অ্যাপশহর

'মুড়িমুড়কির মতো টাকা খরচ করে, আমি স্ত্রীকে ঘেন্না করি!'

সংসার-খরচের হিসেব কষতে বসে অহরহ শুরু হয় অশান্তি। সাংসারিক অশান্তিতে জেরবার হয়ে মনোবিদের দ্বারস্থ হলেন এক যুবক।

EiSamay.Com 31 May 2017, 11:51 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় বলে, 'অর্থই অনর্থের মূল।' কথাটা যে মিথ্যে নয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় দাম্পত্য জীবনে। সংসার-খরচের হিসেব কষতে বসে অহরহ শুরু হয় অশান্তি। সাংসারিক অশান্তিতে জেরবার হয়ে মনোবিদের দ্বারস্থ হলেন এক যুবক। ওঁর অভিযোগ, খরচে লাগাম টানতে নারাজ স্ত্রী। সে কথা তুললেই শুরু হয় তীব্র অসন্তোষ, যা কালক্রমে ঝগড়ায় রূপান্তরিত হয়। শুধু তাই নয়, ইদানীং স্ত্রী-র বিবিধ আচরণও তাঁকে হতাশ করেছে।
EiSamay.Com my wife wastes a lot of money and ive started hating her now
'মুড়িমুড়কির মতো টাকা খরচ করে, আমি স্ত্রীকে ঘেন্না করি!'


প্রশ্ন: ১৩ বছর হল বিবাহিত জীবন যাপন করছি। স্ত্রীর বেহিসেবি খরচ সামলাতে দিশেহারা হয়ে পড়ছি। নিজে উচ্চ শিক্ষিত, অথচ কোনও জিনিসের প্রতিই তাঁর যত্ন নেই। ফলে সংসারে অপচয়ের বন্যা বইছে। মনে হয়, ছোট থেকে এভাবেই উনি মানুষ হয়েছেন। এ ছাড়া, আমার মায়ের প্রতিও তাঁর বিরূপ মনোভাব, যদিও তিনি আমাদের সহ্গে থাকেন না। স্ত্রী আমার মা'কে দেখতে যেতে চান না। যদি বাধ্য হয়ে যেতে হয়, তাহলে কোনও ছুতোনাতায় তাঁর সহ্গে ঝগড়া শুরু করেন।

অন্য দিকে, শৈশবে শিক্ষা পেয়েছি অপচয় রোধ করার। জল, বিদ্যুত্‍ থেকে শুরু করে খাদ্যবস্তু-- সঞ্চয় করতে ছোট থেকে তালিম পেয়েছি। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর আচরণে বিরক্ত হলেও অশান্তির ভয়ে প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু এক বছর হল মেয়ে জন্মানোর পরে উদ্বিগ্ন বোধ করছি। আশঙ্কা হচ্ছে, বড় হয়ে সন্তানের মধ্যেও না মায়ের এই প্রভাব বিস্তার করে। অথচ মেয়ের কথা ভেবেই স্ত্রীর সঙ্গে কাজিয়ায় জড়িয়ে পড়তে চাই না। কী করব, দয়া করে পরামর্শ দিন।

(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবক)

উত্তর: প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই যে, শিশুসন্তানের কথা ভেবে সাংসারিক অশান্তি থেকে দূরে থাকার কথা ভেবেছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনার অভাব পরস্পরের মানসিক স্বাস্থ্য হানি করে, এ কথা সত্যি।

একে অন্যের মতবাদ, বিশ্বাস ও মূল্যায়ন অস্বীকার করার কারণেই দাম্পত্য অসুখ তৈরি হয়। নিজেদের এই সমস্ত বৈশিষ্ট আঁকড়ে থাকা এবং অন্যের চারিত্রিক দোষ-গুণকে মানিয়ে না-নেওয়ার জেরে মনমালিন্য ক্রমে বাড়তে থাকে। সমস্যার সমাধান হিসেবে আপনারা দু'জনেই বেছে নিয়েছেন পরস্পরকে দোষারোপ, আত্মরক্ষা, এড়িয়ে চলা এবং মূল বিষয় থেকে সরে এসে ভিন্ন অভিযোগে নিজেদের বিঁধিয়ে তোলার মতো রাস্তা। এর ফলে আপনারা পরস্পরকে শুধু রক্তাক্ত ও হতাশই করে চলেছেন।

মনে রাখবেন, আপনারা দু'জনেই ভিন্ন পারিপার্শ্বিকে, ভিন্ন মতাদর্শে মানুষ হয়েছেন। বিবাহিত সম্পর্কে প্রয়োজন ধৈর্য, পরস্পরের খামতি বুঝে মানিয়ে চলা এবং সব রকম পরিস্থিতিতে পরস্পরের সহযোগিতা করা। বিয়ের পরে কেউ কাউকে কখনও আমূল বদলে ফেলতে পারেন না, সম্ভবও নয়। সেই চেষ্টা করলে বরং ফল উল্টোই হয়, অশান্তি সৃষ্টি হয়। স্ত্রীর আচরণে হতাশ না হয়ে ওঁর সঙ্গে খোলাখুলি অন্তরঙ্গ আলোচনায় বসুন। নিজের ত্রুটিগুলিও তাঁর সামনে স্বীকার করুন। নিজেদের মধ্যে তৈরি হওয়া বৈপরীত্য কাটাছেঁড়া করে সমস্যার পথে এগোবার চেষ্টা করুন। দাম্পত্য শান্তি আনে ধৈর্য্য এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া, যা আমরা প্রায়শই এড়িয়ে চলি। তর্কে কোনও সমস্যার মীমাংসা খুঁজতে যাওয়া মূর্খামি। তার চেয়ে পরস্পরকে আর একটু সময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। ভালো থাকুন।

(উত্তর দিয়েছেন মুম্বইয়ের বিশিষ্ট মনোবিদ তথা কাউন্সেলর জাঙ্খানা জোশি)

পরের খবর

Lifestyleসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল