা শার্লক নন, কথা হচ্ছে রুপোলি পর্দার শার্লক অভিনেতা বেনেডিক্ট কুম্বারব্যাচের। একটা সময় তিনি দার্জিলিঙের তিব্বতি মঠে ইংরেজি শেখাতেন তিনি। তখনও অবশ্য তিনি শার্লকের চরিত্রে অভিনয় করেননি।